Wednesday, September 3, 2014

দুই বাংলার সুন্দরবন দুই রাষ্ট্রের চক্রান্ত

 এই লেখাটা রামপাল নিয়ে ভারত মানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিবাদ সংগঠিত করার চেষ্টায় এন.টি.পি.সি তে ডেপুটেশনের সময় লিফলেটের আকারে লেখা .. সময় অক্টোবর ২০১৩

দুই বাংলার সুন্দরবন দুই রাষ্ট্রের চক্রান্ত


সুন্দরবন দুই বাংলা জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ৬০% বাংলাদেশে আর ৪০% পশ্চিমবঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই এপারে যেসব মাছ আসে তার অনেকাংশেরই জন্ম হয় বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এভাবেই চলছে। গত ২০০ বছরে সভ্যতার অগ্রগতির কোপ গিয়ে পড়েছে সুন্দরবনের উপরে। প্রায় ৬৬% বনভূমি আজ লুপ্ত। এই আক্রান্ত বনভূমির উপর আজ নতুন আক্রমণ বাংলাদেশ সুন্দরবন ঘোষিত বনভূমির মাত্র ১৪ কিমি দূরে ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে  তৈরি হতে চলেছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এক বিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুরো পরিকল্পনা অনুসারে অধিগৃহীত ১৮৩৭ একর জমিতে দুই ধাপে তৈরি হবে মোট ২৬৪০মেগাওয়াট উৎপন্ন কারি তাপবিদ্যুৎ-কেন্দ্রপ্রথম ধাপে তৈরি হবে দুটি ইউনিট ৬৬০ মেঃওঃ ক্ষমতার। সময় ধার্য করা হয়েছে সাড়ে চার বছর। পুরো কাজটি হবে ভারতের NTPC  এবং বাংলাদেশের BPDB র যৌথ উদ্যোগে। ২০শে এপ্রিল, ২০১৩ সালে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে ঢাকাতে। সরকারি আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্রকল্পের জন্য যে কোনও রকম কাজ শুরু হবার আগেই পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) ও তার ছাড়পত্র পাওয়া আবশ্যিক। এক্ষেত্রে কিন্তু প্রকল্পের স্থান চূড়ান্ত করণ ও জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ার পর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ বা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট(ইআইএ) করা ও তার জন্য জনসাধারণের কাছে মতামত চাওয়া হয়! এই তামাশার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ, অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলিকে হয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে নয়তো বিভ্রান্তিকর উত্তর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ পথে নেমেছেন। জাতীয় কমিটি (NCBD) র নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক বিশাল লং মার্চে যোগ দিতে চলেছেন ১০হাজারেরও বেশি মানুষ। এই মিছিল মনে করিয়ে দিচ্ছে ফুলবাড়ির কথা। সেদিনের সেই লং মার্চ আটকে দিয়েছিল ফুলবাড়ি প্রকল্পকে। এই মিছিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে কিনা ইতিহাস তার জবাব দেবে। ৫লাখ মানুষের রুটি রুজি, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নেড়া বনভূমি, ৬৩,৬৩৮টন ধান, ৫৭৮৭ মেট্রিক টন মাছ এবং নগদ বার্ষিক ৫০০০ কোটি টাকার সম্পদের বিনময়ে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।

এদিকে এপার বাংলাতেও গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। এপার বাংলার উদ্যোগে, ইন্টারনেটে একটি অনলাইন পিটিশন করা হয়েছে। সই সংগ্রহ করা হচ্ছে ইন্টারনেটের বাইরেও। অনলাইন ও সংগৃহীত সই সহ সম্পূর্ণ পিটিশনটি দেওয়া হবে NTPC র কলকাতা অফিসে ২৭শে সেপ্টেম্বর। বড় মিডিয়ার চুপ করে থাকার কারনে বেশিরভাগ মানুষই এই প্রকল্পের কথা জানেনই না। আশার কথা, এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকা। রামপালের খবর পৌঁছে যাচ্ছে দুই বাংলার ঘরে ঘরে। মানুষ এগিয়ে আসছেন এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত আনুমানিক ৫০০০ মানুষের সই করা প্রতিবাদপত্র পৌঁছে যাবে পশ্চিমবঙ্গে NTPC র দপ্তরে আর একই সময় ঢাকা থেকে সুন্দরবণে গিয়ে পৌছাবে লং মার্চ। একটাই কথা দুই দেশের সরকারকে সবাই বলতে চাইছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবণের কোনো বিকল্প নাই

No comments:

Post a Comment