Friday, August 29, 2014

মহর্ষি কারুয়াকের স্বপ্নাদেশ এবং আমার কৈফিয়ত

সরস্বতীকে কিস করে পরীক্ষা দিতে যাবি? মেয়েদের কমন রুমের এক কোনায় রয়েছে এবারের কলেজের সরস্বতীর মূর্তিটা। অস্বীকার করা যাবে না গোটা মূর্তিটার একটা বেশ জোরালো সেক্স অ্যাপিল আছে। শুভ মিত্র, আমার প্রিয় বাল্যবন্ধু, খগেন্দ্রনাথ মিত্রের নাতি, একটু ঘাড় কাত করে বিড়িতে একটা টান দিয়ে বলল “না এটা চাপ হয়ে যাবে”। ডুয়েলে প্রতিপক্ষকে হারিয়ে নায়িকার কাছে বিজয়ীর ভাব নিয়ে আমি এগিয়ে গেলাম সরস্বতীর দিকে। একটা প্যাশনেট কিস ...

পরদিন ছিল ইলেভেন থেকে টুয়েলভে ওঠার পরীক্ষা। বলা বাহুল্য সরস্বতীর অভিশাপেই আমি অত্যন্ত অনায়াসেই এবং যথেষ্ট ভালো নম্বর পেয়েই ইলেভেন থেকে টুয়েলভে উঠেছিলাম।
সরস্বতীর রূপ বর্ণনা পড়ি বা অনুভব করি সেই সময়ের প্রায় পঁচিশ বছর পর। সরস্বতী শুভ্রবসনা। তাঁর একহাতে বীণা আর অপর হাতে পুস্তক, চারটি বেদ এবং জপমালা। বারোয়ারি সরস্বতীর দৌলতে বীণাটা ঠিক আছে কিন্তু বইগুলো চলে গেছে পায়ের কাছে আর হাতটা একটা আশীর্বাদের প্রেসক্রিপশন মার্কা পোজের আকার পেয়েছে। এর মধ্যে জড়ানো থাকে একটা চাঁদমালা – কস্ট এফেক্টিভ এবং হেডেক অ্যাভয়েডিং জপমালার সাবস্টিটিউট। আর এন গুহ রোডের যে শিল্পী এটি বানিয়েছেন তাকে হয়তো গতবারের লক্ষ্মী পূজায় বিক্রি না হওয়া একটা মূর্তিকে সরস্বতী বানাতে হবে অতএব ... সবার উপর মার্কেট সত্য তাহার উপর নাই। অত পিতপিতানি থাকলে যা না নিজে পয়সা দিয়ে অর্ডার দিয়ে ডাইস বানিয়ে মূর্তি বানা গিয়ে যা ... দেখলে হবে? খরচা আছে।

ভালো কথা এসব কথা এ-লেখায় কেন? আসলে আমি বলতে চাই এ-লেখাটা কারুয়াক নিয়ে বয়ান – একটি লিটল ম্যাগাজিনের সংখ্যা বের করার ভাবনা – এই ভাবনাটাকে নিয়ে। তাই এই প্রসঙ্গে সরস্বতীর প্রসঙ্গ।
বেদ অর্থে চতুর্বেদ নয় – বেদ অর্থে জ্ঞান যে জ্ঞান আছে পুস্তকে আছে বহির্বিশ্বে আর জপমালা অর্থে সাধনা – একান্ত অন্তরঙ্গ একাকী নিঃসঙ্গ অন্তরতম বিশ্বের On the Road জার্নি। “On the Road” বেদ, জপমালাটা কই?

জপমালা-হীন বেদের চর্চা একরকম কঠিন প্রজাতির জন্ম দেয়। এদের মধ্যে আমি নিজেও পড়ি এমনকি নিজেকে এই শ্রেণীর একজন অগ্রণী সৈনিক (আসলে মনে মনে ইচ্ছা সেনাপতি হবার কিন্তু চাপ নিতে পারবোনা) বলেই মনে করি। আমাদের রাশি হল গিয়ে খচ্চর আর রাশির অধিপতি হলেন গিয়ে বল্লাল সেন। বাঙলায় শ্রীবল্লাল সেনেরই ইচ্ছায় বা লীলায় গাধা আর ঘোড়ার মিশ্রণে জন্ম হয় আমাদের আদিমতম পুরুষের। আমাদের উল্লেখ পাওয়া যায় গীতায় কর্মযোগে যেখানে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলছেন “যদি আমি কর্ম না করি তাহা হইলে এই লোকসকল উৎসন্ন হইয়া যাইবে। আমি বর্ণ-সঙ্করাদি সামাজিক বিশৃঙ্খলার হেতু হইব এবং ধর্মলোপ-হেতু প্রজা-গনের বিনাশের কারণ হইব”। অর্থাৎ ঠিক দশাবতারের মধ্যে না পড়লেও আমাদের আদিতম পুরুষ খচ্চর এক অর্থে বিষ্ণু বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের-ই এক অবতার। কলিযুগের সূচনা হিসাবে ধরা হয় মহাভারতের যুদ্ধের অবসানকে। কলিযুগের বৈশিষ্ট্য হিসাবে উল্লিখিত আছে বর্ণ-সঙ্করের আধিপত্যের। কলিযুগে বর্ণ-সঙ্কররাই শাসন করবে। আমার একান্ত ব্যক্তিগত একটা সন্দেহ আছে এই বিষ্ণুর কল্কি অবতার নিয়ে। মানে যদি কলি যুগের শেষে ধ্বংস অনিবার্য হয় তবে কল্কি অবতারের তো কাজ হবে সেই অনিবার্যতাকে অবশ্যম্ভাবী করে তোলার – তার মানে কি কল্কি অবতার আসলে একটা খচ্চর?

টিনের তলোয়ারে গুরুদেব কাপ্তান-বাবু চীৎকার করে বলে গিয়েছেন “হা হা হর-বাবু ইংরাজিটা যে আমি একেবারে বুঝি না তা নয় .. হাঙ্গরি মানে যে হাঙ্গরের মত ক্ষুধার্ত তা আমি জানি”। অতএব কোনও কথা হবে না। খিদে পাবে না? শেষ কবে খেয়েছিলাম শালা মনে নেই, লাস্ট সংখ্যায় লেখা ছাপা হলে একটা বাঙলার বোতলের গল্প হওয়ার কথা ছিল, সেটার তো কোনও উচ্চবাচ্য দেখছি না তবে খিদেটা আমার লাগবে নাতো কি আপনার পিতৃদেবের লাগবে?

খিদে সর্বস্ব চিন্তা ভাবনা নিয়ে দৌড়ে বেরিয়েছি এতগুলো বছর – এখনো দৌড়ে যাচ্ছি। এই খিদেরই বহিঃপ্রকাশ কারুয়াক আর তারও পরে কারুয়াক নিয়ে লিটল ম্যাগাজিনের সংখ্যা করার ভাবনা। খিদেটা আরও ব্যাপ্ত হয় রাজনৈতিক পরিসরে – দল পাকানোটা ভালো জমে – দুনিয়ার ক্ষুধার্ত এক হও স্লোগানে ভরে যায় আকাশ।

“On the Road” ঠিক কতজন পড়েছে বা আপ্লুত হয়েছে সেটা বড় কথা নয়, কিন্তু একথা প্রায় নিঃসন্দেহে বলা চলে যে এই পত্রিকা এবং এই লেখা যারা পড়ছেন তারা, মানে আমরা সকলে একমত যে ওটা বেদ। যেমন ঋগ্বেদের উদাহরণ হিসাবে নিঃসন্দেহে বলা যায় মহর্ষি কার্ল মার্ক্স বিরচিত ক্যাপিটাল। আমরা আম জনতারা হয়তো ক্যাপিটাল পড়িনি কিন্তু ওটা যে বেদ সে নিয়ে কারও কোনো সন্দেহ নেই।  আমাদের শ্রেণীগত বা রাশিগত বৈশিষ্ট এই যে আমরা আর বেদ পড়ার চাপ নিই না কিন্তু ওটা সম্বন্ধে ঠেকে কিংবা কফি হাউসে বা ফেসবুকে কমেন্ট করার মতো যথেষ্ঠ মশলা মজুত করে নিই – অন্যদের সাথে আড্ডা মেরে বা উইকিপিডিয়া, লিটল ম্যাগাজিন এবং আনন্দবাজার পড়ে। সব মিলিয়ে একটা বৌদি থুরি বেদ ভিত্তিক সাম্যবাদের স্বপ্নে কেটে গেছে আমাদের বা বিশেষভাবে আমার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবনের অনেককটা বসন্ত। সুতরাং দেখা যাচ্ছে বৌদি থুরি বেদের গুরুত্ব নিয়ে আমাদের কারও কোনওরকম সন্দেহ ছিল না বা নেই। আর তাই কারুয়াক নিয়ে বয়ানের সংখ্যা সেই মহর্ষি বেদ রচয়িতার প্রতি এক গুরুদক্ষিণা মাত্র।বয়ানের আগের সংখ্যায় লেখাটায় অনেকটা চলে গিয়েছিল আমার লেখা কি সেটার ব্যাখ্যান করতে। এবারে আর সেসব চাপ নেব না এক কথায় শুধু এটুকু বলতে পারি – এগুলো আমার কথা – ব্যক্তিগত অনুভবমাত্র এর আর কোনোরকম গুরুত্ব বা শ্রেণীবিভাগ নেই। এই লেখার প্রেরণা স্বতস্ফূর্ত অনুভব যে অনুভব এসেছে আমার জার্নি আমার জীবনের “On the Road” থেকে। আর সাথে যুক্ত হয়েছে মহর্ষি কারুয়াকের স্বপ্নাদেশ – “তুই On the Road – এর জপমালাটা নিয়ে লেখ।”

আমি বিশ্বাস করি প্রত্যেক সরস্বতীর সাধকেরই জপমালাটা থাকে কিন্তু তার বহিঃপ্রকাশ হয় না বেশিরভাগ সময়ই। জপমালাটার কোনও মার্কেটেবল প্রোডাক্ট তৈরীতো হয়ই না উল্টো সেটা মার্কেট ইকনমিকেই চ্যালেজ্ঞ জানিয়ে বসে থাকে। কিন্তু তাও বর্হিবিশ্বের আর অর্ন্তবিশ্বের উভয়ের ই ভ্রমণ শেষে পৌছান যায় সেই একই সত্যে – যত মত তত পথ। আমার নিজের অনুভবের থেকে একটা উদাহরণ দিয়ে ভাবনাটা বোঝাবার চেষ্টা করছি।

“সৃষ্টির প্রারম্ভে পরমেশ্বরের স্বাতন্ত্রশক্তি, বহু হওয়ায় খেলিতে থাকে। যতক্ষণ বহুভাবের সম্যক্ বিকাশ না হয় ততক্ষণ এই ইচ্ছা কার্য করিতে থাকে। ইহা কালের ঈক্ষণরূপে বীজভাব প্রাপ্ত হইয়া মহামায়ার গর্ভে সুপ্ত থাকে। ইহাই সুপ্ত জীবসমষ্টি”। এই বিরাট সৃষ্টি, এ জগৎ আমি, আপনি এবই আসলে ঈশ্বরের এক থেকে বহু হবার ইচ্ছে অনুসারে ছুটে চলেছে। এই ছুটে চলার সমান্তরালে, এর বাইরে দাঁড়িয়ে আছে সময় – সময় এর নির্ণায়ক। সময় একমুখী গতি নিয়ে নির্ধারণ করছে প্রতিটি জীবের প্রতিটি বহূত্বের বা বলা ভালো প্রতিটি বহুত্বের স্বতন্ত্র আমিত্বের। শিব-শক্তির যে রূপ আমরা সাধারণত দেখে থাকি অর্থাৎ মাকালীর মূর্তির রহস্য বা বলা ভালো গল্প থেকে এটা আরো ভালো বোঝা যাবে। মা-এর এই রূপটি নিত্য প্রলয়ের রূপ। নিত্য প্রলয় অর্থাৎ জীবের সাধারণ জীবনচক্রের আবর্তনে জীবিত হওয়া ও স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করার প্রক্রিয়া। এই কারনেই মা এর অধিষ্ঠান শ্মশানে। এক হাতে খাঁড়া, অন্যহাতে কাটা মুন্ডু আর বাকি দুই হাতে দুটি মুদ্রা – বরাভয় ভয়কে জয় করার সাহস আর আশীর্ব্বাদ। এই মূর্তি প্রতীক এই বিরাট গল্পের বা একরকম উপমা একটা ভাবনার বা অত্যন্ত জটিল একটি কনসেপ্টের। এই কালীর গুরু হচ্ছেন সময় বা শনিদেব। কাল অর্থাৎ সময়ের সাথে ই অর্থাৎ ইচ্ছা বা মায়া যা পরমেশ্বর মানে শিবেরই এক প্রকাশ যোগ হয়ে হয় কালী। অর্থাৎ নিত্যপ্রলয়ের সৃষ্টি এবং লয় উভয়ই সময়ের উপর নির্ভরশীল এবং তা ঘটে চলেছে সময়ের একটি নির্দিষ্ট দিকে। এই দিকটি হলো পরমেশ্বরের বহু হওয়ার আকাঙ্খার দিক।

“The Theory of Everything” বইতে স্টিফেন হকিং বলছেন – “মনে করুন একটা টেবিলের উপর একটা কাপ রাখা আছে। কাপটা মাটিতে পড়ে কয়েকটুকরো হয়ে ভেঙ্গে গেল। আমি এই ঘটনাটা একটা ভিডিয়ো ক্যামেরাতে রেকর্ড করে নিলাম আর তারপর সেটা উল্টো করে চালিয়ে আপনাকে দেখালাম যাতে দেখা গেল কতগুলো ভাঙা কাপের টুকরো নিজে থেকে জোড়া লেগে গিয়ে একটা আস্ত কাপ হয়ে গিয়ে মেঝে থেকে টেবিলের উপর ফিটফাট হয়ে উঠে বসল। আপনিতো ধরে ফেলবেন যে সময়টাকে উল্টো দিক দিয়ে দেখানো হয়েছে অর্থাৎ সময়ের অভিমুখ সম্বন্ধে মানুষের একটা সহজাত ধারণা আছে। এটাকেই বলা যাক Psychological arrow of Time.  আবার মজার কথা এইযে এই অভিমুথটা মিলে যাচ্ছে Thermodynamic arrow of Time এর সাথে। কেন আমরা ভাঙা কাপকে জোড়া হয়ে উঠে পড়তে দেখিনা তার কারণ ওটা মার্ফিসাহেব থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্রে নিষেধ করে গেছেন। মার্ফিসাহেব পই পই করে বলে গেছেন Things get worse. An intact cup on the table is a state of high order, but a broken cup on the floor is a disordered state. One can therefore go from the whole cup on the table in the past to the broken cup on the floor in the future, but not the other way around.”। অর্থাৎ এনট্রপির বা অস্থিরতার তথা বহুত্বের বিকাশের দিকেই সময়ের অভিমুখ – এমনটা মনও বলছে, মহর্ষি মার্ফিসাহেব তার থার্মোডায়নামিক্সের দ্বিতীয় সূত্র নামক বেদেও বলে গেছেন।


 তাহলে অর্ন্তবিশ্বের অভিমুখের এই যাত্রা, এই জার্নিকে অস্বীকার করি কি করে? বহির্বিশ্ব সৃষ্টি রহস্য আর অর্ন্তবিশ্বের রহস্য কি একই চৈতণ্যের আভাসমাত্র? এপ্রশ্নর মীমাংসা নাহোক অন্তত একটা আলোচনা পর্যন্ত হবে না? আলোচনা হবে না “তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ” বা “তপোভূমি নর্মদা” নিয়ে? বা “কথামৃত” নিয়ে? না হবে না। কেন? – হবে না কারন আমরা খচ্চর রাশির জাতক।
জপমালাহীন বেদের সাধনা করলে আলটিমেটলি ইয়ে মারা যায় আর কি। কি হতে পারে সেটা বক্রেশ্বরের অঘোরী বাবার সাথে প্রমোদ কুমার চট্টোপাধ্যায়ের কথোপকথন “তন্ত্রাভিলাষীর সাধুসঙ্গ” থেকে তুলে দিলাম।
“ আমি বললামঃ অবশ্য অত্যন্ত জড়বুদ্ধি মূর্খ প্রকৃতির-
বাধা দিয়া, তিনি চীৎকার করিয়া বলিলেন : ওরে শালা বোকারাম, তুই যে আকাশ থেকে পড়লি। - তুই পাগলামী করিস নে। তোদের ওই সভ্য ভদ্দোর ইজ্ঞিরি পড়া, এডুকেটেড বিদ্বান বুদ্ধিমান সমাজের মানুষই বেশী বেশী এই দলের। যারা যথার্থ অসভ্য মূর্খ, খেটে খুটে খায়, তারা অনেক সংযতভাবে ইন্দ্রিয় ভোগ করে, তারা এখনও প্রকৃতির বশে অনেকখানি চলে, প্রকৃতির সাথে তাদের সম্বন্ধ বেশী ঘনিষ্ঠ এটা কি তোরা জানিস না, অথচ সহরে থাকিস্। আচ্ছা বল্ দেখি, পুরুষত্বহীনতা, অজীর্ণ, হৃদরোগ, স্নায়ুরোগ, পক্ষাঘাত, বাত, মূত্ররোগ, যক্ষ্মা – এসব রোগ ভদ্দোর লোকের মধ্যে বেশী না ছোটোলোকের মধ্যে বেশী?
- সেটা সত্য, - ঐ সব রোগ ভদ্দোর লোকের মধ্যেই বেশী, তা খবরের কাগজের বিজ্ঞাপন থেকে বুঝা যায়।
- তুই এটা বুঝিস না, বিদ্যা-বুদ্ধির সাথে বেশী পরিচয় না হলে, বেশী সভ্য না হলে, ইন্দ্রিয়-সুখের এত ব্যাভিচার আসবে কোথা থেকে?  সরলবুদ্ধি অসভ্য মূর্খেরা ওসব অবৈধ ইন্দ্রিয়-চালনার প্রবৃত্তি, সাহস পাবে কোথা থেকে? এই শালা তুই শয়তানের পরিচয় জানিস নি, সে যে বিদ্যাবুদ্ধিতে ভগবানের দোসর, সেকি মুখ্যু অসভ্যের দল নিয়ে ব্যবসা করে?”          
এখানে “ইন্দ্রিয়-চালনার প্রবৃত্তি” টাকে একটু বলতে ইচ্ছে করছে মানে আমি এর যেটা বাঙলা মানে করেছি সেটা একটু শেয়ার করতে ইচ্ছে করছে।
“ইন্দ্রিয়-চালনার প্রবৃত্তি” অর্থাৎ প্যাট এবং চ্যাট। প্যাট অর্থাৎ হজম হোক বা না হোক, যা আমি খেতে পারি বা ভোগ করতে পারি সেটা আর্সেনলের বিরিয়ানি হতে পারে, স্যামসুঙ গ্যালাক্সি ইয়ে মডেলটা হতে পারে, ভ্যাট সিক্সটিনাইন বা বাঙলা হতে পারে বা বকেয়া ৪৭% (মতান্তরে ৬৮%) ডি এ হতে পারে বা আরো যা কিছুই হতে পারে। একটা আস্ত শপিং মলে যা যা আছে তার সবই আমারই প্যাটের নিমিত্ত বলিপ্রদত্ত। এর সবটাই আমি চাই।
চ্যাট বলতে প্যাটের থেকে কয়েক আঙুল নীচের সেই সেই সেই অংশটির কথা বলা হচ্ছে – বাকি ব্যাখ্যান নিষ্প্রোয়জন।
খচ্চর রাশির কাছে এসবের সলিউশন আছে। কেমন? কেন উদাহরণ দিলাম না? জপমালার কস্ট এফেক্টিভ সলিউশন – চাঁদমালা, আর একান্তই যদি আটকে যায় তাহলে দুই রকম সর্বরোগহর দাওয়াই আছে।

দাওয়াই নাম্বার এক : প্রলেতারিয়েতের নেতৃত্বে একটি সঠিক কমিউনিস্ট পার্টি গঠন না করতে পারলে এইসব কন্ট্রাডিকশনগুলিকে ধারণ করবার কোনও আধার পাওয়া যাবেনা। সুতরাং এর উত্তর পেতে গেলে পার্টি গঠনের সংগ্রামকে তরান্বিত করতে হবে। অতএব আজ, এখন বা কাল সকালে কি করিতে হইবে জানা যায় না কারণ লেনিন উহা বলিয়া যাইতে ভুলিয়া গিয়াছেন।
দাওয়াই নাম্বার এক (ক): আরে, আসলে আমরাই সেই সর্বরোগহর মহান কমিউনিস্ট পার্টি এই সোজা কথাটা বাকিরা বুঝতে পারছেনা। রোসো, বসো এসো পার্টি অফিসে চা ফা হবে, আড্ডা হবে আর সিজন থাকলে দু একটা আন্দোলন টান্দোলন ও করা যাবে – মিডিয়ায় তোমার এক শালা আছে বলছিলে না? তবে দেখো বাবা অফ সিজনে যেমন পূজোর সময় টময়ে আন্দোলন টান্দোলন করতে চাইলে কিন্তু পড়তায় পোষাবে না। শীতকালে দুপুর বেলাটা বেশ ভালো আর শনি রবিবার ডেট করলে কিন্তু অনেককে পাবেনা। হ্যাঁ প্রেসি বা যাদবপুরে দু-একটা সেমিনার করতে পারো তো আর তোমরা ওইসব ফেসবুক টেসবুক কিসব বলো ওতে দিয়ে একটু ক্যাম্পেন ট্যাম্পেন করে দিতে পারলে বেশ ভালো ছেলেপুলে পেয়ে যেতে পারো। এইসব টাইমপাস চলতে থাকুক তারপর দেখো না যাবে কোথায়? সব শালাকে এই ঘাটেই আসতে হবে। টাইমপাস দীর্ঘজীবী হোক।
দাওয়াই নাম্বার এক (খ) : আসলে মার্ক্সকে এক্সটেন্ড করার যে কাজটা লেনিন আর তারপর মাও করেছিলেন সেটা আর মাওএর পর এগোয়নি। সাম্রাজ্যবাদের এই চেহারার কংক্রীট অ্যানালিসিসটা কোনো শালা করেনি – কেউ না, সব শালা খালি বাতেলা মেরে বেরিয়েছে। আমরা এই কাজটা শুরু করেছি – কাগজটা পড়ছো তো? এসো কফি হাউসে আমরা রোজই প্রায় বসি আর কাজটা এগিয়ে নিয়ে যাই। এমুহুর্তে এছাড়া আমরা আর কিই বা করতে পারি?      
কি এক নম্বরের দাওয়াই পছন্দ হচ্ছে না? নানা শুধু এক-এর খ পর্যন্ত নয় এর এত ফ্লেভার আছে তাতে চাইনিজ বর্ণমালা ফুরিয়ে যাবে। ফ্লেভারটা পরে দেখছি – বেসিক ড্রাগটা পছন্দ করুন।
কি এতগুলো ফ্লেভার তাও কোনোটা পছন্দ হলো না? ওকে কুছ পরোয়া নেই – আপনি এদিকে চলে আসুন – আপনার জন্য অন্য দাওয়াই আছে। এতে খরচা একটু বেশী পড়ে কিন্তু সিওর শট। একেবারে প্যাকেজ ডীল – গ্রাম্য প্রকৃতি, বেড়ানো, বাউল গান, অফুরন্ত মদ এবং গাঁজা এবং একটু সাহসী হতে পারলে আর পকেটের জোর থাকলে মেয়েটাও হয়ে যাবে। কেউ ধরবে না তবু বলা যায় না চুলকানি করার জন্য কোনো শালা যদি সাধনা টাধনার কথা বলতে আসে তবে তো আপনার কাছে মোক্ষম দুটো ব্রম্ভাস্ত্র রয়েছে – এক গুরু কই? আমাদের মতো ঢ্যামনাদের কি গুরু অত সহজে মেলে? আর বাই চান্স একটা গুরু ধর পেয়েই গেলাম, সাধনসঙ্গী বা সাধনসঙ্গীনী কই? এতো বাবা যুগল সাধনা কোনো কথা হবে না ... বল্ বল্ না কি বলবি বল? দেখবেন থোতা মুখ একেবারে ভোঁতা হয়ে গেছে।

আমার কৈফিয়ত
মহর্ষি কারুয়াক আমাকে ক্ষমা করুন। আপনার স্বপ্নাদেশ সত্ত্বেও “On the Road” এর জপমালা নিয়ে লেখার সাহস, ধৈর্য্য, অধ্যাবসায় কোনোটাই আমি অর্জন কর উঠতে পারলাম না। আমি নিতান্তই একটা গিনিপিগ। আমাকে চালনা করে নক্ষত্র, আমার ভেতরের অন্ধকার, মিডিয়া, প্যাট এবং চ্যাটের ভাবনা, আর্থ সামাজিক কাঠামো, রাষ্ট্র আরো কারা কারা সব। একটু ভেবে দেখলেই দেখবেন আমার এতে কোনও দোষ নেই। আমি এক গিনিপিগ যে কতগুলো অনিবার্যতার সমাপতনের এক করুণ বা আরো ভালোভাবে বলা যায় প্যাথেটিক রেজাল্ট মাত্র।
আমি রাজারাপ্পা – মা ছিন্নমস্তার মন্দিরের আমার নিজের যাত্রার জপমালাটাই এখনো পর্যন্ত খুঁজে পেলাম না। আসলে ছোটোবেলা থেকে শিখেছি বেদ বুঝতে অসুবিধা হলে সলিউশন আছে পর্যায়ক্রমে ডিকশনারী, গুগল, উইকি এবং অবশেষে প্রফেসর। কিন্তু জপমালাতে প্রথম পাটা ই কোনোদিন ফেলিনি তা বুঝবোটা কি করে? আটকে গেছি। তবে এটা বুঝতে পারছি যে কোন কোনটা বাদ যাবে একেবারে প্রথমেই – যেমন ভ্রমণ বৃত্তান্ত – কিভাবে কোন গাড়িতে কিভাবে যাওয়া হলো, কার কার সাথে দেখা হলো, তারা কে কি বললো, এলাকার আর্থ-সামাজিক ঐতিহাসিক এবং ধর্মীয় পটভূমি এবং তার বিশ্লেষন ইত্যাদি। তাহলে হাতে কি থাকলো? মন্দির, ধর্ম? অর্থা৭ ক্ষমতার বাতিস্তম্ভ? – হতে পারে না তবে এও বাদ দিতে হবে। কি সেই ছিন্নমস্তার গুহ্য রহস্য যা প্রকাশ হলে রুদ্রগ্রন্থির বন্ধন ছিন্ন হয়?  কি তার মূর্তি? রাজারাপ্পার ছিন্নমস্তার মূর্তি সম্পর্কে একটা দীর্ঘ আলোচনা করা যেতে পারে কিন্তু সে কথা এখানে একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক। মোটমাট এই মূর্তির যাদু আছে কিন্তু আমার মনে হয়েছে এটা নয় আরো কিছু আছে। বিভিন্ন লেখায় ছিন্নমস্তার যে ছবি আমি পেয়েছি সেই রূপ আমার ধারণা এবং জ্ঞানের চৌহদ্দিতে কোথাও আছে বা কেউ কখনো বানিয়েছিলেন বলে আমার জানা নেই। এক ষোড়ষী, চপলা, সুন্দরী কামাতুরা নারী বাঁ পা এগিয়ে আগ্রাসী এবং লাস্যময়ী ভঙ্গিতে অগ্রসর। তাঁর এক হাতে তরবারি আর অপর হাতে তাঁর নিজের কাটা মুন্ডু। তাঁর বক্ষবন্ধনী পদ্মের এবং বাকি শরীর নিরাবরণ। তাঁর মাথার উপরে মণি সাপ দিয়ে বাধা। তাঁর মুন্ডহীন ধড়ের থেকে নির্গত হচ্ছে তিনটি রক্তধারা। একটি পান করছেন তিঁনি নিজে এবং অপর দুটি তাঁর দুই অপরূপা সখিরা। এই সমগ্র আসনটি হচ্ছে যোনি আকৃতির একটি আসনে। আসনের সীমানায় পদ্মফুলের সারি। আর আসনের মধ্যে মায়ের পায়ের তলায় কামদেব ও রতি বিপরীত যোনী মুদ্রায় সঙ্গমরত।  ইনি দশমহাবিদ্যার এক বিদ্যা কিন্তু এনার প্রাদূর্ভাব হয় সৃষ্টিচক্রের নিয়মের গোলমাল হলে। যদি সৃষ্টিচক্রে ধ্বংসের পরিমান সৃষ্টির থেকে বেড়ে যায় তখন প্রাদূর্ভাব হয় ছিন্নমস্তার। এনার পূজো বলি ছাড়া হয় না। মন্দির চত্বরে বলিদান চত্বরে নিয়মিত পাঁঠা বলি হয়। পান্ডার দোকানের পূজার স্ট্যান্ডার্ড থালিতে একটা নারকেল থাকে। নারকেলটা বলি দিতে হয় মানে এক আছাড়ে ভাঙতে হয় পাঠা বলির পাশেই একটা নির্দিষ্ট চত্বরে। ছিন্নমস্তা কালী বা তারার মতো মঙ্গলময়ী নন। ছিন্নমস্তা ক্ষমতার প্রতীক – ক্ষমতা যে ক্ষমতা রাজার রাজা বানায়। হিরণ্যকশিপু ছিন্নমস্তার সাধক ছিলেন। ছিন্নমস্তা ধ্বংসের প্রতীক – সেই ধ্বংস যাকে প্রতিরোধ করতে বিষ্ণুকে অবতার রূপ গ্রহণ করতে হয়। প্রহ্লাদের অছিলায় বিষ্ণুকে নিজেকে আসতে হয় নৃসিংহ সেজে। এই ছিন্নমস্তার, তার মন্দিরের যাওয়ার অন দি রোডের জপমালাটা কি?
অন্তরঙ্গ যাত্রাপথের লিখিত রূপ নেই। কেবলমাত্র গুরুমুখে শ্রুতির মাধ্যমে প্রাপ্ত। এযাবৎকাল এই হয়ে এসেছে। খুব উপর উপর দেখলেও কয়েকটা কারণ সহজেই বোঝা যায় যেমন – এই যাত্রাপথে সাধকের এমন কিছু অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হতে হয় যেসব যে বা যারা এই পথের কোনোদিন ছায়াও মাড়ায়নি তাদের পক্ষে বোঝা অসম্ভবতো বটেই এমনকি তারা ভয় পেয়ে যেতে পারে বা পাগোল ভাবতে পারে বা ওই যাতীয় যাতা হতে পারে আরকি। লেখার মজা এই যে একবার লেখা হলে পাঠকের অর্থাৎ কে পড়বে আর কে পড়বে না তার উপর লেখকের আর কোনো কন্ট্রোলই আর কাজ করে না। ফলে গোলমাল হয়ে যেতে পারে আর কি। শ্রুতির কিন্তু এই সমস্যাটা নেই। পাত্রকে গুরু একেবারে বিচার করে নিয়েই রহস্য ভেদ করেন। এর ফলে জপমালা খোজার প্রজেক্টে এমনকি একটা রেফারেন্স মেটিরিয়াল পর্যন্ত পাওয়া যায় না।
ছিন্নমস্তার একটা দর্শন মানে ফিলোজফি অবশ্যি আছে কিন্তু সেটা তো হয়ে গেল বেদের সিনোপসিস টাইপ। জপমালাটা দর্শন নয় বরং উপলধ্বি হতে পারে। এত কথা বলার পর আমার নিজের উপলধ্বিটা (এই মুহুর্তে) না বললে লেখাটা শেষ হবে না। আমার উপলধ্বিতে ছিন্নমস্তা চূড়ান্ত আত্মত্যাগের প্রতীক। খিদের মুখে খাবার না পেয়ে যে মা নিজেকে বলি দিয়েও বেঁচে থাকে তার সন্তানদের তাঁর নিজের রক্ত খাইয়ে জীবীত রাখার জন্য। সেই মা যার সামনে অনন্ত যৌবন, অনন্ত ভোগের হাতছানি। সেই মা যে মাতৃত্বের কর্তব্যকে পালন করতে গিয়ে নিতান্ত অবহেলায় মাড়িয়ে চলে যায় জীবের সবচেয়ে বড় বন্ধন – কামকে। এই আত্মত্যাগ করতে পারলে রুদ্রগ্রন্থি ছিন্ন হয় আর না পারলে অনন্ত প্রবৃত্তির ভোগে আপেক্ষমান থাকতে হয় কালের নিগ্রহের অপেক্ষায়। পরিবর্তনশীল জগতের অধিপতি কবন্ধ ছিন্নমস্তার ভৈরব। এতো ক্ষমতার টাকশাল – কতো চাই? ত্যাগের সমানুপাতে ক্ষমতা এই হিসাবে চলবে? শেষ কবে আত্মত্যাগ শব্দটা আমি উচ্চারণ করেছি নিজেরই মনে নেই। জপমালাটা আর খুঁজে পেলাম না – এতটাই বলতে পারছি, বাকিটা ব্যাক্তিগত।
 

No comments:

Post a Comment