বাজার গরম দুটো ইস্যু - 'প্রগতিশীল' বাঙালীর কাছে গরু আর বাকিদের বিশেষত কলকাতার বাঙালীদের কাছে দেশপ্রিয় পার্ক। তা এনিয়ে চর্চ্চা চলছে চলবে। এই হুজুগে আমিও একটা লেখা লিখে ফেললাম লাল খট্টরের বদমাইশি নিয়ে। এরই মধ্যে দেশপ্রিয় পার্ক বন্ধ। ফেবুতে দু-একটা পোস্ট চোখে পড়ল হিন্দুত্ব আক্রান্ত এই টাইপের। কিন্তু সেগুলো মোটেই হালে পানি পেল না। 'প্রগতিশীল' কমরেডরা কি বলবেন? বলবেন "দেখো হিন্দুত্বের বিপদ - হিন্দু ফ্যাসিজম যে দোরগোড়া্য় কড়া নাড়ছে এতো তারই লক্ষণ"। এক মিনিট, বেল বাজলো - কে এলো? ফ্যাসিজম নাতো? ওনা এতো কাজের মাসি। যাই হোক যে কথা বলছিলাম। তা এই 'হিন্দুত্ব আক্রান্ত' টা হালে পানি পেলো না কেন? কৃতিত্বটা কার? কার আবার অবশ্যই 'সচেতন' জনগণের! অর্থাৎ, ক্ষীরটা খাবার বেলা কিন্তু আমি হাজির ওটা হিন্দু ধর্ম বা হিন্দু জনগণকে দেওয়া যাবেনা।
ছোটোবেলা থেকে দেখে আসছি উৎস মানুষ এবং ঐ টাইপের আরো বেশ কিছু পত্রিকা রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দকে নিয়ে যাতা লিখে আসছে। এমনকি এখনো এই মূহুর্তে আমার হাতে একটি পত্রিকা আছে যাতে গীতা নিয়ে যাতা লেখা হয়েছে এবং শ্রীকৃষ্ণকে সাম্রাজ্যবাদীদের দালাল ইত্যাদি বানানো হয়েছে। কিন্তু তাতে কেউ কোনোরকম রিঅ্যাক্ট করেনা আবার নাস্তিক বা কম্যুনিস্টও হয়ে যায়না। গোটা ৫০ (এখন বোধহয় আরো কম) লোক এইসব ভাট বকে আর কলেজ স্ট্রীট গরম করে।
এটাই ভারতীয় সংস্কৃতি। এটাকে হিন্দু বললে বলা যায় আপত্তি থাকলে নাও বলা যায়। এই উদারতা, বহুত্বের এই সহাবস্থান কেউ কোনোদিন ভাঙতে পারেনি। না মোল্লারা না পুরুতরা। যে যতই চেষ্টা করুক এই সংস্কৃতিকে মোল্লাতন্ত্র বা পুরোহিতন্ত্রের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রনে নিয়ে আসতে পারবে না।
এবার পূজোয় অসুর বন্দনা দেখেছি। এমনকি দেবী দূর্গাকে সেক্স আইকন হিসাবে প্রজেক্ট করাও দেখেছি। সবই আছে মিলেমিশে। এই সহনশীলতা, বহুত্বের এই সহাবস্থান - এক অর্থে এতো হিন্দুত্বের শিক্ষা। এদেশের ইসলাম মরুভূমির ইসলাম নয়। এদেশের ইসলাম প্রেমের জোয়ার। মোল্লারা কোনোদিন সেটা ভালোভাবে নেয়নি। প্রানপনে চেয়েছে ইসলামকে শস্য শ্যামলা সবুজ বাংলা থেকে নিয়ে গিয়ে মরুভূমির গর্তে নিয়ে গিয়ে ফেলতে।
'প্রগতিশীল' বন্ধুরা কি মোল্লাতন্ত্রকে আত্মসমালোচনা করতে বলবেন না? বলবেন না "এই উদারতা আমাদের হিন্দুত্বের কাছ থেকে শিখতে হবে"। না বলবেন না। বলবেন না কেননা এরা আসলে কোনো জার্নির মধ্যে নেই। এরা মুসলমান জনগণকে একটা একজোট হওয়া ভোটব্যাঙ্ক মনে করেন তার বেশি কিছু না।
আল্লা এত বড় এত ব্যাপ্ত যে তাঁকে গালি দিলে তাঁর কোনো কিছু যায় আসেনা। এক অর্থে সেও আল্লারই বন্দনা মাত্র। যায় আসে মোল্লাতন্ত্রের। তাই তারা লোক খ্যাপায়, দাঙ্গা করে নাস্তিক নিধন অভিযানে নামে। আর প্রতিক্রিয়ায় তৈরি হয় ব্রাম্ভণ্যবাদ বা উল্টোটা। আল্লা ভাবে আমি ব্যাপ্ত, ঈশ্বর ভাবে আমি আর অন্তরালে বসে হাসে 'প্রগতিশীল'।
No comments:
Post a Comment