Thursday, October 29, 2015

Dr. Strangelove or: How I Learned to Stop Worrying and Love the Bomb

In light of the recent discussions in one of my post in FB, I shared the following with the people engaged in the discourse. Sharing it here once again. The context is about friendship between a Non-Marxist and Marxist in Kolkata, West Bengal.

It is not that I have never found an association in Kolkata which agrees that era of communism is over. But ultimately I have found that the problem lies even deeper - it is the thought process, the so-called universally accepted and unquestionable supremacy of rational thinking. That way, even negating communism as a socio-political theory, you still fall under the same bracket of communism.
Every human being is on his/her own journey of life. It is the journey, the life that gives birth of a realization. A realization may be that Communism is a failure. Another realization may be that it is the Communism which holds the answer of inequalities prevailed in human society. But in society, the weightage of all the realizations are not equal. If you support/condemn Communism or anything for that matter by quoting and arguing the so-called rational references, most of which are very technical and domain centric, you get a higher weightage. Your voice is heard and your realization is recognized. But if I get into the same conclusion by another lets say irrational way, it is ignored. It matters whether you quote European aka so called 'civilized' references. It matters whether you are expressing the same in a powerful English with enough jargon added to it.
The irrational realization is nullified and so is that person, the human being and his or her journey of life.
If I say I nullify Communism being a rational being, I will still get friends, may be fewer in numbers but if I say I nullify Communism by quoting references let's say Ramakrishna or Bamakhyapa or astrology or a poem or a reference of Islam, I will be isolated again.
I don't fear isolation any more. I started this thread as an expression of feeling not rational. I don't know what is right or wrong neither I am capable and most importantly interested in prescribing or vouching any ism aka grand design solution for the society. All I can and will do is to respect the journey and realization of every individual on earth. Different views enrich me because I can not live multiple lives I will always miss so much of colors, realizations and feelings on earth.
My objective of getting engaged in a discourse is to taste life from multiple views. When Bhaskarda or others share thier experiences, their realizations, I taste those lives a little bit. That way speaking, I envy the guy waiting to be executed tomorrow morning because that is something, some feeling I have not tasted or dare not to test!
Who am I to nullify the journey and realization of Ananta Acharya / Sushanta Kumar or Arindam Biswas? I don't believe anything as a lie, a false. Every thought, every expression expressed through words are constructs and hence they all are true! Do I know for sure that I am not dreaming all these? May be it is a construct of my mind only!
My definition of democracy is to practice this realization and move on in a collective journey. A collection the construct of which might seem rational outwardly as they agree in a lot of basic things but it is a irrational, emotional construct at the end of the day as it appears to me.
Feelings, my friends, feelings. Feelings deserve some place somewhere in a democratic construct.
Btw, to me the word 'rational' itself is a oxymoron as it has the element of nullifying itself in its very definition.

Monday, October 19, 2015

দেশপ্রিয় পার্কের পূজা এবং একটি গরু রচনা

বাজার গরম দুটো ইস্যু - 'প্রগতিশীল' বাঙালীর কাছে গরু আর বাকিদের বিশেষত কলকাতার বাঙালীদের কাছে দেশপ্রিয় পার্ক। তা এনিয়ে চর্চ্চা চলছে চলবে। এই হুজুগে আমিও একটা লেখা লিখে ফেললাম লাল খট্টরের বদমাইশি নিয়ে। এরই মধ্যে দেশপ্রিয় পার্ক বন্ধ। ফেবুতে দু-একটা পোস্ট চোখে পড়ল হিন্দুত্ব আক্রান্ত এই টাইপের। কিন্তু সেগুলো মোটেই হালে পানি পেল না। 'প্রগতিশীল' কমরেডরা কি বলবেন? বলবেন "দেখো হিন্দুত্বের বিপদ - হিন্দু ফ্যাসিজম যে দোরগোড়া্য় কড়া নাড়ছে এতো তারই লক্ষণ"। এক মিনিট, বেল বাজলো - কে এলো? ফ্যাসিজম নাতো? ওনা এতো কাজের মাসি। যাই হোক যে কথা বলছিলাম। তা এই 'হিন্দুত্ব আক্রান্ত' টা হালে পানি পেলো না কেন? কৃতিত্বটা কার? কার আবার অবশ্যই 'সচেতন' জনগণের! অর্থাৎ, ক্ষীরটা খাবার বেলা কিন্তু আমি হাজির ওটা হিন্দু ধর্ম বা হিন্দু জনগণকে দেওয়া যাবেনা।
ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছি উৎস মানুষ এবং ঐ টাইপের আরো বেশ কিছু পত্রিকা রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে নিয়ে যাতা লিখে আসছে। এমনকি এখনো এই মূহুর্তে আমার হাতে একটি পত্রিকা আছে যাতে গীতা নিয়ে যাতা লেখা হয়েছে এবং শ্রীকৃষ্ণকে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ইত্যাদি বানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কেউ কোনোরকম রিঅ্যাক্ট করেনা আবার নাস্তিক বা কম্যুনিস্টও হয়ে যায়না। গোটা ৫০ (এখন বোধহয় আরো কম) লোক এইসব ভাট বকে আর কলেজ স্ট্রীট গরম করে।
এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি। এটাকে হিন্দু বললে বলা যায় আপত্তি থাকলে নাও বলা যায়। এই উদারতা, বহুত্বের এই সহাবস্থান কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারেনি। না মোল্লারা না পুরুতরা। যে যতই চেষ্টা করুক এই সংস্কৃতিকে মোল্লাতন্ত্র বা পুরোহিতন্ত্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারবে না।
এবার পূজোয় অসুর বন্দনা দেখেছি। এমনকি দেবী দূর্গাকে সেক্স আইকন হিসাবে প্রজেক্ট করাও দেখেছি। সবই আছে মিলেমিশে। এই সহনশীলতা, বহুত্বের এই সহাবস্থান - এক অর্থে এতো হিন্দুত্বের শিক্ষা। এদেশের ইসলাম মরুভূমির ইসলাম নয়। এদেশের ইসলাম প্রেমের জোয়ার। মোল্লারা কোনোদিন সেটা ভালোভাবে নেয়নি। প্রানপনে চেয়েছে ইসলামকে শস্য শ্যামলা সবুজ বাংলা থেকে নিয়ে গিয়ে মরুভূমির গর্তে নিয়ে গিয়ে ফেলতে।
'প্রগতিশীল' বন্ধুরা কি মোল্লাতন্ত্রকে আত্মসমালোচনা করতে বলবেন না? বলবেন না "এই উদারতা আমাদের হিন্দুত্বের কাছ থেকে শিখতে হবে"। না বলবেন না। বলবেন না কেননা এরা আসলে কোনো জার্নির মধ্যে নেই। এরা মুসলমান জনগণকে একটা একজোট হওয়া ভোটব্যাঙ্ক মনে করেন তার বেশি কিছু না।
আল্লা এত বড় এত ব্যাপ্ত যে তাঁকে গালি দিলে তাঁর কোনো কিছু যায় আসেনা। এক অর্থে সেও আল্লারই বন্দনা মাত্র। যায় আসে মোল্লাতন্ত্রের। তাই তারা লোক খ্যাপায়, দাঙ্গা করে নাস্তিক নিধন অভিযানে নামে। আর প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয় ব্রাম্ভণ্যবাদ বা উল্টোটা। আল্লা ভাবে আমি ব্যাপ্ত, ঈশ্বর ভাবে আমি আর অন্তরালে বসে হাসে 'প্রগতিশীল'।

Sunday, October 18, 2015

লাল খট্টরের ভারতীয়ত্বের সংজ্ঞা এবং তার প্রতিবাদ ইত্যাদি

ফেসবুকের একটি বিশিষ্ট মুসলিম বুদ্ধিজীবী পেজের জন্য এই লেখাটা লিখেছিলাম। সম্পাদকমন্ডলী পড়ে বাহবা দিলেন পিঠ চাপড়ালেন কিন্তু পেজে ছাপলেন না। তাই দেরিতে হলেও পড়ে থাকার চেয়ে এটা এখানেই থাকুক এই ভেবে এখানে দিয়ে দিলাম।  আর শেষ কথা, মাঝে মাঝে বড় হতাশ লাগে। পশ্চিমবঙ্গে নামে মুসলমান হলেও একটাও সঠিক ইসলামী ভাবনায় আদর্শে উদ্বুদ্ধ সংগঠন নেই। সব শালা মুসলিমদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসাবে দেখে। হয় কম্যুনিস্ট মানে সিপিএম নয়তো টিএমসি আর নয়তো এই এদের মতো নতুন হতে পারে মুকুল রায়ের গোষ্ঠী।

লাল খট্টরের ভারতবর্ষ
===============
সম্প্রতি নাসিরুদ্দিন শাহ বলেছেন বা বলা ভালো আর্তনাদ করেছেন - "এই প্রথম আমাকে মনে করিয়ে দেওয়া হলো আমি মুসলমান" । আর হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী সারা ভারতের মুসলিমদের মনে করিয়ে দিলেন তারা মুসলমান। উনি বলেছেন "মুসলমানদের এদেশে থাকতে দেওয়া হবে, যদি তারা গরুর গোস্ত খাওয়া ছেড়ে দেয়"। উনি জানেন কিনা জানা নেই তবে গোস্ত খাওয়ার সাথে ইসলামের কোনো প্রত্যক্ষ্য যোগাযোগ নেই। লালনের অনুরাগী এবং ধর্মপ্রান বহু মুসলিম আছেন যারা কোনোদিন গোস্ত খাননি। অনেক বয়স্ক মুসলিম আছেন যারা শারীরীক কারনেও গো্স্ত খাননা তাতে তাঁদের ধর্মাচরনে এবং ভারতবাসী হতে কোনোদিন কোনো অসুবিধা হয়নি। কিন্তু একটি দায়িত্বশীল সাংবিধানিক পদে থেকে যখন লাল খট্টর এই ধরনের মন্তব্য করেন তখন তাকে সরাসরি প্ররোচনা বললে কি অন্যায় হবে? প্ররোচনা দু তরফেই। কৈশোর এবং যৌবনের ধর্ম বিদ্রোহ। তাই যখন ঘরের লোক বলে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরবি তখন ছেলেমেয়েরা দরকার না থাকলেও দেরী করে ফেরে। সেই গরম রক্তকেই প্ররোচনা মুসলিম ছাত্র-যুব-কিশোর বাহিনীকে যাতে তারা বিদ্রোহ করে আর ছেলেমানুষী বিদ্রোহকে আর একটা সাজানো মুসলিম সন্ত্রাস বলে চালাতে সুবিধা হয়। আর প্ররোচনা হিন্দু ভাইদের। দেশটাতো তোমাদের - হিন্দু্স্থান এখানে মুসলিমরা কেন থাকবে? আর থাকলেও থাকবে দ্বীতিয় শ্রেনীর নাগরিক হিসাবে তোমাদের তলায়। আসলে ধামাচাপা দেওয়া গেল হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষে সেই সমস্ত মানুষগুলির দুঃখকে যেখানে ঈদ বা দূর্গাপূজার আনন্দ চাপা পড়ে যায় ভর্তুকিহীন গ্যাসের দাম মেটাতে। চাপা পড়ে যায় বেড়ে চলা বেকারত্ব, মূল্যবৃদ্ধি আর একের পর এক হিংসার কথা যার প্রতিবাদে আজ লেখকরা পথে নামছেন আবার পথে নামতে গিয়ে প্রানও হারাচ্ছেন শহীদ হচ্ছেন। সম্প্রীতি ও সহমর্মিতার এক মূর্ত প্রতীক হিসাবে যে ভারতবর্ষ সারা পৃথিবীর বুকে এক অসামান্য উদাহরন তাঁর মাথা হেঁট হয়ে যাচ্ছে একের পর এক এইরকম কথাবার্তায়।
ভারতবাসী কে? ভারতে বাস করে এদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত ঝরিয়ে, এদেশের গান, ইতিহাস কবিতাকে সমৃদ্ধ করেও যদি আজ গরু না খাওয়ার শর্ত মেনে এদেশে মুসলমানদের বাস করতে হয়, যদি তাজমহলকে, কুতুব মিনারকে, গ্র্যান্ড ট্র্যাঙ্ক রোডের রচয়িতাদের উত্তরসূরীদের তাদের ভারতীয়ত্ব প্রমান করতে হয় লাল খট্টরের শর্তে তবে বিপদটাকি শুধু মুসলমানদের না ভারতবর্ষের? ভেবে দেখবার সময় এসেছে আর বলবো না বরং এবার পথে নামতে হবে। পথে নামতে হবে মুসলমানদের নয় ভারতকে বাঁচাতে লাল খট্টরদের হাত থেকে।

Wednesday, October 7, 2015

পশ্চিমবঙ্গে বসে, কেন আমি শাহবাগি

অনেক পুরোনো লেখা...


শাহবাগ নিয়ে দুচার দিন কলেজ স্ট্রীট বিপ্লব করে বেশ একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলছি। আরাম করে পায়ের উপর পা দিয়ে বসে একটা সিগারেট ধরিয়েছি। সাগর এল। "পঞ্চায়েত দেখেছিস? কি হল বলতো কেসটা?" ঢোক গিলতে হল। বললাম "আমি ঠিক জানিনা রে ফলো করছিনা অতটা ডিটেলে"। সাগর:"অঃ, তুই তো সেই শাহবাগ নিয়ে পড়ে আছিস। নিজের দেশে কি হচ্ছে খবর নেই কিন্তু শাহবাগ নিয়ে মরাকান্না, এই তোদের সমস্যা - তোরা শালা একদম বিচ্ছিন্ন, মানুষের কাছে যেটা ইস্যু সেটা বাদ দিয়ে আর বাকি সব কিছুতে তোদের আগ্রহ। পশ্চিমবঙ্গে বসে, কেন তুই শাহবাগি?" ইতিমধ্যে সৌম্য, পিন্টু চলে এসেছে। গরমাগরম কোর্ট, পঞ্চায়েতের হট্টগোল - আসর জমজমাট। আমার আর বলা হল না কেন আমি আমি শাহবাগি - সেটাই চিৎকার করে বলতে গিয়ে এই সুতো।

বাংলাদেশটা তালিবানিদের (তালিবানি শব্দটা প্রচলিত অর্থে - এর আসল মানে শিক্ষার্থী সেটা মনে আছে) হাতে চলে গেলে কি হতে পারে তার একটা ধারনা পাওয়া যেতে পারে পাকিস্তানকে দেখে। স্বাভাবিকভাবেই, এপার বাংলায় যে শান্তির কলকাতা, মেট্রো রেলের গেটে ভুঁড়িয়ালা পুলিশ আর হাই তুলবে না - ওদের কাজ অনেক বেড়ে যাবে। আর পাঁচ বছর পর, লোকে ভুলে যাবে শাহবাগ - ভুলে যাবে একটা গোটা দেশ, জাতি চেয়েছিল অন্যকিছু। মনে থাকবে বাংলাদেশ মানেই আতঙ্ক আর সন্ত্রাসবাদ। লোকে বলবে ইন্ডিয়ার উচিৎ দুটো আ্যটোম বোম দুদিকে ফেলে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানকে উড়িয়ে দেওয়া।

আমি কিছুই করতে পারিনা, কিন্তু আমার মনে পড়ে "কেন চেয়ে আছো গো মা" - আমিতো আর ঋত্বিক ঘটক নই, আমি একেবারে ছাট মাল - কিছুই করতে পারিনা তাই এপারে বসেশুধু বলতেই পারি - পশ্চিমবঙ্গে থেকেও, আমি শাহবাগি।

দুটো বাজে গল্প - আড্ডা থেকে কুড়িয়ে পাওয়া - অসীমদার (DAFODWAM) জবানিতে ...

গল্প - ১
====
দক্ষিন ২৪ পরগনার এক প্রত্যন্ত গ্রামে থাকে আমিনুল হাসান। পেট চলেনা অতএব কলকাতা। কাজ জুটল মৌলালিতে এক ইলেকট্রিক মিস্তিরির টেনিয়া মানে সাগরেদ হিসাবে।
১ বছর পর আমিনুল অসুস্থ খবর পেয়ে ফোন করছি। ফোন ধরল আমিনুলের মেয়ে। বললাম "আমিনুল কোথায়? ফোন দে ওকে" ৭ বছরের মেয়ে জবাব দিল "বাবা? বাবা তো কলকাতায় অমর, দেশে আমিনুল"। আ আামিনুল পরে আমিনুল বলেছিল "কাজের জন্য কোথায় কোথায় যেতে হয়, হয়তো ঠাকুরঘরের মধ্যেও ঢুকতে হয়। পেটের দায় দাদা, আর তাছাড়া সত্যিই তো একটা মোছলমানকে বাড়ি ঢুকতে দিতে তো অসুবিধা হতেই পারে"। ামিনুল অমিনুলের কাছে কিন্তু এটা কোনো অস্বাভাবিক ঘটনা না। আমাকেও ও হিন্দুই মনে করে আর আমার জন্য ও জান না হলেও অনেক কিছু দিতে পারে যেমন ১০ টাকা চাঁদা।
গল্প - ২
====
মাদ্রাজ মেলে আসছি। কামরাতে যথারিতী ভিড়। চেকার উঠলেন। বিশাল একটা ব্যাগ নিয়ে নাকাল এক মক্কেলকে পাকড়াও করলেন - "টিকিট"? লোকটি টিকিট বের করে দিল। চেকার জিঞ্জাসা করলেন "নাম কি"। উত্তর এল উত্তর এল "RAC 17"। আরে নাম কি? আবার উত্তর এল "RAC 17"। আচ্ছা মুশকিল তো। চেকার বললেন। আমি একটু উদ্যোগী হয়ে হিন্দিতে জিঞ্জাসা করলাম "কাঁহা জানা হ্যায়? নাম কেয়া হ্যায়?" উত্তর এল "কলকাতা যাব বাবু আর ..." আর কি? ধমক লাগালাম আমি, "নাম কি তোমার"?
ঘাড় চুলকে মাথা নিচু করে কোনোরকমে সে বললো "না মানে আমার নামতো আনোয়ার ... "

Tuesday, October 6, 2015

যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল

শ্রীদ্বৈপায়ন সেনের গবেষণাপত্রের আধারে লিখিত
===============================

২৯শে জানুয়ারী, ১৯০৪। বরিশালের মইস্তারকান্ডি গ্রামে অচ্ছুৎ চন্ডাল নমশূদ্রের ঘরে জন্ম হয় যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলের। বাবা রামদয়াল আর মা সন্ধ্যাদেবীর আদরের ছোটো ছেলে ষষ্ঠ সন্তান হিসাবে। আদরের ছেলে, বুদ্ধিমান বংশের মুখ উজ্বল করতে পারে কিন্তু পেটই চলেনা তার আবার পড়াশোনা। গ্রামের ইস্কুলেও ঠিকমত পড়াশোনা চালাবার খরচ যুগিয়ে উঠতে পারতেন না। পরবর্তীকালে এই ছেলেই হয় ইংরেজ আমলের বাংলার ছোটোলেকের সবচেয়ে বড় গর্ব তার বাগ্মীতার এবং স্পষ্টবাদিতার জন্য।
বাংলার ইতিহাসে জাতপাতের সমস্যা নিয়ে কোনোদিনই সেরকম আলোচনা হয়নি। বাংলার নবীরা সেই কবে থেকে গর্ব করে আসছে এখানে আমরা সব সেকুলার, কমিউনিস্ট ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই জন্যই বোধহয় যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে স্মরন করা সবার পক্ষেই একটু চাপের ব্যাপার হয়ে যায় তার থেকে যোগেন মন্ডলকে চেপে যাওয়া অনেক সহজ এবং বুদ্ধিমানের কাজ।
যোগেন মন্ডলের ছেলেবেলা স্বদেশী আন্দোলনের যুগ। ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গের বিরুদ্ধে স্বদেশী আন্দোলন, যার নেতৃত্বে ছিল উচু জাতের বর্ণহিন্দুরা। তারা চাইছিল মুসলিম আর ছোটোলোক নীচু জাতের কৃষিজীবী মানুষগুলোকে ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে খেপিয়ে দিতে। কিন্তু তা হলনা। ছোটোলোকরা ভদ্দরলোক বাবুদের কথায় নাচল না। এই সময় বেড়ে উঠছিলেন যোগেন মন্ডল। আত্মীয়স্বজনদের সাথে প্রতিদিনের কথাবার্তা আর নিজের জাতকে প্রতি পদে পদে অনুভব করে। জলে আধডোবা বরিশালের গ্রামে গ্রামে নৌকা করে স্কুলে পড়তে যাওয়া, ফিরে এসে ক্ষেতের কাজ আর রাতে লন্ঠনের আলোতে পড়াশোনা করা এই ছিল তার জীবন। এভাবেই যোগেন মন্ডলের ম্যাট্রিক পর্যন্ত শিক্ষা।
অবশেষে ১৯২৪ সালে আত্মী্যদের আর্থিক সহায়তায় নির্ভর করে তিনি ভর্তি হলেন বরিশালের ব্রজমোহন কলেজে। বিষয় ভারতীয় প্রশাসন। কলেজে তিনি অশ্বিনি কুমার দত্তের সামাজিক সংগঠনের সাথে যুক্ত হন। এই সংগঠনের কাজ ছিল কৃষকদের দারিদ্র এবং সাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয়ে। এই সময়েই, ১৯২৬ সালে যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল তার নমশূদ্র ছাত্রের প্রতি আর একজন বর্ণহিন্দু ছাত্রের ব্যবহারের প্রতিবাদে গড়ে তোলেন এক প্রচার আন্দোলন। নমশূদ্র ছাত্রের আপরাধ মন্দিরে প্রবেশ। ঐ বছরই আগাইলঝড়া গ্রামে যোগেন মন্ডলের বক্তা হিসাবে প্রকৃত আত্মপ্রকাশ। বক্তব্যের বিষয় ছোটোলেকের এক হওয়ার প্রয়োজন। বিশের কোঠায় পা দেওয়ার সময় থেকেই যোগেন মন্ডল ছোটোলোকদের অবস্থা নিয়ে কথা বলা শুরু করেন। ঐ বছরই অর্থাৎ ১৯২৬ সালেই তিনি কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হন। এর বেশ কিছু পরে, ১৯২৯ সালে তিনি ভর্তি হয়েছিলেন ক্যালকাটা ল কলেজে।
ল কলেজে পড়ার দিনগুলিতে উনি থাকতেন প্যারীমোহন দাশের বাড়িতে। খরচা চলত প্যারীমোহন দাশের ছেলেমেয়েদের পড়িয়ে আর প্রুফ রিডিং করে। ল কলেজের দিনগুলিতে তারতবর্ষ ছিল উত্তাল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময়। সে সময় ইংরেজ প্রধানমন্ত্রী রামসে ম্যাকডোনাল্ড ঘোষনা করেছেন কমিউনাল অ্যাওয়ার্ড। কমিউনাল অ্যাওয়ার্ডের উদ্দেশ্য ছিল জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের সময় উঠে আসা জাতপাত এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বের প্রশ্নের সমাধান, যা সেই সময়কার জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের নেতৃত্ব করতে ব্যার্থ হয়েছিলেনযোগেন মন্ডল দেখছিলেন গোলটেবিল বৈঠকের ব্যার্থতা আর তার পরে পুনা চুক্তি আম্বেদকর আর গান্ধীর মধ্যে। পুনা চুক্তির মাধ্যমে গান্ধী একরকম বলা যায় নিগৃহীত করছিলেন আম্বেদকারকে তার জয়েন্ট ইলেকটোরেট আর তার মধ্যে সংখ্যালঘুদের জন্য আসন সংরক্ষন ফর্মুলা মানার জন্য। যোগেন মন্ডল এই সব দেখছিলেন। ল কলেজের দিনগুলিতে এবং তার পরের সময়ে তিনি ভাবছিলেন কি করা যায়। ১৯৩৪ সালে ল পাশ করার পর তিনি অ্যাপ্রেন্টিস হিসাবে কাজ শুরু করেন বিশিষ্ট আইনজীবি চন্দ্রমোহন চক্রবর্ত্তীর কাছে ক্যালকাটা স্মল কসেস কোর্টে। ১৯৩৬ সালে তিনি স্বাধীনভাবে ওকালতির প্র্যাকটিস শুরু করেন ঐ একই কোর্টে। অবশ্য এর আগেই যোগেন মন্ডল বরিশালে ফিরে এসেছেন এবং জেলা কোর্টে যোগদান করেছেন।
বরিশালের মফস্বলের ফেরার পিছনে কাজ করছিল গরীব অচ্ছুৎ কৃষিজীবিদের সাথে আরো কাছাকাছি থাকা, তাদের নিয়ে কাজ করার ভাবনা। তার সমসাময়িক উকিল বন্ধুদের মধ্যে তার ব্যাতিক্রমী প্রয়াস গরীব কৃষিজীবিদের কেস লড়া (প্রায় বিনে পয়সায়) সবার চোখ টানল। বরিশালের চাষাভূষার মধ্যে যোগেন মন্ডলের নাম ছড়িয়ে গেল যার ফলশ্রুতি প্রথমে বরিশাল সদর বোর্ডে এবং পরে বরিশাল জেলা বোর্ডে তার নির্বাচন। হিন্দু মুসলিম উভয়ের মধ্যেই তাঁর জনপ্রিয়তা এতটাই ছিল যে তাকে প্রায় ভাইস চেয়ারম্যান পদে দেখতে সকলেই চাইছিলেন। কিন্তু যোগেন মন্ডল এই পদ প্রত্যাখ্যান করেন। বরিশালের এই বিপুল জনপ্রিয়তাই তার ভবিষ্যত রাজনৈতিক জীবনের সূত্রপাত ঘটিয়েছিল।
রাজনৈতিক জীবন
১৯৩৭ সালে প্রভিন্সিয়াল অ্যাসেম্বলি নির্বাচনে যোগেন মন্ডল একমাত্র তফশিল জাতির মানুষ হিসাবে নির্বাচিত হন। এর কারন ছিল উত্তর পূর্ব বরিশালের আপামর চন্ডাল অচ্ছুৎ এবং প্রগতীশীল হিন্দু ভোটারদের অকুন্ঠ সমর্থন। যোগেন মন্ডলের প্রতিদ্বন্দী ছিলেন সরল কুমার দত্ত, অশ্বিনি কুমার দত্তের ভ্রাতুষ্পুত্র এবং উত্তরসূরী। নির্দল হিসাবে নির্বাচিত যোগেন মন্ডল ফজলুল হকের মন্ত্রীসভার বিরোধী আসনে বসলেন। ফজলুল হকের মন্ত্রীসভা সাধারন মানুষের মধ্যে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরন কিছু মাত্রাতে হলেও করেছিল। আর যোগেন মন্ডল তুলে ধরতেন সরকারের সমালোচনা। সমালোচনা করতেন প্রাথমিক শিক্ষা, কৃষি ঋণ এবং সরকারের বিভিন্ন কমিটি ইত্যাদিগুলিতে সিডিউল কাস্টের প্রতিনিধিত্বের অভাব ইত্যাদি বিভিন্ন বিষয়ে। মূলত তাকে কেন্দ্র করেই আইনসভায় তৈরি হয় একটি গ্রুপ ইন্ডিপেনডেন্ট সিডিউল কাস্ট পার্টি। এর কাজ ছিল এই সমস্ত ইস্যুগুলিতে সিডিউল কাস্টের পক্ষে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা। যোগেন মন্ডল এই গ্রুপের সম্পাদক ছিলেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যোগেন মন্ডল বোস ভাইদের অর্থাৎ শরৎ এবং সুভাষ বোসের সাথেও যথেষ্ঠ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। উভয়েরই রাজনৈতিকভাবে বামপন্থী হিসাবে পরিচিতি ছিল এমনকি কংগ্রেসের ভেতরেও। সুভাষ বোসতো ১৯৪০ সালে যোগেন মন্ডলকে কলকাতা কর্পোরেশন নির্বাচনে সমর্থনও করেছিলেন। কিন্তু এই সম্পর্কে ছেদ পড়ে পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে। সুভাষ বোসের সাথে গান্ধীর বিরোধ চরমে পৌছায় এবং সুভাষ দেশত্যাগী হন আর শরৎ বোসের ঠাই হয় জেলে।
ইতিমধ্যে যোগেন মন্ডল প্রভাবিত হন আম্বেদকারের ভাবনায়। এছিল তাঁর নিজের রাজনৈতিক ভাবনার উত্তরন বা এক বড় পরিবর্তন। ১৯৪০ এর দশকের প্রথম দিকে যোগেন মন্ডল বেশ কয়েকবার দেখা করেন আম্বেদকারের সাথে। ১৯৪৩ সালে যোগেন মন্ডল আম্বেদকারের অল ইন্ডিয়া সিডিউল কাস্ট ফেডারেশনের বাংলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রানপুরুষ হিসাবে কাজ শুরু করেন।  ১৯৪৩এই মুসলিম লীগ এবং খাজা নাজিমুদ্দিনের কোয়ালিশন সরাকারের কৃষি এবং সমবায় মন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব গ্রহন করেন। সরকার প্রতীক হয়ে ওঠে মুসলিম এবং সিডিউল কাস্টের মেলবন্ধনের এক ধারনার যার বীজ নিহিত ছিল বাংলার বুকেই। কিন্তু সময়টা তখন ডামাডোলের। একদিকে বিশ্বযুদ্ধ, জাতীয়তাবাদী আন্দোলন, আকাল, মানুষের তৈরি করা দুর্ভিক্ষ, আর ব্রিটিশ শাসনের মৃত্যুঘন্টা বেজে গেছে। শুরু হয়ে গেছে ক্ষমতা হস্তান্তরের হিসাব নিকাশ। এরকম এক সময়ে দাঁড়িয়ে যোগেন মন্ডলের কাজ তাঁর ভাবনাকে প্রতিফলিত করে। যোগেন মন্ডল এই সময়ে ক্রমাগত, হয়তোবা খানিকটা একাকীও লড়ে গেছেন ছোটোলোকদের আর কৃষিজীবীদের নিয়ে। উনি লড়ে গেলেন কংগ্রেসের সাথে সেই কংগ্রেস যে ছিল বর্ণহিন্দুদের দল আর হিন্দু মহাসভার রাজনীতির বিরুদ্ধে।
১৯৪৬ সালে, যখন আম্বেদকার তার নিজের ঘর বম্বে প্রেসিডেন্সি থেকে আইনসভায় যেতে পারলেন না, যোগেন মন্ডল বাংলার বুকে আম্বেদকারের জন্য সমর্থন তৈরি করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন। ইতিহাসের পাতায় এই ঘটনাটি বিশেষভাবে অনুল্লেখিত বা অনালোচিত থেকে গেছে। অথচ একথা বলা অত্যুক্তি হবেনা যে যোগেন মন্ডলের এই সময়ের কার্যকলাপই আম্বেদকারকে প্রেরনা এবং রসদ যুগিয়েছিল পরবর্তীকালে সংবিধান রচনার কাজে। যদিও শেষ পর্যন্ত আম্বেদকারের কংগ্রেসের সাথে মিলিতভাবে কাজ করার সিদ্ধান্তের ফলেই হয়তো ঘটনাটি তার প্রাপ্য গুরুত্ব পায়নি।
১৯৪৬ সালেই যোগেন মন্ডল ছিলেন একমাত্র সিডিউল কাস্ট প্রার্থী যিনি সাধারন নির্বাচনে নির্বাচিত হয়েছিলেন সিডিউল কাস্ট প্ল্যাটফর্ম থেকে। সুরাবর্দীর মন্ত্রীসভায় তিনি মন্ত্রী হিসাবে কাজ করেন। ৪৬এর অগাস্টের ভয়াবহ দাঙ্গার পরও যোগেন মন্ডলের মন্ত্রীসভা থেকে ইস্তফা না দেওয়া নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে যায়। এদের মধ্যে তৎকালীন সিডিউল কাস্টের নেতৃবৃন্দও ছিলেন। যোগেন মন্ডল এই সমালোচনার উত্তরে সিডিউল কাস্টকে এই দাঙ্গা থেকে দুরে থাকতে বলেন। কারন এ দাঙ্গা হিন্দু মুসলিমের, সিডিউল কাস্টের এতে কোনো লেনাদেনা নেই। যোগেন মন্ডল কংগ্রেস এবং হিন্দু মহাসভাকে সরাসরি অভিযুক্ত করেন সিডিউল কাস্টকে প্ররোচনা দিয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে খেপিয়ে তোলার চেষ্টার জন্য। অবশ্য তাঁর মতামত এবং বক্তব্য তৎকালীন হিন্দু কাগজগুলিতে প্রকাশিত হয়না।
এই পটভূমিকায় দাঁড়িয়ে জিন্না যোগেন মন্ডলকে মনোনীত করেন মুসলিম লীগের পক্ষ থেকে বৃটিশরাজের থেকে ক্ষমতা হস্তান্তর পর্বে আইনমন্ত্রী হিসাবে। এই পদে যোগেন মন্ডল শরৎ চন্দ্র বোস, সুরাবর্দীদের সাথে দায়িত্ব পালন করেন যদিও স্বল্প সময়ের জন্য। যোগেন মন্ডল বাংলা ভাগের বিরোধীতা করেন বহুবিধ কারনে যার মধ্যে অন্যতম প্রধান ছিল দেশভাগের ফলে সিডিউল কাস্ট এবং তার সদ্য তৈরি হওয়া চেতনার এবং সংগঠনের উপর নেতিবাচক প্রভাব। কিন্তু অখন্ড বাংলার কথা শোনার লোক সে সময় বড় একটা ছিলনা। অনিবার্যভাবেই দেশভাগ হলো আর তারই সাথে সত্য প্রমানিত হলো যোগেন মন্ডলের দুঃস্বপ্ন। পশ্চিমবঙ্গে সিডিউল কাস্ট হয়ে দাঁড়ালো হিন্দুত্বের লেজুড় আর পূর্ববঙ্গে মুসলিমের।
স্বাধীনতা?
বরিশাল পূর্ব পাকিস্থানের অন্তর্গত হওয়ার কারনে যোগেন মন্ডল পাকিস্থান সরকারে আইন এবং শ্রমমন্ত্রী হিসাবে যোগদান করেন। পাকিস্থান আইনসভার উদ্বোধনী ভাষন দেন যোগেন মন্ডল। এই ভূমিকায়্ যোগেন মন্ডলের ভূমিকা ছিল একইরকম নিরলসভাবে সিডিউল কাস্ট, শ্রমিক এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা। কিন্তু খুব তাড়াতাড়িই যোগেন মন্ডলের পাকিস্থান সরকারের প্রতি মোহভঙ্গ হয়। যোগেন মন্ডল ভেবেছিলেন পাকিস্থানে সংখ্যালঘুরা নিরাপত্তার সাথে থাকতে পারবেন। কিন্তু বাস্তবে তা হলনা। স্বাধীনতার পর এপার এবং ওপার বাংলায় দাঙ্গায় জর্জরিত ছোটোলোকরা তাদের চেতনা, রাজনৈতিক এবং সাংগঠনিক ক্ষমতার রক্তাক্ত সমাধির উপরে দাঁড়িয়ে, অবশেষে ১৯৫০ সালে ভগ্ন হৃদয়ে এক পরজিত সৈনিকের মতন যোগেন মন্ডল ফিরে আসেন কলকাতায়।
এরপর আর কোনোদিন যোগেন মন্ডল কোনো পদ বা দায়িত্বগ্রহন করেননি। যদিও এরপরও বিভিন্নবার উনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দীতা করেছেন বিভিন্ন দল এবং মঞ্চের হয়ে এমনকি কংগ্রেসের হয়েও যাকে তিনি এযাবৎকাল সমালোচনাই করে এসেছেন। পাকিস্থান সরকারের থেকে তাঁর ইস্তফা তুমুল সমলোচিত হয়। লোকে প্রচার করে এ তাঁর এবং তাঁর রাজনৈতিক দুরদৃষ্টির ব্যার্থতা হিসাবে। এরপর তিনি বাস করতেন এক বস্তিঘরে এক মহান জনপ্রিয় জননেতার সাথে অসামন্জস্যপূর্ন ভাবেই।           
সে সময়ে পূর্ব বাংলা থেকে আগত উদ্বাস্তু শরনার্থীরা ছুটে বেড়াচ্ছেন এক ক্যাম্প থেকে আর এক ক্যাম্পে। সরকার তাদের পাঠাতে চাইছে সুন্দরবন, আন্দামান আরো এরকম কত জায়গায়। কারন এখানে জমির অভাব। না ঘরকা না ঘটকা মানুষগুলি বেশিরভাগই ছিল নীচু জাত সিডিউল কাস্ট। সে মানুষগুলির পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন যোগেন মন্ডল। তাদের কথা বলতে গিয়ে সেসময় একাধিক বার জেল পর্যন্ত যেতে হয়েছে তাঁকে। যোগেন মন্ডল প্রথমে তৎকালীন কমিউনিস্ট পার্টির ইউনাইটেড সেন্ট্রাল রিফিউজি কাউন্সিলে যোগদান করেন। কিন্তু আদর্শগত এবং কৌশলগত নানা বিরোধের কারনে এই সংগঠনের সাথে তিনি দীর্ঘ সময় যুক্ত থাকতে পারেননি। স্বাধীন ভাবে কাজ চালিয়ে যাওয়ার তাগিদে সে সময় ইস্টার্ন ইন্ডিয়া রিফিউজি কাউন্সিলের পত্তন করেন।
উদ্বাস্তু আন্দোলনের সাথে সাথেই নতুন ভারতীয় রাষ্ট্রের সিডিউল কাস্টের সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা এবং যথাযথ রূপায়নের সাথে। এই সূত্রে তিনি সভাপতি ছিলেন সিডিউল কাস্ট অ্যান্ড ট্রাইব ওয়েলফেয়ার কাউন্সিলের। একই সাথে তিনি আম্বেদকারের রিপাবলিকান পার্টিরও পূর্ব ভারতের দায়িত্বে ছিলেন। এই সূত্রে উল্লেখ্য যে ১৯৬৫ সালে লোকুর কমিশনের সুপারিশের বিরোধিতা করেন। কমিশনের সুপারিশ ছিল নমশূদ্র এবং মাহার-দের, যাদের মধ্যে স্বয়ং আম্বেদকার এবং যোগেন মন্ডল নিজে পড়তেন, সিডিউল কাস্টের তালিকা থেকে বাদ দেওয়া।
৫ই অক্টোবর, ১৯৬৮ যোগেন মন্ডল দেহত্যাগ করেন। সে সময় তিনি বনগাঁয় নির্বাচন প্রচার করছিলেন। যোগেন মন্ডলের সাথেই শেষ হয়ে গেল নীচু জাতের মানুষদের লড়াই তাদের কথা বলার এক অধ্যায়ের। রাষ্ট্রীয় ইতিহাস তাঁকে মনে রাখতে চায়নি। রাষ্ট্র তাঁর কোনো মূর্তি বানায়নি, রাস্তার নামকরন করেনি। কলকাতার উপকন্ঠে শহরতলিতে এবং কল্যানিতে তাঁর নামাঙ্কিত দুটি স্কুল আছে আর নাহাটাতে একটি কলেজ। যোগেন্দ্রনাথ মন্ডল স্মৃতি রক্ষা কমিটি প্রতি বছর তাঁর জন্মদিন পালন করেন। যোগেনন্দ্রনাথ মন্ডল একমাত্র সন্তান জগদীশচন্দ্র মন্ডল সম্প্রতি যোগেন মন্ডলের কাজ ও সিডিউল কাস্টদের বিষয় নিয়ে বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য লেখাপত্র প্রকাশ করেছেন। আ্জকের ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পটভূমিকায়, যোগেন মন্ডলের নীচু জাত ও মুসলিমের মেলবন্ধনের রাজনীতি নতুনভাবে প্রাসঙ্গিকতা লাভ করছে। 

স্বাধীনতার পর দীর্ঘ সময় কেটে গেছে। যোগেন মন্ডল অতীত হয়ে গেছেন। তবু তাঁর তোলা প্রশ্নগুলি, তাঁর ভাবনা, নীচু জাতের শোষন এগুলি কি অতীত হয়ে গেছে? হয়তো সময়ের সাথে সাথে কিছু প্রশ্নের মীমাংসা হয়েছে, কিছুবা পরিবর্তিত হয়ে অন্য নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আজকের যুগে যখন পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতি আবর্তিত হচ্চে প্রশ্ন শিল্প, কৃষি, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রাম নিয়ে তখন যোগেন মন্ডলকে বড় প্রাসঙ্গিক মনে হয়। জানতে ইচ্ছে করে যদি তিনি আজ বেঁচে থাকতেন তবে তিনি এব্যাপারে কি বলতেন। 


অনুবাদকের বক্তব্য
------------------
এই লেখাটি শ্রীদ্বৈপায়ন সেনের গবেষনাপত্রের আধারে লিখিত। গবেষকের সাথে আমার ব্যক্তিগত আলাপ নেই বা অনুবাদ সম্পর্কে কোনো আলচনা করার কোনো সূযোগ নেই। ব্যক্তিগতভাবে আমি বিজ্ঞানের ছাত্র, বিশ্ববিদ্যালয় কথিত সমাজবিজ্ঞান এবং তার পরিভাষা সম্পর্কে প্রায় আনাড়ি। আমি এই লেখাটা অনুবাদ করেছি বা হয়তো খানিকটা লিখেছিই বলা যেতে পারে দুটো বিষয়ের প্রেক্ষিতে। প্রথমত, চেতনা লহর ও তার পাঠক আর দ্বিতীয়ত ছোটোলোকের ইতিহাসের প্রতি আমার দায়বদ্ধতা মানে হাম কিসিসে কম নেহি। ভদ্দরলোকদের আমি ঘেন্না করি এবং এড়িয়ে চলি, তারাও আমাকে সরাসরি বিশেষ ঘাটায় না। স্বাভাবিকভাবেই, ভদ্দরলোকদের ভাষা বা পরিভাষা কোনোটার প্রতিই আমার কোনো দায় নেই বরং যত পারবো ওগুলোর তেরটা বাজানোরই চেষ্টা করি।
অতএব খারাইলোটা কি? শ্রীসেন আমার অনুবাদটি পড়েননি বা বলা ভালো সূযোগ পাননি তবে আমার আশঙ্কা আছে যে উনি হয়তো এই লেখাটিকে ওনার কাজের অনুবাদ বলতে অসুবিধা বোধ করতে পারেন। এই লেখার দায় দায়িত্ব এবং অপদার্থতা বা ছোটোলোকামি যা আছে সেটা সবটাই আমার আর কৃতিত্ব পুরোটাই চেতনা লহর আর শ্রীদ্বৈপায়ন সেনের। এঁরা অনেক বড়ো মাপের মানুষ বলে ভরসা রাখি ভালো না লাগলেও প্রশ্রয় পাবো।
যোগেন্দ্রনাথ মন্ডলকে নিয়ে চেতনা লহর ধারাবাহিক কাজ করবেন বলে শুনেছি, সেই প্রচেষ্টাতে একটা ইট গাঁথতে পারলেই আমি সার্থক।

Wednesday, April 29, 2015

দুনিয়ার পাগোল এক হও - পাগলা দাশু পাখা সংঘ

দুনিয়ার পাগোল এক হও - পাগলা দাশু পাখা সংঘ
===============================
সুস্থ লোকদের উৎপাত খুব বেড়ে গেছে। এইসব সুস্থ লোকরা কোনোদিনই পাগোলদের ভালো চোখে দেখেনি। পাগোলরা বরাবরই সংখ্যায় কম আর তাই তারা কোনঠাসা। পাগোলরা সমাজের বা বাড়ির বা অন্য কোনো কিছুর বিষয়েই ভাবিত নয়। বরং তাকে ভাবতে বললে সে রেগে যেতে পারে। সুতরাং পাগোলদের দ্বারা কিছু হবে না। এরা সমাজ, রাজনীতি সব থেকেই দলছুট।
কিন্তু সমাজ জানে পাগোলদের দরকার সমাজের নিজেরই স্বার্থে। যেসব প্রশ্ন সবাই মেনে নেয় কেন ওটা এরকম জিজ্ঞাসা করেনা পাগোল সেখানে তেড়ে যায়। ওর পিছনে পড়ে যায়। যেমন ধরুন নিউটন। আচ্ছা বাপু সবাই দেখে আপেল গাছ থেকে মাটিতে পড়ে। কেন সেটা নিয়ে কেউ প্রশ্ন করে? নিউটন পাগোল তাই পড়ে গেলেন ওই কেনর পিছনে। ফল আজকের দুনিয়া।
নজরুল, নিউটন, দা ভিঞ্চি, চ্যাপলিন, মার্কস, রামকৃষ্ণ, লালন, বিদ্যাসাগর, আইনস্টাইন এবং রবীন্দ্রনাথ, এরা সবাই পাগোল ছিলেন। এমনকি এদের পাগলামির রোগের নামটাও খুজলে পেয়ে যাবেন যেমন ধরুন মার্কসের রোগটার নাম এম.পি.ডি – মালটিপল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার।
কোনো একটা পাগোল একটা বিরাট যুগান্তকারী কিছু একটা করে ফেললেই, সুস্থ লোকেরা সেটা বেশ বেমালুম ঝেড়ে দেয়, ব্যবসা করে, মাল কামায়। আর মিডিয়া আর সবাই এমন হাবভাব করে যেন এরকম প্রতিভার বিকাশ সম্ভব প্রেসিডেন্সি, যাদবপুর, আই আই টি, আই এস আই আর হালফিলে আই আই এমে। অর্থাৎ এই সমস্ত জ্ঞানের (ব্র্যাকেটে মোটা মাইনের চাকরির গ্যারান্টি) ফ্যাক্টরিতে কাঁচামাল হিসেবে ফেলতে হবে একটা কাউকে আর ফ্যাক্টরি থেকে ফিনিশ হয়ে বেরোবে রবীন্দ্রনাথ বা আইনস্টাইন।
এটা বলা নিশ্চয়ই বাড়াবাড়ি যে সমস্ত পাগোলই আসলে জিনিয়াস কিন্তু কথাটা হলো সমস্ত পাগোলই জিনিয়াস নয় কিন্তু সমস্ত জিনিয়াসই পাগোল।
পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে যেখানে কোনো কথা বলা মানেই শ্রোতার মনে সর্বক্ষন হিসাব চলে এমালটা আসলে কি? সিপিএম না তৃণমূল না বিজেপি বা কিছু না পাওয়া গেলে নকশাল সেখানে এরকম পাগোলদের মহা যন্ত্রনা। এরা একটা ইস্যুতে পাগোল যেমন কেউবা প্রকৃতি পরিবেশ, কেউ বাংলার সংস্কৃতি বা ভাবধারা কেউবা জাতপাত এবং ছোটোলোকদের সমস্যা। স্বাভাবিকভাবেই রাজনৈতিক কথাবার্তা তাদের বলতেই হয়, এসে যায়। ফলত লোকে এদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ব্র্যাকেটে ফেলে বা ফেলার আপ্রান চেষ্টা করে। আর একান্তই না পারলে রেগে যায় আর প্রায়শই আজে বাজে কথা বলে বা গুজব ছড়াবার চেষ্টা করে বা আরো স্পষ্টভাবে বললে নিজের মিথ্যাকে নিজের কাছেই সপ্রমান করে আর লোককেও দলে টানার চেষ্টা করে।
অবশ্য এদের থেকেও করুণ অবস্থায় আছে আর এক জাতের পাগোল। এরা আধ্যাত্মিক পাগোল। এককালে নাস্তিক হওয়া মানে ছিল রেবেল বা বিদ্রোহী আর আজ আস্তিক বা আধ্যাত্মিক হওয়া মানে একেবারে আন্ডারগ্রাউন্ড বিদ্রোহী হওয়া। কখনো কখনো তা এতটাই যে নিজের পরিবারের থেকেও তা লুকাতে হয়।
ইতিহাস হয়তো এদের মধ্যে কাউকে কাউকে স্বীকৃতি দেবে। হয়তো কেউ একটা নোবেল বা বুকার বা নিদেনপক্ষে একটা আনন্দ বা আকাদেমি পাবে আর তারপর তার কাজের মুল্যায়ন হবে, ডকু হবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার ভাবনাটা এইসব পাগোলদের নিয়েই। একটা ই-ম্যাগাজিন বা ওয়েবসাইট। ব্যক্তিগতভাবে জীবনে অনেক কাজই আরম্ভ করেছি কিন্তু শেষ করাতো দুরের কথা কন্টিনিউ পর্যন্ত করতে পারেনি। এবারে তাই এমন কিছু ভাবতে চাই যা কম লোকবল, অর্থবলে সম্ভব এবং যেটা একটা ইস্যু হয়ে বন্ধ হয়ে গেলেও ইতিহাসের সাপেক্ষে কিছু কাজ হবে।
নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় আমি এবং আমাদের অনেকেই বলে থাকি আমরা এক ভ্যাবাচ্যাকা প্রজন্ম। আমরা টিভির জন্ম দেখেছি, মোবাইলের জন্ম দেখেছি, ইন্টারনেটের জন্ম দেখেছি এবং বিশ্বায়ন পরবর্তী পর্যায়ে পণ্যসংস্কৃতি দেখেছি বা এখনো দেখছি। এর সাথে যোগ করতে হবে নকশাল আন্দোলনের ছাট, সিপিএম এবং কলেজ স্ট্রীট-কফি হাউস বিপ্লব। সবটাই দেখেছি এবং মানিয়ে নিয়েছি বা নেবার চেষ্টা করে চলেছি কিন্তু ভ্যাবাচ্যাকা মেরে কোনো কাজটাই আর করা হয়ে উঠল না। ছেলেমেয়ে বড়ো হচ্ছে। একদিন যদি তারা জিজ্ঞাসা করে বাবা, তোমরা কয়টি কেশ উৎপাটন করিয়াছ? – তখন কি জবাব দেবো?
মারা যেতে দেখেছি একের পর এক দিকপালকে। দেহগুলো মরে যাবার অনেক আগে থেকেই তাঁরা মুছে গিয়েছিলেন সমসাময়িক ইতিহাস থেকে বাকিটা ফর্মালিটি।
হারিয়ে যাওয়ার আগে তাই পাগোলদের পাগলামির স্বীকৃতির ছলে ধরে রাখতে চাই একটুকরো ইতিহাসকে। যদি ওরা প্রশ্ন করে তার উত্তরে নিজেদের সাফাই হিসাবে।
বিভাগ সমূহ
---------------------
১. ফিচার্ড পাগোল আলেখ্য
----------------------------
এখানে থাকতে পারে একজন বা দুজন পাগোলের পাগলামির কথা, ভিডিও এবং লেখাপত্তর ইত্যাদি। একটা ভিডিও থাকবে যেটা সেই পাগোলের সাথে ইন্টারভিউয়ের ভিত্তিতে তৈরি হবে। ইন্টারভিউটা আবার আড্ডার ফর্মাটে।
২. ঐতিহাসিক পাগোল আলেখ্য
----------------------------------------
এখানে থাকবে কোনো একজন জিনিয়াসের পাগলামোর গল্প।
৩. এস-এম-এস কনটেস্ট
----------------------------------------
নিজেকে কেন পাগোল বলে দাবী করেন জানান।
৪. পাগলা দাশু বা ঐরকম কোনো সাহিত্যের চরিত্রের পরিচিতি
৫. ছিট আছে, ভবিষ্যতে বড়ো পাগোল হতে পারে এমন মানুষের পরিচিতি তাকে সামনে নিয়ে আসা।
৬. পাগলামো নাটক বা সিনেমা বা বই এর রিভিউ
কেউ যদি এই পাগলামির সাথে যুক্ত হতে চান তাহলে অবশ্যই যোগাযোগ করুন।

Thursday, April 23, 2015

ইনফোরটেইনমেন্ট চাটনি - শ্বেতা বসু প্রসাদ

এই লেখাটা এ.বি.পি ব্লগে সাবমিট করেছিলাম অনেকদিন আগে। বোঝাই যাচ্ছে পাবলিশও হবে না আবার রিজেক্টও হবে না।
======================

বড় মিডিয়াকে করে কম্মে খেতে হয়। মাল বেচতে হয়।  বড় মিডিয়াকে মেইনস্ট্রীম মিডিয়া বলে উল্লেখ করায় এক অগ্রণী লিটল ম্যাগাজিন সম্পাদক আমার সাথে তুমুল ঝগড়া করেছিলেন। শেষে রফা হয়েছিল 'বিগ মিডিয়া' শব্দবন্ধে।  ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি খবরের কাগজের বিশেষ করে সান্ধ্য কাগজের এক নিশ্চিত চাটনি হল গিয়ে রেপের খবর। অনেকে শুধু ওইটুকু পড়ার জন্যই আট আনা খরচা করে অফিস থেকে ফেরার পথে একটা কাগজ নিয়ে যেতেন।

এ যুগে খবরের কাগজের পাশাপাশি আছে নিউজ পোর্টাল। এবিপি আনন্দের পোর্টালটা দিনে অন্তত একবার ঘুরে যাওয়ার একটা বাড়তি গোপন তাগিদের কারন হল পোর্টালের ডান দিকের স্লাইড শো এর লিঙ্কগুলো। বেশ সুন্দর একটা মাখো মাখো ধরি মাছ না ছুই পানি ইসটাইলে ইনফোরটেইনমেন্ট।

সেদিন হঠাৎ চোখ আটকে গেল শ্বেতা বসু প্রসাদের ছবিতে। বা বেশ নাদুস নুদু্স দেখতে হয়েছে তো। তা মেয়েটা বেশ্যাবৃত্তির দায়ে ধরা পড়ল!

আমার ৬ বছরের মেয়ে শ্বেতা বসু প্রসাদ নামটা জানেনা। ওর কাছে বাস্তব হল চুন্নি যার সাথে ও নিজেকে একাত্ম মানে যাকে বাংলায় বলে আইডেনটিফাই করে। ও নিজে সাজে চুন্নি আর ওর ছোটো ভাইকে সাজায় মুন্নি আর তারপর ওরা খেলে মাকড়ি।

একদিন ও বড় হবে - জানতে পারবে ওর নাম চুন্নি না শ্বেতা বসু প্রসাদ। জানবে ওর গল্প। হয়তো জানবে শ্বেতা বসু প্রসাদ দাম চুকিয়েছিল - শিল্পী নয় সেলিব্রিটি হবার দাম।

আমার লিটল ম্যাগাজিনের সম্পাদক বন্ধুটি আপোষ করেননা। তিনি কখনো কোনো মেয়ের ছবি ছাপেন না বিক্রি বাড়াবার জন্য। কিন্তু এবিপি ছাপে, মেইনস্ট্রীম মিডিয়া ছাপে। এই ছবির আড়ালে চাপা পড়ে যায় শিল্পী থেকে সেলিব্রিটি হবার গল্প।

আঙ্গুলটা কার দিকে তুলবো? মিডিয়ার দিকে? যে মিডিয়া আমাকে ভাবতে শেখায়? নাকি নিজের দিকে কারন আমিই সেই কনজিউমার যে মিডিয়াকে বাধ্য করি এই শেষ পাতের চাটনি খাওয়াতে !!!

প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তর .....

Monday, March 9, 2015

অভিজিত রায় – দু একটি কথা

শহিদ অভিজিত রায় অমর রহে। অভিজিত রায়কে হারানোর যন্ত্রণা এবং ভয় প্রায় নিজেকে হারানোর ভয়। এ হত্যাকাণ্ডকে কি ভাষায় কনডেম করবো সত্যিই বুঝে উঠতে পারছিনা। প্রকাশ্য বইমেলায় এরকম নারকীয় একটা নাটক বিহ্বল করে দিয়েছে সকলকে এবং আমাকেও। অভিজিত বায় সেইসব শহিদদের মধ্যে একজন যাদের বলিদানের উপরে দাঁড়িয়ে আমি এবং আমরা সকলে, এমনকি রাষ্ট্র নিজেও।

কিন্তু শুধু এটুকু বলেই থেমে যাওয়ার হলে একটা লেখার বদলে একটা সিগনেচার ক্যাম্পেইনে সই করলেই চলত। এ প্রসঙ্গে আরও কিছু বলার আছে।

প্রথমেই স্পষ্ট করে বলতে চাই আমি অভিজিত বায়ের দর্শনে বিশ্বাস করিনা। কেন কি ব্যাপার সেসব বিস্তারিত আলোচনা এক্ষেত্রে  অপ্রাসঙ্গিক। কিন্তু তফাতটা নির্দেশ করা জরুরী কেননা সেটা এই লেখার একটা অন্যতম বড়ো কারন। নাস্তিকতাকে সমর্থন করিনা কিন্তু নাস্তিকতার অধিকারকে সমর্থন করি।

খবরটা পাওয়ার পর সন্ধ্যাবেলা যখন বন্ধুরা একজোট হলাম তখনও সবাই দারুন আপসেট। তারই মধ্যে আড্ডার মধ্যে সবাই মোটামুটি দুটো বিষয়ে একমত হলো। প্রথমত এর মানে আক্রমণের মুখে বাংলাদেশে সিভিল সোসাইটি প্রায় কোনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছেনা এবং দ্বিতীয়ত বা বলা ভালো প্রথম ভাবনার লজিকাল কনসিকুয়েন্স আপাতভাবে উল্টো পুরান মনে হলেও – রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস গণতন্ত্রকে প্রায় পুরোপুরি কণ্ঠরোধ করে রেখেছে।

এদিকে ফেসবুকের কল্যানে দেখতে পাচ্ছি বিভিন্ন মানুষ নেমে পড়েছেন এর প্রতিবাদে। কিন্তু তাদের প্রত্যেকেই বিভিন্ন কারনে এ-ঘটনার সাথে একাত্মতা অনুভব করছেন। নেপথ্যের এই কারনগুলি কখনো কখনো মুখ্য হয়ে উঠে শহিদের অমর্যাদা করছে এবং আরও গুরুত্বপূর্ণ সমাজের বিবর্তনে ছাপ ফেলে যাচ্ছে। এই কারনেই এই নেপথ্যের কারনগুলিকে লজিকালি এবং খোলা মনে আলোচনা করার প্রয়োজন আছে।

নাস্তিকতা প্রচারক এবং মার্কসবাদীরা প্রতিবাদীর প্রথম সারিতে আছেন। প্রতিবাদের মিছিলে তাদের সাথে পা মিলিয়েও বলতে চাই এই হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই নাস্তিকতা বা/এবং মার্কসবাদকে সপ্রমাণ করেনা বা আপামর ছোটলোকদের কাছে তাদের গ্রহণযোগ্যতাকে বিন্দুমাত্র বাড়ায় না। সত্যি কথা বলতে কি কোনও ছোটলোক কোনও মার্কসবাদী বা নাস্তিক-কুলপতির কাছে প্রথমবার অভিজিত রায়ের নাম শুনতে হেঁটে হেঁটে কলেজ স্ট্রীট চত্বরে হাজির হবেনা। বরং প্রথমবার সে নামটা শুনবে তার ধর্মবিশ্বাসের ঠিকাদারের কাছে – গেরুয়া নয়তো সবুজ রঙের কারবারিদের কাছে। বাংলাদেশ এবং ভারতের ইতিহাসের পাতায় পাতায় প্রমাণ আছে বাবরি মসজিদ ধ্বংসে সবচেয়ে লাভবান হয়েছে দুই দেশের মৌলবাদী শক্তি।

গেরুয়া শিবির কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তুলছে কিন্তু তাদের কথা আধা সাচ্ যা নির্জলা মিথ্যার থেকে বহুতর গুনে বিপদজনক। আর মার্কসবাদী এবং প্রগতিশীলরা গোটাটাই উড়িয়ে দিচ্ছেন চক্রান্তের তত্ত্ব দিয়ে। সত্যিকে স্বীকার করছেননা ফলে বিশেষত পশ্চিমবঙ্গে ছোটলোকদের কাছে তাদের গ্রহনযোগ্যতা বিন্দুমাত্র বাড়ছেই না বরং তারা আরও বেশি করে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছেন। বুঝি ভোট-ব্যাঙ্ক বড় দায় কিন্তু দাদা অন্তত আপকে দেখে শিখুন। পাবলিককে এতটা ইয়ে ভাবছেন কেন? আপ তো দেখালো ইমামের সমর্থন ভোটের আগে বিবৃতি দিয়ে কনডেম করেও ৭০ এ ৬৭ হয়। আর কাকে কি বলছি, এনারাতো এমনকি প্রকাশ্যে সামনেই আসতে চান না নেপথ্যে থেকে ইন্দ্রজিতের মতো বান চালান। অর্থাৎ পার্টির এবিষয়ে কোনো বক্তব্য নেই ভাবটা এমন যে আমরা অনেক গুরুত্বপূর্ণ অন্য ব্যাপারে ব্যস্ত কিন্তু বাচ্চারা মানে ছাত্রফ্রন্ট ইত্যাদি ওরা এটা নিয়ে মুভ টুভ করছে ওদের আমরা সন্ধ্যাবেলা পার্টি অফিসে গাইড করে দেব। আরো বড়রা আবার স্পনসরড সেকুলার মুসলিম খুঁজে নেন সিভিল সোসাইটিকে নেতৃত্ব দেবার জন্য।

ইসলাম আজ সারা পৃথিবীর গণতান্ত্রিক মানুষের প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়ে। তাকে দায় নিতে হবে আই-এস, তালিবান, জামাতের নারকীয়তার। সারা পৃথিবীর মানুষের কাছে পলিটিকাল ইসলাম আর তার সন্ত্রাস এক দুঃস্বপ্নে পরিণত হতে চলেছে। আমাদের এখানে সেই কবে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় রামায়ণ নিয়ে কমিক করে গেছেন। ভানুর নব রামায়ণ শুনেছেন এমন মানুষের সংখ্যা অভিজিত রায় পড়েছেন তেমন মানুষের চেয়ে অন্তত এক লাখ গুন বেশি। বা অমিতাভ বচ্চন হরি বোলের সাথে কোমর দুলিয়ে নেচে গেছেন। কিংবা ধরুন হাল আমলের দেব – ইনিও তো পিছিয়ে নেই। কিন্তু এসব কোনও কিছুই কিছুই ঘটাতে পারেনি। দলে দলে লোক নাস্তিকও হয়নি আবার চপার তুলে মারতেও আসেনি। সবই হজম হয়ে গেছে বাঙলার ভাবের কাছে – প্রেমের সাগরে ভেসে গেছে আস্তিক নাস্তিক ভেদাভেদ। এই ভাব যা ইসলামকে খুঁজে পায় লালনের গানে, কুবীর গোঁসাইয়ের গানে। এই ভাব যে জানে দিল দরিয়ার মাঝে যে এক আছে মজার কারখানা। ইসলামের রাখওয়ালাদের কাছে প্রশ্ন – শরিয়তের অপর যা খুঁজে পাই সুফিতে, মুতাজেলাবাদীর মধ্যে তারকি কোনও স্থান নেই? বাংলায় ইসলামের প্রকাশ এবং প্রসার ঘটেছে সুফিতে, প্রেমের সাগরে। যখন হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদ ঘৃণা ছাড়া আর কিছুই দেয়নি তখন ছোটলোকরা হাতে চপার তুলে নেয়নি, ইসলামের প্রেমের সাগরে ভেসে গিয়েছে গানের মধ্যে দিয়ে। সেই শরিয়তি কোরান হাদিসের রাখওয়ালাদের কাছে প্রশ্ন – কেন তাহলে আজ এই সময়ে একের পর এক এক দরগা চলে যাবে মসজিদ এবং শরিয়তি ইসলামের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণে? এক সময় যে মৌলবিরা একের পর এক ফকিরকে নৃসংসতমভাবে খুন করেছে, কোন অধিকারে এবং কি উদ্দেশ্যে তারা আজ একটার পর একটা দরগাকে রূপান্তরিত করছে মসজিদে? কোন অধিকারে তারা হিন্দু এবং মহিলা ভক্তের প্রবেশ এবং অধিকার নিয়ন্ত্রণ করছে? কেন আজও কোনও কোনও মুসলিম প্রধান এলাকায় তোলা যাবেনা ভারতের জাতীয় পতাকা? কেন বাংলাদেশের বাংলা ভাষার এত ব্যাপক ইসলামাইজেশন হবে? একের এক আরবি, ফার্সি আর উর্দু শব্দের দাপটে কেন কোণঠাসা হয়ে পড়বে বাংলা শব্দ ভাণ্ডার? কেন ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে যাত্রা শুরু করেও বাংলাদেশকে হয়ে যেতে হবে ইসলামী রাষ্ট্র? কেন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ স্বত্বেও বাতিল হবেনা অষ্টম সংবিধান সংশোধন? কেন সে আজও হয়ে উঠতে বা বলা ভালো স্বপ্ন দেখারও সাহস দেখাতে পারবেনা ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হয়ে উঠবার? কেন বারবার অভিযোগ উঠবে মাদ্রাসার আড়ালে সন্ত্রাসের কারবারের? সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ – কেন ইসলাম হয়ে উঠবে অর্থনীতির এবং সেই সূত্রে রাষ্ট্রক্ষমতার এক গুরুত্বপূর্ণ কারবারি? – শেষ প্রশ্নটির ক্ষেত্রে আরও একটু ভাববার অবকাশ আছে সেকথাও আসবে।

বটমলাইন – শরিয়তি ইসলামের কাছে প্রশ্ন “আপনারা কি আর কোনও অপরের অস্তিত্ব ই স্বীকার করবেন না? আপনারা কি এমনকি ডায়লগে বিশ্বাসই করেন না?”

দেশভাগ বাঙালীর জাতির ইতিহাসের এক চরম ট্র্যাজেডি। সুতরাং বাঙালী জাতিসত্তার ক্ষেত্রে হিসাবের ম্যাপ পলিটিকাল ম্যাপ অনুসারী হবে না। বাঙালী জাতিসত্তা খণ্ডিত ভাবে দুই রাষ্ট্রেই বর্তমান – বাংলাদেশ আর ইন্ডিয়া। হ্যাঁ ইন্ডিয়া, ওপার বাঙলা বা পশ্চিমবঙ্গ নয় ইন্ডিয়া। হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদ পদে পদে ওপার বাঙলাকে ছোটো করেছে। ঢাকা ইউনিভার্সিটির জন্মলগ্ন থেকে আজও এপারের কলকাত্তাইয়া হিন্দু এলিট ব্রাহ্মণ্যবাদ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে বা অনেকাংশে সফলও হচ্ছে ঢাকা তথা গোটা বাংলাদেশকে তার উপনিবেশ বানাতে।সচেতনভাবেই দীর্ঘকাল সে আটকে রেখেছে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক এবং তার সাথে সম্পৃক্ত পণ্য সংস্কৃতির বিকাশকে। সেই মুক্তিযুদ্ধের সাহায্যের রিপেমেন্টের খুড়োর কল দৌড়ে যাচ্ছে গত ৪৩ বছর ধরে। কে কবে কোথায় কটা হিন্দু ভারতীয় লেখা দেখেছেন এর মুখোশ টেনে ছিঁড়ে পেছনের জন্তুটাকে বের করে আনতে? কটা হিন্দু ভারতীয় লেখা পেয়েছেন যেখানে শাহবাগে হিন্দু-খ্রিস্টান-জিয়োনিস্ট লবির সম্ভাব্য মদত প্রসঙ্গে আলোচনা হয়েছে? যে এনটিপিসি বাংলাদেশের একমাত্র বনভূমি আমাদের প্রিয়তমা সুন্দরবনকে ধ্বংস করতে উদ্যত হয়েছে তাকে প্রতিরোধ করাতো অনেক অনেক অনেক পরের কথা, ইস্যুটা তোলার সাহস এপার বাঙলার কোন পলিটিকাল পার্টি বা গ্রুপ দেখাতে পারবেন? খোঁজ নিয়ে দেখুন সব পার্টিরই পলিটব্যুরো যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির মিলি ঝুলি বামুন কায়েত সরকার।

এই ঢ্যামনামোর শেষ নেই। বাংলাদেশের বাঙালীর কাছে কলকাতা হলো গরীবের নিউ-ইয়র্ক আর এপার বাঙলা হলো গরীবের আমেরিকা। আর এপার বাংলার হিন্দু অহমিকায় বেশ ভালো হাওয়া পড়ে। পাল খাওয়া গরুর মত হাম্বা রবে সে ঘোষণা করে ম্যায় ইন্ডিয়ান হুঁ, ইন্ডিয়ান। আর ওরা সব বাঙালের বাচ্চা, কাটার বাচ্চা ইত্যাদি। এখানেও আবার নো-ম্যানস ল্যান্ডে বসে আছে বা বলা ভালো তাড়া খেয়ে, গুলি খেয়ে বসবাস করছে বহু ছোটলোক যারা কোনোকিছুই বলতে পারেনা।

সেই অর্থে দেখতে গেলে একথা বলা কি খুব অন্যায় হবে যে একটা এলিট ঔপনিবেশিক হিন্দু ব্রাহ্মণ্যবাদই অভিজিত বায়ের মৃত্যুর কারন না বরং কারনের উৎস।

অভিজিত রায় একজন আদর্শ এলিট বাঙালী ছিলেন। তিনি যোগ্যতম এলিটদের মধ্যে পড়েন। স্বাভাবিকভাবেই উনি  আমেরিকান সিটিজেন ছিলেন।কিন্তু এপার বাংলার প্রতিবাদের আড়ে বহরে শ্রী দেখে কুটিল প্রশ্ন জাগে – তবেকি আমেরিকান সিটিজেন এটাই এই গোটা প্রোগ্রামটার ইউএসপি? কে বড়? অরুন্ধতী রায় না নিউ ইয়র্ক টাইমস?

এত সবের পরও আবার ফিরে আসতে হয় ইসলামের কাছে। আজ আমেরিকাতে তৈরি শুধু না বাম্পার হিট হচ্ছে সাংস্কৃতিক সঙ্কটকে বেআবরু করে দেওয়া ছবি – অভতার বা ফাইট ক্লাব। পণ্য সংস্কৃতির গোলকধাঁধায় ক্লান্ত কনফিউজড, ডিপ্রেসড, অবসেসড এবং পিসড অফ কনজিউমার জবাব চাইছে আধুনিকতার কাছে এর শেষ কোথায়? মার্কসবাদ উত্তর যুগে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার কাছে ইসলাম একমাত্র গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। প্রকৃতির কোলে লুকিয়ে থাকা আদিবাসী অস্তিত্বের উপরে মাইনিং আর আধুনিকতার আকা পণ্য-সংস্কৃতির প্রসারের আক্রমণের সময় এগিয়ে আসে ইসলাম। হয়তো ইসলাম আছে তাই নয়তো ছোটলোকদের একটা বিরাট বড় অংশ মরে হেজে নিশ্চিহ্ন হয়ে যেত।  
সেদিন খবরটা পাওয়ার পর ভারী মনে চা খেতে এসেছি। দেখি মকসেদ ধরল। কি হয়েছে গো? মন খারাপ? মকসেদ একজন রিকশাওয়ালা, মুসলমান এবং আমার খুব ভালো বন্ধু। কিন্তু অভিজিত রায় সম্পর্কে সে দুর দুর তক কিছুই জানেনা। যদিও আমি অভিজিত রায়কে ব্যক্তিগতভাবে চিনতাম না কিন্তু সরলীকরণের স্বার্থে বললাম আমার একজন চেনা প্রিয় বন্ধুকে ঢাকাতে বইমেলাতে খুন করা হয়েছে। মকসেদ জিগালো কে মারছে? আমি বললাম ওই রাজাকাররা। খানিকটা চুপ করে থেকে মকসেদ বলল মন খারাপ কইর না, শোনো গান শোনো। এই বলে ও ওর মোবাইলটা স্পিকারে অন করে দিয়ে বাজিয়ে দিল আল্লাহ কে বান্দে গানটা।গানটা শুনতে শুনতে যেন সত্যিই মনে হল আল্লাহর পয়গাম পেলাম।অভিজিত রায় আল্লাহ কে বান্দে ছিলেন।তার হত্যার বদলা চাই। চূড়ান্ত হিংসার বদলা চূড়ান্ত প্রেম। একটা খুনের বদলে চাই এক নয় হাজারো গান।

আমার হাতে যদি আলাদীনের চিরাগ থাকতো তবে জিনকে হুকুম করতাম লাগাও ফকির উৎসব। হোক লালন, হোক কুবীর গোঁসাই হোক ফকির। আর এটা করতে হবে কলেজ স্ট্রীট পাড়ায় না, দেগঙ্গায়, মুর্শিদাবাদে, গার্ডেনরিচে আর ঠিক সেই সেই জায়গায় যেখানে হিন্দু ধর্মের ঠিকাদাররা গিয়ে উপস্থিত হবে গুজবের মাধ্যমে ঘৃণা ছড়াতে।
শুনেছি চিরাগের দৈত্যের সাথে আংটির দৈত্য ফ্রি। তাহলে ওকে বলবো যাও ফেসবুকে একটা ইভেন্ট পোস্ট কর আর সারাদিন ধরে অক্লান্তভাবে কমেন্ট করে যাও। তোমার টার্গেট হলো বিরাট কোহলির টুইটার ফলোয়ারের সংখ্যার থেকে ১ বেশি।

সুমনের সেই সূর্য বলল ইস গানের তালে তাই বলতে ইচ্ছা করে ভাগ্যিস অভিজিত রায়ের হত্যাকারীরা ছিল নয়তো আধুনিকতার এই তাসের ঘর আকা রাষ্ট্র কবেই তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে পড়তো!