Tuesday, September 2, 2014

ওয়েব দুনিয়াতে পলিটিকাল অ্যাকটিভিজম

সেপ্টেম্বর ২০১৩তে একক মাত্রায় প্রকাশিত
===========================


এই লেখার পরিকল্পনা বা সে অর্থে জন্ম হয় দুমাস আগে – অনিন্দ্যদার ভাবনায়। তখন ভাবনায় ছিল শাহবাগ চত্বর, পাশের বাড়িতে বাংলাদেশে ঘটে চলা ঘটনা। তার মুলে অনেকটাই জুড়ে ছিল ওয়েব দুনিয়ার সক্রিয়তা। আজ যখন এই লেখা শেষ হচ্ছে তখন আমার কাছে একটি এসএমএস –  এডওয়ার্ড স্নোডেনের সমর্থনে – এও ওয়েব দুনিয়া। দুনিয়া এগোচ্ছে আর আরও দ্রুত এগোচ্ছে ওয়েব দুনিয়া এই গতিকেই ধরার চেষ্টাই করব এই লেখাতে। লেখার থেকেও অনেক বেশি এটা আড্ডার বিষয়আড্ডার সুবিধা হল চট করে সবাইকে একই বোঝাপড়াতে নিয়ে আসা যায়। এই বিষয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে সেটা একটা বিশেষ দরকার। সাধারণভাবে পশ্চিমবঙ্গে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী খুব বেশি নয় মাত্র ১০%। আমি এরকম বহু মানুষকেই চিনি যারা নিজের নিজের ক্ষেত্রে বিশিষ্টতার পরিচয় রাখেন কিন্তু ইন্টারনেট আসলেই কেমন জড়সড় হয়ে যান সোজা কথায় কম্পিউটার নিয়ে তাঁর আর অন্য যেকোনো সাধারণ মানুষের মধ্যে ভাবনার যেন কোনও পার্থক্য থাকেনা। একক মাত্রার পাঠকদের মধ্যে এরকম মানুষ নিশ্চিতভাবেই বিরল নয়। আবার অনেকেই আছেন যারা নিয়মিত খবর রাখেন – অনলাইনে মানে ওয়েব দুনিয়াতে ভালোভাবেই সক্রিয়। সবাইকে নিয়ে একটা জমাট আড্ডা না মারলে হবে না, তবুও দেখা যাক।
ইন্টারনেট আদতে একটা গণমাধ্যমযেমন ছাপাখানার হাত ধরে এলো সংবাদপত্র, টেলিভিশনের হাত ধরে এলো মিডিয়া তেমনই কম্পিউটারের হাত ধরে এলো ওয়েব দুনিয়া। অন্য মাধ্যমের সাথে এর দুটো বড় চরিত্রগত পার্থক্য আছে। প্রথমত, খবরের কাগজ বা চ্যানেল একমুখীযা বলবে তার কোনও পাল্টা কথা বলার সুযোগই নেই।কিন্তু ইন্টারনেটে যে কেউ যে কোনও বিষয়ে বা খবরে কথা বলতে পারে এবং বলেও। এই লিভিং কানেকশনের জন্য দর্শকের বা পাঠকের (নাকি ক্রেতার?) আগ্রহ বেড়ে যায়। লাইভ থাকা মানে এখন ঘটনার গতিপথের সাথে থেকে তাকে লক্ষ করতে করতে যাওয়া। চ্যানেল মিডিয়াতে লাইভ থাকা মানে চ্যানেলের ভাষ্যের সাথে লাইভ থাকা। কিন্তু যে সমস্ত বিষয়ে আমি আগ্রহী সে বিষয় আদৌ যদি চ্যানেলে নাই থাকে। শাহবাগ, সোনি সোরি, শর্মিলা চানু, পরমাণু বিদ্যুৎ বিরোধী আন্দোলন, কুডানকুলাম, পস্কো এমন হাজার ইস্যুর লিস্ট করা যাবে যাদের খবর কোনও প্রিন্ট বা টিভি মিডিয়াতে নিয়মিত আসেনা। অনেকগুলো অভ্যাসের মধ্যে মিডিয়ার তৈরি করা একটা অভ্যাস হল ইস্যুগুলোকে ভুলে যাওয়া নতুন ইস্যুতে ঝাঁপিয়ে পড়া। ইন্টারনেট কিন্তু মনে রাখতে সাহায্য করে। আজ, এই মুহূর্তে প্রায় টাটকা খবর পাওয়া যাবে যে কোনও ইস্যুতে। আরও পাওয়া যাবে যোগাযোগ করতে চাইলে তার রাস্তার সন্ধানও। এ সুযোগ আর কোনও মাধ্যম দেয়নি। আবার এই চটজলদি হাতে গরম আপডেটের উল্টো পিঠে রয়েছে গুজব। গরমা গরম আপডেটের কতটা যে সত্যি আর কতটা যে না বলা বা সরাসরি জোলো মিথ্যা তা যাচাই করে নেবার আগেই হাতে এসে যাচ্ছে পরের আপডেট। ফলাফল – গুজব নেটওয়ার্ক। মনে পড়ে সাইদিকে চাঁদে দেখা গেছে? সম্পাদকের কাঁচি গেল বটে কিন্তু দায়িত্ব না থাকায় আপডেটের ভিড়ে কোনও কোনও সময় সত্যি খোঁজা সত্যিই বড় কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।      
দুই, একটা বিরাট পার্থক্য – প্রকাশনা বা মিডিয়ার তুলনায় এর খরচ। কোনও একটি বিষয় পুস্তিকা আকারে ছেপে বিলি করতে যা সময় এবং অর্থ দরকার তার তার এক ভগ্নাংশ খরচ করে, বিষয়টা নিয়ে ইন্টারনেটে একটা ব্লগ আকারে লিখে ছড়িয়ে দেওয়া যায়। শুধুমাত্র ভাবনা আর সময় এবং পরিশ্রম এটুকু থাকলেই যে কেউ ইন্টারনেটে তার কথাটা চিৎকার করে বলতে পারবে। এ সুযোগ আর কোনও মিডিয়া দেয় না। একদম পরিষ্কারভাবে – এক পয়সা খরচ না করে আপনি নিজে একটা মিডিয়া হাউস খুলে ফেলতে পারেন এ সুযোগও কিন্তু আর কোনও মাধ্যম দেয়নি।
এসব স্বত্বেও পশ্চিমবঙ্গে বসে এখনো ইন্টারনেট পুরোপুরি সফল নয়। যে কারনে ওয়েব দুনিয়াতে পলিটিকাল অ্যাকটিভিজমের কথা এখনো গল্পের মতই অনেকটা শোনায়। ২০১১র ২৫শে জানুয়ারিতে ইজিপ্টের বসন্তের পর সেখানে ২০ লাখেরও বেশি মানুষ ফেসবুকে তাদের অ্যাকাউন্ট খুলেছিলেন। তাদেরই একজন বলেছিলেন “প্রযুক্তি শক্তি ধরে। ওয়েব দুনিয়া কথা বলতে দেয়... ফেসবুকে থাকা আমাদের প্রত্যেকের কর্তব্য”।
অনলাইন অ্যাকটিভিজম মূলত দুরকম ভাবে ব্যবহার হয় – আর্থিক এবং রাজনৈতিক। কোনও একটি ইস্যুতে টাকা তোলার দরকার হলে অনলাইনে দ্রুত টাকা তোলা সম্ভব। সাম্প্রতিককালে কুডানকুলাম, কামদুনির ঘটনা, উত্তরাখণ্ডের বিপর্যয় ইত্যাদি বেশ কয়েকটি ইস্যুতে উদ্যোগ নিয়ে কয়েকজন মানুষ দ্রুত টাকা তুলে দিয়েছেন। টাকা তোলার কাজে ইন্টারনেটের বিপুল শক্তির প্রকাশ আজকের না। সেই ১৯৯৯ সালে ব্রিটেনে IR35 ট্যাক্সের প্রতিবাদে চাঁদা উঠেছিল 500,000 পাউন্ড। রাজনৈতিকভাবে নিষিদ্ধ সংগঠনগুলিকে আর্থিক সাহায্য করারও সহজ রাস্তা ইন্টারনেট।
রাজনৈতিকভাবে অনলাইন অ্যাকটিভিজম বিভিন্নভাবে করা হয়।
কমিউনিটি তৈরি করা – সামাজিক কোনও বিষয়ে নিজস্ব মতামত প্রতিষ্ঠা করার বা কমপক্ষে তুলে ধরতে হলেও প্রথমেই লাগবে আমার সম মনস্ক মানুষদের। যেমন আমি চাই ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান এক হোক – এমন বিচিত্র ভাবনা আর কেউ ভাবছে কি? কোথায় খুঁজব? রাস্তায়? না, প্রথমে খুঁজে দেখতে হবে এমনটা আর কেউ ভাবছে কিনা তারপর দরকার হলে নিজেকেই এমন একটা কমিউনিটি মানে ফেসবুকে একটা গ্রুপ খুলে তাতে লোকজনকে ডাকতে হবে। এতে করে অন্তত গোটা পৃথিবীতে যে কেউ এরকম ভাবুক তার সাথে আমার দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। বড় বড় রাজনৈতিক পার্টিগুলিরও কমিউনিটি আছে। সে সব কমিউনিটিগুলো সবগুলো আবার অফিশিয়াল না যেমন সিপিএমের কমিউনিটি মানে পার্টি অ্যাকাউন্ট অনেক সময় ব্যাক্তিগত নামে থাকে তেমন অনেক সিপিএম, টিএমসি ফেসবুক কমিউনিটিও অন্যনামে থাকে। তবে ভারতে এবিষয়ে সবচেয়ে এগিয়ে শ্রীল শ্রীযুক্ত নরেন্দ্র মোদি। নরেন্দ্র মোদি বিগত দুবছর ধরে একটু একটু করে তৈরি করছেন এক মোদি কমিউনিটি। ভারতে ইন্টারনেটে ব্র্যান্ড মোদির মার্কেটিং খুবই শক্তিশালীএক সমীক্ষা অনুসারে, ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ১৬০টি আসনের ফলাফলে ইন্টারনেট প্রভাব ফেলবে। প্রত্যক্ষভাবে এই ১৬০টি আসন আর পরোক্ষভাবে আরও অনেক ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন নরেন্দ্র মোদি একদম সু-পরিকল্পিতভাবেএর উল্টো দিকে রাহুল গান্ধি এখনো নিতান্তই হামাগুড়ি দিয়ে চলেছেন। যাই হোক, কমিউনিটি কিন্তু সে সমস্ত মানুষগুলোকে কাছে এনে দেয় যারা কোনোদিনও হয়তো কাছে আসতে পারত না। ইকো-ফেমিনিজম, গ্লোবাল ওয়ার্মিং, ভাষা, জাতিসত্তা নিয়ে কমিউনিটিতে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে থাকা মানুষগুলো কথা বলতে পারছে। এর একটা উল্টো দিকও আছে সে কথাও আসবে।      
চাপ সৃষ্টি – একটা ভালো লিভিং কমিউনিটি বিভিন্ন উপায়ে সরকারের বা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ইন্টারনেটে গণস্বাক্ষর এরকমই একটি উপায়। ই-পিটিশনে কাজ হয়। ইরানে পাথর ছুড়ে মারার কথা ছিল আস্থিয়ানিকে। আটকে দিয়েছিল ইন্টারনেট থেকে তৈরি হওয়া চাপ। অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সরকারিভাবে ফান্ডেড ওয়েবসাইট আছে চাপ সৃষ্টির জন্য – Change.orgনিন্দুকেরা বলে এ হলো আমেরিকার বড় দালাল। Change.org আমেরিকাতে বেশ জনপ্রিয়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে ছাত্ররা Change.orgতে পিটিশনের মাধ্যমে বেশ কিছু দাবি আদায় করতে পেরেছে। চাপ সৃষ্টির আর একটি কৌশল হল কমেন্ট করা। যে কথা আমার পছন্দ না সে কথায় বেশ দুকথা শুনিয়ে দেওয়া যায় কমেন্ট করে। এতে করে মুল বক্তার ওপর চাপ তৈরি হয় কথার জবাব দেওয়ার। জবাব না দিলে হ্যাঁটা হয়ে যাওয়ার চাপ থাকে। পাবলিক অনেকসময় নিজে কমেন্ট করে না কিন্তু পোস্টটা অর্থাৎ ঘটনাটা ফলো করে। চাপ তৈরির আরও অনেক রাস্তা আছে সব এখানে বলে ওঠা সম্ভব না।
চাপ সৃষ্টির পরের বা আরও পরিণত ধাপ হল সংগঠিত করা ওয়েব নয় বাস্তব দুনিয়ায়। এইখানেই অধিকাংশ ফেসবুক বিপ্লব দেহত্যাগ করেন শুধু এখানে নয় সমস্ত দেশেই। বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, মানুষ বিপ্লবী কথাবার্তা বলছে, ইস্যুগুলোতে একমত কিন্তু মিটিং ডাকলে বা মিছিল বা সভাতে লোক তেমন হচ্ছেনা। বাস্তব জগত, সংসার, নানা কাজ, নিজের ভালো লাগা সবটা মিলিয়ে মানুষ ফেসবুকে যতটা বিপ্লবী বাস্তবে ততটা নয়। যে কারণে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় গোটা মাস ধরে বিশাল জমায়েতের পর মে মাসে এসে মানব বন্ধনে শাহবাগ চত্বরে ৫০টা লোকও হচ্ছেনা। পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এত বড় আকারে না হলেও সর্বভারতীয় বা আন্তর্জাতিক নানা বিষয়ে দেখা গেছে লোকে ফেসবুকে আছে কিন্তু মিটিঙে নেই! এসবের মধ্যে কিন্তু বিরামহীনভাবে কাজ করে চলেছে কর্পোরেট, মিডিয়া, রাজনৈতিক দল আর ফ্যাসিস্ট মৌলবাদের রাজনীতিওরা হতোদ্যম হয় না। ওরা মতামত তৈরি করতে চায় গেলাতেও চায়। তাই যখন দরকার যেমন কামদুনির ঘটনা নিয়ে শঙ্খ ঘোষের নেতৃত্বে মিছিল – সেটা নিয়ে এরা মাঠে নেমে পড়বে কিন্তু এডওয়ার্ড স্নোডেনের নামটাও বাঙালি জানবে না ঠিকঠাক-ভাবে
কথাটা অনেককেই ভাবাচ্ছে। কেন এমন হয়? এর উত্তর অনেকটাই আছে ইন্টারনেটের ফর্মের মধ্যে। মনোবিদরা বলছেন ইন্টারনেট আসলে একটু কমন চলতি পপুলার মুভমেন্টের জন্য ভালো। মানে মূলত যে ইস্যুতে একটা এসপার ওসপার হয়ে যাবে মাঝামাঝি নেই আবার তার আগের বা পরের ঘটনার পরম্পরার সাথে যোগাযোগ রাখার দায় নেই। একরমভাবে এহলো এই প্রজন্মের মানসিকতার সার্থক প্রতিচ্ছবি – No commitment যেমন দিল্লির নির্ভয়া, যেমন কামদুনি, যেমন শাহবাগ। প্রত্যেকটা ক্ষেত্রেই ব্যাপারটা এরকম যে আমি অত বুঝিনা দোষীদের ফাঁসি চাই – আর কিচ্ছুনা। এর ফলে একটা সমস্যা হয়, প্রত্যেকের মনেই অপর জনের প্রতি একটা অন্যরকম এক্সপেকটেশন তৈরি হয়। কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় একমত হলেও, আসলে মানুষগুলো একমত না বা একমতের পিছনে কাজ করছে অন্য কোনও ভাবনা। কোনও কোনও সময় দেখা যায় আসলে কোনও মেল শোভেনিস্ট আর ওম্যান শোভেনিস্ট দুজনেই একমত হয়ে বলছে দিল্লি কাণ্ডে অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই – আসলে কি কোনদিন তারা একমত হয়ে একসাথে দীর্ঘ একটা লড়াই ওয়েব দুনিয়ার বাইরের দুনিয়াতে লড়বে?   
ফিরে দেখা – ইজিপ্ট
ইন্টারনেটের মাধ্যমে পলিটিকাল অ্যাকটিভিজম চলছে সেই ৯০ এর দশক থেকে। কিন্তু তাদিয়ে বিশেষ করে পিছিয়ে পড়া তৃতীয় বিশ্বের মানুষদের কথা জোরালোভাবে উঠে এলো প্রথম আরব দুনিয়াতে তিউনিসিয়ায়১৮ই ডিসেম্বর ২০১০ সালে শুরু হয় তিউনিসিয়ার বসন্তের। ২৩বছর একটানা রাজত্ব করার পর ২০১১র জানুয়ারি মাসে গদি ছাড়তে বাধ্য হন বেন আলি। পালিয়ে যান সৌদি আরবে। তিউনিসিয়ার বসন্তের ফুল ফুটিয়েছিল অ-পরিকল্পিতভাবে হঠাৎ ফেটে যাওয়া আবেগ ফেসবুকের মাধ্যমে। কিন্তু তার পিছনে কোনও পরিকল্পনা কাজ করেনি। তিউনিসিয়ার থেকে শিক্ষা নিয়ে তৈরি হল ইজিপ্ট; পরিকল্পনা-মাফিক৯০এর দশক থেকেই ইজিপ্টে বেসরকারি মিডিয়ার প্রবেশ। বেসরকারি মিডিয়ার আপাত বিপ্লবী সরকারবিরোধী ভাবমূর্তি আসলে ছিল একটা মুখোশ। মিডিয়া কোনোদিনই সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে একনায়কতন্ত্রকে চ্যালেঞ্জ জানাতে যায়নি। দারিদ্র, অশিক্ষা, ইন্টারনেট ব্যবহারের অসুবিধা এসব সত্ত্বেও ইন্টারনেট ক্রমশ শক্তিশালী হয়ে উঠছিল – মেইন স্ট্রীম মিডিয়া থেকে অনেক এগিয়ে থেকে বলছিল রাস্তার কথা, বাস্তব। রাষ্ট্র টের পেয়েছিল – সে বুঝেছিল বিপদটা কোথায়। কিন্তু উপায় ছিল না। Economic growth এর স্বার্থেই তাকে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটাতে হয়েছিল। ২০১১ সালে অক্সফোর্ডের প্রকাশিত বইতে P.N Howard বলছেন “ইন্টারনেট নতুন ধরনের কমিউনিকেশন মাধ্যমের জন্ম দিয়েছে, এগুলি আর্থিকভাবে সচ্ছল উচ্চ মধ্যবিত্ত, শহুরে নাগরিক যারা শিক্ষিত এলিট তারা ব্যবহার করেন। এই এলিটদের মতামত authoritarian rule অর্থাৎ একনায়কতন্ত্র তৈরিও করতে পারে আবার তাকে ধ্বংসও করতে পারে”। Howard বলছেন সাইবার অ্যাকটিভিজমের উদ্দেশ্য হলো বৌদ্ধিক (intellectual) এবং মানসিকভাবে (emotional) দাগ কাটে এমন লেখা, ছবি, ভিডিয়ো, গান, সিনেমা প্রচার করা। এই সমস্তকিছুর মধ্য দিয়ে বলা হয় অন্যায়ের গল্প, ফিরে দেখা হয় ইতিহাসকে তার সরকারি ভাষ্যকে বাদ দিয়ে এবং নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক লক্ষ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। এমনটাই ঘটেছিল ইজিপ্টে। ২৫শে জানুয়ারির পরিকল্পনা করা হয়েছিল অনেক আগের থেকেতিউনিসিয়া আর ইরানের থেকে শিক্ষা নিয়ে ফেসবুক আর টুইটারে পরিকল্পনা করা হয়েছিল অনেক আগে থেকে ভেবে চিন্তে। ফেসবুক এবং টুইটার দুটি দুধরনের সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট। ফেসবুকে চট করে শেয়ার করে চেনা জানা লোকজনকে অনেক দ্রুত ইনভলভ করে নেওয়া যায়। আবার টুইটারে কোনও এক বিশেষ বিষয় নিয়ে যেমন ইজিপ্টের ক্ষেত্রে ২৫শে জানুয়ারি ২০১১ - #jan25, চট করে দেখে নেওয়া যায় কি খবর আছে সে যেই বলুক না কেন। এসবের ফলাফল ২৫শে জানুয়ারি। ২৮শে জানুয়ারি সরকার বন্ধ করে দিল ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিসেবা। কিন্তু ফল হল সম্পূর্ণ বিপরীত। বাড়ি থেকে যোগাযোগ করতে না পেরে লোকজন বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে পড়ল রাস্তায়। অনেকে হাঁটা লাগাল তাহিরির স্কোয়ারের দিকে। এদের দেখাদেখি বহু মানুষ যারা কখনো ফেসবুক, টুইটারতো বাদ দিন, ইন্টারনেট পর্যন্ত দেখেননি তারাও যোগ দিলেন। ওয়েব নয় বাস্তব দুনিয়ায় সংগঠিত রূপ পেল প্রতিবাদের ভাষা। এই বিপ্লবে সামিল হলো গুগুল এবং টুইটারের মত বড় বড় ইন্টারনেট হোমরা চোমরারাও। ল্যান্ডলাইন ব্যাবহার করে, ইন্টারন্যাশনাল কল করে তার মাধ্যমে চলতে লাগল টুইটারে খবর দেয়া নেয়া। এমনকি যখন মিছিল চলছে তখন তার রাস্তা, কোন পথ দিয়ে এগোলে ভালো হবে, পুলিশের বাধা কম আসবে সেসবও গুগুল ম্যাপে দেখে পৌঁছে দেয়া হল। শেষ পর্যন্ত যা হলো তা এখন সবারই জানা। ডঃ Sahar Khamisএবং Katherine Vaughn তাদের গবেষণায় বলছেন, ইজিপ্টে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়াতেই ইন্টারনেট বিপ্লব সফল হয়ে গেল!
পাশের বাড়ি শাহবাগ
২০১৩র গোটা মাসটা জুড়ে বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে থাকল শাহবাগ চত্বরকে ঘিরে। ওয়েব দুনিয়া শাহবাগের গণজাগরণে এক বিরাট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। ব্লগার শব্দটা এপার বাংলার বাঙালিদের কাছে পরিচিত হয়ে উঠেছিল। ব্লগাররা বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম। এরা যেন কি রকম। কাউকে মানতে চায়না – মোল্লা, পাদ্রী, রাজনৈতিক নেতা কাউকে না। কিন্তু কে শুনছে এদের কথা! ওরকম কিছু লোকতো সব সময়ই থাকে তাদের কথা লোকে জানতেও পারেনা। কেননা, কাগজে এদের কথা কেউ ছাপবে না, টিভিতে টক শোতে মকশো করতে এদের কেউ ডাকবে না। বলুক না যা খুশি কে শুনছে, শোনার সুযোগ পেলে তবে না। কিন্তু ওদের অন্য মতলব ছিল। কম্পিউটার বিশ্বকে একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। কিন্তু সেতো ইংরাজিতে – সবার জন্য না – গুটিকয় ভালো আর ওপরতলার কিছু ছেলেমেয়েদের জন্য। ওরা কম্পিউটারকে বাংলা শিখাল। এযেন আবার এক ভাষা আন্দোলন। এবার ধীরে নিঃশব্দে কিন্তু অনেক গভীরে। ধীরে ধীরে আড়াই লাখ ছেলে মেয়ে কথা বলতে শুরু করল – লিখতে শুরু করল ব্লগশুরু করল প্রশ্ন করতে। ওরা অনেক প্রশ্ন তুলল যা কেউ কখনো ভাবেনি বা বলার সাহস দেখাতে পারেনি। ওরা প্রশ্ন করল – ভারতের আর কত ঋণ বাকি আছে আজও, ৪২ বছর পরও। কেন আজও আমেরিকা আর ভারতের দাদাগিরি মেনে চলতে হবে আমাদের? আর ইতিহাস – সেটা ঠিকঠাক লেখা হয়েছে তো? বাংলার ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস আর সবশেষে বাংলাদেশের ইতিহাস। তাই ওরা আবার কবর খুঁড়ে বার করল সেই সব ইতিহাস। ওরা শুনতে পেল কবরে চাপা পড়া আর্তনাদ আর না পাওয়া বিচারের দাবী। বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশ এবং বাঙালির ইতিহাস নিয়ে বিপুল কাজ হয়েছে ব্লগে। ধর্মকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করে এমনকি বিদ্রূপ করে শ্লীল অশ্লীল সবরকম লেখা উঠে এসেছে। এ-জিনিস ভাবা যেতনা ইন্টারনেট না থাকলে। বাংলাদেশের কোনও ছাপাখানা ছাপতে পারত না “আল্লা অপেক্ষা সেক্স উত্তম” বা “ইসলামি ইতরামি” শীর্ষক প্রবন্ধ। শাহবাগের  আন্দোলনকে ধর্মবিরোধিতা কতটা সাহায্য করেছে আর কতটা পিছনে টেনে ধরেছে সে বিষয়ে আলোচনা এখানে করা সম্ভব নয়। শুধু এইটুকুই নির্দ্ধিধায় বলা যায় যে ফেসবুক আর ব্লগ না থাকলে ২০১৩র বাংলাদেশে শাহবাগ ঘটত না। শাহবাগের সাফল্যও কিন্তু চোখে পড়ল যখন ইন্টারনেট বা ফেসবুক সম্পর্কে একেবারে অজ্ঞ মানুষগুলোও চলে এসেছিল শাহবাগ চত্বরে অর্থাৎ ওয়েব থেকে আন্দোলন নেমে এসেছিল মাটির দুনিয়াতে।
উইকিলিকস এবং জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ
২০০৬ সালে গোটা পৃথিবীতে সাড়া ফেলে দিয়েছিল একটি ওয়েবসাইট – উইকিলিকস। উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জউইকিলিকস ফাঁস করে দেয় আমেরিকার ইরাক আর আফগানিস্তানের যুদ্ধের গোপন তারবার্তাআমলাদের কথা চালাচালি। এইসব কথাগুলো ভালো করে পড়লেই বোঝা যায় হাতির খাবার দাঁত আর দেখানোর দাঁত আলাদা। আমেরিকান শাসক তার পেটোয়া মিডিয়ার মাধ্যমে যে যুক্তি তার দেশের মানুষকে এবং গোটা বিশ্বকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেছে এইসব যুদ্ধের সমর্থনে তা নেহাতই কথার কথা। একদম ওপরতলার আমলারা জানত তাদের কাজ সোজাসুজিভাবে যুদ্ধের সাথে জড়িত পুঁজির ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করা। উইকিলিকস সাংবাদিকতার ইতিহাসে এক বিপ্লবের মর্যাদা লাভ করেছে। এও সম্ভব ছিলনা ওয়েব দুনিয়া না থাকলে। আজ, এই মুহূর্তে আমি আপনি যে কেউ চলে যেতে পারি উইকিলিকস-এ। রোজই কিছুনা কিছু হাঁড়ি ভাঙছে একেবারে মেছো হাটের মাঝখানে। অ্যাসাঞ্জকে নিয়ে মাথাব্যথার অন্ত নেই। কটা নারীঘটিত কেলেঙ্কারি কি কি এইসব। কিন্তু আসল গল্পটা সবাই জানে, বোঝে। আর তাই অ্যাসাঞ্জ এখন লন্ডনে Diplomatic Asylum এ। অ্যাসাঞ্জকে ধরেও ধরা যাচ্ছেনা – কি করে হবে? আমেরিকা, যে গোটা বিশ্বকে গণতন্ত্রের সহজ পাঠ পড়ায় সে কি নিজে গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে? কথাটা পরিষ্কার হয়ে যাবে গোটা বিশ্বের কাছে বিশেষ করে সেই এলিটদের কাছে যাদের গণতন্ত্র বেচে করেকম্মে খেতে হয়।  
এডওয়ার্ড স্নোডেন – আমেরিকার প্রিজম
ওরা মানে মার্কিন শাসকরা পাগল হয়ে গেছে। এছাড়া আর কীইবা বলা যায়? তা নয়তো এরকম কেউ ভাবে? ১১০ থেকে ১২০ কোটি মানুষ ফেসবুক, গুগুল ব্যবহার করেন কথা বলার জন্য। তার মধ্যে বেশিরভাগটাই ব্যক্তিগত রাজনীতির কোনও নামগন্ধও নেই। কিন্তু ওবামা প্রশাসন চাইছে প্রতিনিয়ত এইসব মানুষরা কে কি ভাবছে, কি করছে যেটা তারা আবার শেয়ার করছে অন্যদের সাথে তার সবটাকে আতস-কাঁচের তলায় খুঁটিয়ে দেখতে – যদি তার মধ্যে কোনও রাষ্ট্রদ্রোহিতার বীজ থাকে। প্রিজম হলো CIAর একটা প্রকল্প। মার্কিন প্রশাসনের বন্ধু (নাকি মালিক?) বড় কর্পোরেট হাউস ফেসবুক, গুগুল বাড়িয়ে দিল সাহায্যের হাত। সমস্ত কথাবার্তা, অকিঞ্চিৎকর বা বিপ্লবী চালান হয়ে গেল প্রিজমে। সেখানে খুঁটিয়ে দেখা হল কোথায়, কার মস্তিষ্কের কত নম্বর কোষে লুকিয়ে আছে বিদ্রোহের বীজ। এখানে, এই বাংলায় প্রশ্ন উঠল “আমরা কি ঢুকে পড়েছি এক অভূতপূর্ব সাইবার যুদ্ধক্ষেত্রে, যেখানে সম্ভবত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতা ও দখলদারির নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে সাইবার দুনিয়ার অন্দরে?” এর পরেই প্রশ্ন “আর সেখানেই কলকাঠি নেড়ে অচল করে দেওয়া যেতে পারে একটি অতি শক্তিধর রাষ্ট্রের মস্তানিকেও?” এরকমটা ওরা ভাবেনি। এডওয়ার্ড স্নোডেন বা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জরা আফগানিস্তান বা পাকিস্তানের তালিবান না। ওরা মোটা টাকা পেত, চাইলে আরও টাকা পেতে পারত। কিন্তু কিছুই না ওরা সিস্টেমে থেকে একসময় হঠাৎই সিস্টেমের বাইরে চলে যাচ্ছে। আবার এইসব প্রযুক্তি জানা লোকজন ছাড়া চলবেও না। ইন্টারনেট বন্ধ করা যাবে না। আজকের দিনে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে গেলে বিশ্ব বাণিজ্য (পড়ুন কর্পোরেট হাউস) মুখ থুবড়ে পড়বে। ৭ দিন ইন্টারনেট বন্ধের খেসারত হিসাবে ইজিপ্টকে গুনতে হয়েছে ৯ কোটি ডলার। তবুও-তো ইজিপ্টের সে অর্থে ইন্টারনেটের বাণিজ্যিক নির্ভরতা একেবারেই কম। আমেরিকা বা ভারতের ক্ষেত্রে হিসাবটা করলে ওবামাবাবুর এই জোয়ান বয়সেই একটা হার্ট অ্যাটাক হয়ে যেতে পারে।
তাহলে খারাইলোটা কি?
একদিকে ইন্টারনেটের উপর পুঁজির এই নির্ভরতা, অন্যদিকে পণ্য-সংস্কৃতি আর তাকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পণ্য-রাজনিতীর যাঁতাকল আর শান্তি দিতে পারছে না এমনকি সমাজের উপরতলার এলিটদেরও। এদের মধ্য থেকেই তৈরি হচ্ছে হ্যাকটিভিস্ট। হ্যাকটিভিস্টরা কিন্তু কমিউনিস্ট বিপ্লবী নয়। এরা বরং নৈরাজ্যবাদীদের কাছাকাছি। চোরাগোপ্তা আক্রমণ মানে হ্যাকিঙের মাধ্যমে সিস্টেমকে অকেজো করে দেওয়া – অন্তর্ঘাতের অভিলাষ। এই ভাবনার উৎস কোথায়? মানবতা-বোধ? পণ্য-সংস্কৃতির দেউলিয়াপন? নাগরিক ক্লান্তি? উদ্দেশ্যহীনতা? Identity Crisis – অস্তিত্বের সংকট? হয়তো সব মিলিয়েই। রাষ্ট্র কখনো প্রযুক্তির সামনে এত অসহায় বোধ করেনি। তাই কাগুজে বাঘ থেকে আসল রয়াল বেঙ্গল টাইগার হয়ে ওঠার পথে তার অস্ত্র surveillance – নজরদারি। ওবামাবাবুর মতনই এদেশের মনমোহন-চিদাম্বরমরাও শুরু করেছেন একই পথে হাঁটতে। আধার কার্ড মনে পড়ছে? Biometric id card – অর্থাৎ নজরদারির চূড়ান্ত এক স্বপ্ন। কিন্তু আমেরিকাতে বসে যে পরিকল্পনা ওবামাবাবুরা করতে পারেন, এখানে ভারতে তার ভবিষ্যৎ একেবারেই অত উজ্জ্বল নয়। শহরে যেখানে রাষ্ট্র তার সমস্ত পরিষেবা এবং নজরদারি নিয়ে উপস্থিত সেই সব জায়গা বাদ দিলে পড়ে থাকে এক বিস্তীর্ণ অঞ্চল – গ্রাম যেখানে কলকাতা থেকে সোয়া একঘণ্টার ট্রেন সফর করলেই রাষ্ট্র প্রায় ভ্যানিশ হয়ে যায়। আলো নেই, স্কুল নেই, কলেজ নেই, পুলিশ চৌকি নেই – থাকে শুধু অন্ধকার আর মুখোমুখি বসিবার একা রাষ্ট্রীয় নজরদারি।
সাইবার অ্যাকটিভিজমের বা হ্যাকটিভিজমের সবচেয়ে বড় সমালোচনা হল এটা বড় বেশি এলিট শহুরে উচ্চ মধ্যবিত্ত শিক্ষিত নির্ভর আর তাই বাস্তব বর্জিত। সমালোচকরা বলেন ইন্টারনেটে যে মত ঝড় তুলছে বাস্তবে দেশের মাটিতে তার গ্রহণযোগ্যতা অনেক সময়ই নেই। কথাটা একেবারে ভুল নয়। শাহবাগ আন্দোলন ছাপ ফেলেছিল বাংলাদেশের শহরে – ঢাকা, চট্টগ্রাম, বগুড়া সেইসব জায়গাতে যেখানে শহুরে নাগরিক সমাজ আছে। হেফাজতের ঢাকা জমায়েত প্রমান করেছিল শাহবাগের গান গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছায়নিব্লগাররা ক্রমশ নাস্তিক হয়ে আস্তে আস্তে একঘরে হয়ে শহরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। ইজিপ্টে ২৫শে জানুয়ারির পর যখন সংবিধান সংশোধন প্রশ্নে গণভোট হয়, তখনো ইন্টারনেটের মতের বিরুদ্ধে গিয়েছিল গণভোটের রায়। এসব আছে। কারন ওয়েব দুনিয়ার কথা এখনো পুরোপুরি আপামর জনসাধারণের কথা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু মোবাইলের ব্যবসা 2G, 3G, 4Gর ব্যবসা অনিবার্য করে তুলছে ইন্টারনেটের ব্যাবহার। মনে পড়ছে এয়ারটেলের বিজ্ঞাপন – এক রুপেয়ামে কারিনা কি ভিডিয়ো বা বাবাজির শান্তি? কোন দিকে যাবে রাষ্ট্র? কিচ্ছু করার নেই – প্রতিদিন বাড়ছে ওয়েব দুনিয়ার বিস্তার আর তার সাথেই বাড়ছে অন্তর্ঘাতের আকাঙ্ক্ষা আর সম্ভাবনা। এভাবেই চলবে অন্তত আরও কিছুদিন আমাদের এই বঙ্গে যতদিন না অন্তত ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা ২০% এর ওপরে যাচ্ছে। কিন্তু সময় আসছে এখানেও – একটা ইজিপ্ট, একটা শাহবাগ কিছু না হলে একটা স্নোডেন।
সাইবার অ্যাকটিভিজম বা হ্যাকটিভিজমের আর একটা বড় সমালোচনা হল এর কোনও নির্দিষ্ট দিশা বা রাজনীতি নেই। একথাটাও একরকম ঠিক। দলদাসরা সবখানেই আছে বড় কাগজে, চ্যানেল মিডিয়াতে বা ওয়েব দুনিয়াতে। কিন্তু তারা মুল শক্তি নয়। সাইবার অ্যাকটিভিজম বা হ্যাকটিভিজমের মুল শক্তি দল বিচ্ছিন্ন মানুষ। তাদের রাজনৈতিক চিন্তা ভাবনা আছে, অনেকের থেকে বেশিই আছে কিন্তু ঐক্যমত নেই। কেউ কেউ বলতে পারেন এর সমাধান একটা ঠিকঠাক কম্যুনিস্ট পার্টি। একথাটা বাজারে চালুও আছে কিন্তু অ্যাকটিভিস্টরা এর সমর্থনে খুব বেশি উজ্জীবিত এমনটা আদৌ নয়। ওয়েব দুনিয়া ভবিষ্যৎ রাজনিতীকে কোন দিশা দেখাবে সেকি শুধুই নৈরাজ্যের অন্ধকার না গণতন্ত্রের জয়গান তা শেষ বিচারে ঠিক করবেন মানুষই। ছোটো বেলায় শুনেছিলাম গণসংগীতের লাইন – ভুখা মানুষ বই ধর ওটা হাতিয়ার। সে কথাটাই আবার ঘুরে এলো দক্ষিণ আফ্রিকাতে – বস্তির ভুখা মানুষ হাতে তুলে নিলো ব্ল্যাকবেরি কারন ওটা হাতিয়ার!
গড ফাদার ছবির সেই বিখ্যাত ডায়লগ মনে পড়ে – “I am going to make you an offer you can’t refuse”. ওয়েব দুনিয়াও তাই। আপনি যাই করুন না কেন এই অফারকে রিফিউজ করতে পারবেন না। আপনার প্রতিটি গতিবিধি, ভাবনার নিয়ন্ত্রণ আস্তে আস্তে কিন্তু নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে এই ওয়েব দুনিয়াতে আর তাই বিক্ষোভে, বিপ্লবে বা শুধুই তোমাকে চাই বলতে গেলেও যেতে হবে সেই দুনিয়ায়। নতুন প্রজন্মের কাছে এ একেবারে স্বাভাবিক জলভাত। ইন্টারনেট না থাকলে এরা পাগল হয়ে যেতে পারে। ইজিপ্টে তাই হয়েছিল – ইন্টারনেট বন্ধ হওয়াতে মানুষ ভয় পেয়ে বেরিয়ে এসেছিল রাস্তায়। কিন্তু বয়স্কদের কাছে এ দুনিয়া এখনো ব্রাত্য। পুরনো একটা ফরাসি প্রবাদ মনে পড়ছে এ-লেখাটা শেষ করতে এসে – “শুধু যদি নতুন প্রজন্মের কাছে জ্ঞান থাকতো আর প্রবীণদের কাছে থাকতো একটু শক্তি” – কি হতো? জানিনা তবে ধারনা করতে পারি যদি কখনো এমন হয় তবে তা হবে এই দুনিয়াতেই আর তার সূত্রপাত হয়তো হবে ওয়েব দুনিয়া থেকেই।   

        

No comments:

Post a Comment