Wednesday, September 3, 2014

NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?

 এই লেখাটা রামপাল নিয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার চেষ্টায় NTPC তে ডেপুটেশনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ....

NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?
আমরা মোটামুটি ২৫ জন প্রিটোরিয়া স্ট্রীটের NTPC অফিসের সামনে জড়ো হই ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটে নাগাদ। জায়গাটা একটু নির্জন। থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রীট অঞ্চলে একটু অভিজাত এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই একটার পর একটা বড় সুদৃশ্য গাড়ির যাতায়াত, কিন্তু বাস বা পথচারী প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকি চায়ের দোকানও অনেকটা দূরে মোড়ের মাথায়। আমাদের সাথে ছিল ২৫টা প্ল্যাকার্ড। একটা ছবিতে ইআইএ রিপোর্ট ১১টা প্ল্যাকার্ডের আর লং মার্চের খবর, এবেলায় প্রকাশিত রিপোর্ট এইসব। কোনো প্ল্যাকার্ডেই কোনো সংগঠন বা ওই জাতীয় কিছুর উল্লেখ ছিল না। প্ল্যাকার্ডের ছবিগুলো একজন তুলেছে মেলে পেলেই শেয়ার করব। আমরা চটপট প্ল্যাকার্ডগুলো সাজিয়ে ফেলি NTPC র গেটের উল্টো দিকের ফুটে আর আশপাশের গেট ইত্যাদিতে। কোনো মাইক বা কিছু ছিল না, ছিল না কোনো শ্লোগান বা অযথা চিৎকার। গ্রুপের সবাই প্ল্যাকার্ডগুলো হাতে নিয়ে দেখছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এই সব। আমরা অপেক্ষা করছিলাম ১০৯ পাতা সই এর প্রিন্ট আউট নিয়ে পৌছানোর কথা দুজনের জন্য।
বেলা ৩.৩০ নাগাদ সই-এর প্রিন্ট আউট নিয়ে এলে আমাদের মধ্য থেকে ১০ জন মতো NTPCর অফিসে চার তলায় আস্তে আ্‌স্তে উঠে আসি। আমাদের লিড করছিলেন শান্তনুদা (শান্তনু চক্রবর্ত্তী) আর বঙ্কিমদা (বঙ্কিম দত্ত)। কাঁচের দরজা পেরিয়ে সিকিউরিটির কাছে গিয়ে আমরা জানালাম ডেপুটেশন দিতে এসেছি, কোনো পদস্থ অফিসারকে ডেকে দিতে। সিকিউরিটি বললেন DGM (HR) যিনি কলকাতা অফিসের হেড, নেই অতএব ডেপুটেশন নেওয়া যাবে না। আমরা বলএটা কী লাম ওনার অনুপস্থিতিতে যিনি ইন-চার্জ তাকে ডেকে দিতে। এর উত্তরে শুনলাম কেউই নাকি নেই! একটা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের দিনে এটা কি সম্ভব? এই কথাটা আমরা তুললাম। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মচারি আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন আমরা কে? কী চাই, ইত্যাদি। কথায় বুঝলাম এরা Personnel department এর লোক ভালোই খবর রাখে কেননা ওরা রামপাল বলছিল না, বলছিল খুলনা প্রজেক্ট এবং আরো এমন কিছু কথা যা মোটামুটি দুই বাংলার রামপাল সংক্রান্ত ঘটনার স্টাডি না থাকলে বলা যায় না। যাই হোক পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এদের কোনো কথা শোনার মুড নেই।
শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিক করলাম ডেপুটেশনটা কাউন্টারে জমা করে দেব। তাতে সবাই মানে NTPCর সবাই রাজি হল। আমরা বললাম একটা প্রাপ্তি স্বীকার দিন। এইখান থেকেই ঘটনা এক নতুন মোড় নেয়। শুরুটা হল প্রতীপকে দিয়ে। ও সিকিউরিটিকে বলেছিল আরে ছাড়ো না নিয়ে নাও ঝামেলা হাঠাওএই কথাতে হঠাৎ ওখানকার একজন বলশালী স্টাফ খেপে যায়; প্রায় মারতে আসে, প্রতীপকে বলে বেরিয়ে যেতে এবং আক্রমনাত্মকভাবে চিৎকার জুড়ে দেয়। প্রতীপ ক্ষমা চায়, ওর কথা উইথড্র করে, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ওকে প্রায় ফুটবলে যেভাবে ডিফেন্ডাররা গায়ে হাত না দিয়েও চাপতে থাকে সেভাবে ঠেলে কাঁচের দরজার কাছে নিয়ে যান তিনি। এইসবের মধ্যে একটু হট্টগোল শুরু হয়ে যায়, দু-একটা চিৎকার চ্যাচ্যামেচি হয়। অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে সেটা ভালো ঠেকছিল না। আমি আমার মোবাইলের ক্যামেরা অন করার চেষ্টা করি আর বলার চেষ্টা করি আপনি যা বলছেন অন রেকর্ড বলুন। কিন্তু আমি আমার কথা শেষ করার আগেই একজন বেশ শক্তিশালী কর্মচারী আমার উপরে, বাস্তবত, হাতে পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেলে দেবার চেষ্টা করে ও আমাকে শারীরীকভাবে আদর করবার নানা চেষ্টা করতে থাকে। বাকিদের কাছে ঘটনাটা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না এমনকি সিনিয়ররাও কেমন হতভম্ব হয়ে যান। আমাকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। আমরা সবাই গেটের বাইরে বেরিয়ে আসি। মেসেজটা পরিষ্কার আমাদের কথা শুনবেও না আর ডেপুটেশনও নেবেনা। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর আমরা বেরিয়ে যাই। ঠিক হয় সোমবার এটা কুরিয়ার করে দেওয়া হবে।


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কাজ তৎক্ষনাৎ করা যেত ১. মিডিয়াতে গলা ফাটানো যেত আর ২. পুলিশে কমপ্লেন করা যেত। দুটোর কোনোটাই করিনি তার কারণগুলো এইরকম- ১. NTPCর কর্মচারী বা তাদের কোনো ইউনিয়ন আমাদের শত্রু নয়। এসব করলে ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ত। ২. আমাদের কোনো ছাতা নেই, কোনো সংগঠন নেই এমনকি সবাই সবাইকে ভালো মতো চিনিও না। NTPCর সাথে লড়াই মুখের কথা না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না বা এখনো নেই। ৩. এই ঘটনাটাকে বড় ইস্যু করলে রামপাল যেটা আরো অনেক অনেক বড় বিপর্যয়, সেটা পিছনে চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় আস্তে আস্তে রামপাল নিয়ে মানুষ কথা বলতে শুরু করেছে সেটা হয়তো ধাক্কা খেত। এখানে এমন মানুষ আছেন যারা এই ঘটনার সাক্ষী। ভাবছিলাম, শহর কলকাতার ইংরাজি বলা ভদ্রলোকের সাথে যদি NTPC এইভাবে কথাবার্তা বলেন তাহলে সুন্দরবনের মানুষগুলির সাথে তারা কী করেন? জানতে ইচ্ছা রইল আর রামপাল নিয়ে লড়াই যেটা হয়তো এই ঘটনাটা না ঘটলে আর বেশি এগোতাম না সেটা আমি জারি রাখব।

No comments:

Post a Comment