Wednesday, September 3, 2014

NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?

 এই লেখাটা রামপাল নিয়ে প্রতিবাদ সংগঠিত করার চেষ্টায় NTPC তে ডেপুটেশনের অভিজ্ঞতার বর্ণনা ....

NTPC কেন পিটিশন গ্রহণ করল না?
আমরা মোটামুটি ২৫ জন প্রিটোরিয়া স্ট্রীটের NTPC অফিসের সামনে জড়ো হই ২৭ সেপ্টেম্বর দুপুর আড়াইটে নাগাদ। জায়গাটা একটু নির্জন। থিয়েটার রোড, ক্যামাক স্ট্রীট অঞ্চলে একটু অভিজাত এলাকায়। স্বাভাবিকভাবেই একটার পর একটা বড় সুদৃশ্য গাড়ির যাতায়াত, কিন্তু বাস বা পথচারী প্রায় নেই বললেই চলে। এমনকি চায়ের দোকানও অনেকটা দূরে মোড়ের মাথায়। আমাদের সাথে ছিল ২৫টা প্ল্যাকার্ড। একটা ছবিতে ইআইএ রিপোর্ট ১১টা প্ল্যাকার্ডের আর লং মার্চের খবর, এবেলায় প্রকাশিত রিপোর্ট এইসব। কোনো প্ল্যাকার্ডেই কোনো সংগঠন বা ওই জাতীয় কিছুর উল্লেখ ছিল না। প্ল্যাকার্ডের ছবিগুলো একজন তুলেছে মেলে পেলেই শেয়ার করব। আমরা চটপট প্ল্যাকার্ডগুলো সাজিয়ে ফেলি NTPC র গেটের উল্টো দিকের ফুটে আর আশপাশের গেট ইত্যাদিতে। কোনো মাইক বা কিছু ছিল না, ছিল না কোনো শ্লোগান বা অযথা চিৎকার। গ্রুপের সবাই প্ল্যাকার্ডগুলো হাতে নিয়ে দেখছিল নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিল এই সব। আমরা অপেক্ষা করছিলাম ১০৯ পাতা সই এর প্রিন্ট আউট নিয়ে পৌছানোর কথা দুজনের জন্য।
বেলা ৩.৩০ নাগাদ সই-এর প্রিন্ট আউট নিয়ে এলে আমাদের মধ্য থেকে ১০ জন মতো NTPCর অফিসে চার তলায় আস্তে আ্‌স্তে উঠে আসি। আমাদের লিড করছিলেন শান্তনুদা (শান্তনু চক্রবর্ত্তী) আর বঙ্কিমদা (বঙ্কিম দত্ত)। কাঁচের দরজা পেরিয়ে সিকিউরিটির কাছে গিয়ে আমরা জানালাম ডেপুটেশন দিতে এসেছি, কোনো পদস্থ অফিসারকে ডেকে দিতে। সিকিউরিটি বললেন DGM (HR) যিনি কলকাতা অফিসের হেড, নেই অতএব ডেপুটেশন নেওয়া যাবে না। আমরা বলএটা কী লাম ওনার অনুপস্থিতিতে যিনি ইন-চার্জ তাকে ডেকে দিতে। এর উত্তরে শুনলাম কেউই নাকি নেই! একটা কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজের দিনে এটা কি সম্ভব? এই কথাটা আমরা তুললাম। ইতিমধ্যে বেশ কয়েকজন কর্মচারি আমাদের সাথে কথা বলতে শুরু করলেন আমরা কে? কী চাই, ইত্যাদি। কথায় বুঝলাম এরা Personnel department এর লোক ভালোই খবর রাখে কেননা ওরা রামপাল বলছিল না, বলছিল খুলনা প্রজেক্ট এবং আরো এমন কিছু কথা যা মোটামুটি দুই বাংলার রামপাল সংক্রান্ত ঘটনার স্টাডি না থাকলে বলা যায় না। যাই হোক পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল এদের কোনো কথা শোনার মুড নেই।
শেষ পর্যন্ত আমরা ঠিক করলাম ডেপুটেশনটা কাউন্টারে জমা করে দেব। তাতে সবাই মানে NTPCর সবাই রাজি হল। আমরা বললাম একটা প্রাপ্তি স্বীকার দিন। এইখান থেকেই ঘটনা এক নতুন মোড় নেয়। শুরুটা হল প্রতীপকে দিয়ে। ও সিকিউরিটিকে বলেছিল আরে ছাড়ো না নিয়ে নাও ঝামেলা হাঠাওএই কথাতে হঠাৎ ওখানকার একজন বলশালী স্টাফ খেপে যায়; প্রায় মারতে আসে, প্রতীপকে বলে বেরিয়ে যেতে এবং আক্রমনাত্মকভাবে চিৎকার জুড়ে দেয়। প্রতীপ ক্ষমা চায়, ওর কথা উইথড্র করে, কিন্তু কাকস্য পরিবেদনা। ওকে প্রায় ফুটবলে যেভাবে ডিফেন্ডাররা গায়ে হাত না দিয়েও চাপতে থাকে সেভাবে ঠেলে কাঁচের দরজার কাছে নিয়ে যান তিনি। এইসবের মধ্যে একটু হট্টগোল শুরু হয়ে যায়, দু-একটা চিৎকার চ্যাচ্যামেচি হয়। অবস্থা যেদিকে গড়াচ্ছে সেটা ভালো ঠেকছিল না। আমি আমার মোবাইলের ক্যামেরা অন করার চেষ্টা করি আর বলার চেষ্টা করি আপনি যা বলছেন অন রেকর্ড বলুন। কিন্তু আমি আমার কথা শেষ করার আগেই একজন বেশ শক্তিশালী কর্মচারী আমার উপরে, বাস্তবত, হাতে পায়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। আমার মোবাইল কেড়ে নিয়ে ফেলে দেবার চেষ্টা করে ও আমাকে শারীরীকভাবে আদর করবার নানা চেষ্টা করতে থাকে। বাকিদের কাছে ঘটনাটা এতটাই অপ্রত্যাশিত যে কেউ কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না এমনকি সিনিয়ররাও কেমন হতভম্ব হয়ে যান। আমাকে জোর করে ধাক্কা দিয়ে বার করে দেওয়া হয়। আমরা সবাই গেটের বাইরে বেরিয়ে আসি। মেসেজটা পরিষ্কার আমাদের কথা শুনবেও না আর ডেপুটেশনও নেবেনা। মিনিট দশেক অপেক্ষা করার পর আমরা বেরিয়ে যাই। ঠিক হয় সোমবার এটা কুরিয়ার করে দেওয়া হবে।


এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে দুটো কাজ তৎক্ষনাৎ করা যেত ১. মিডিয়াতে গলা ফাটানো যেত আর ২. পুলিশে কমপ্লেন করা যেত। দুটোর কোনোটাই করিনি তার কারণগুলো এইরকম- ১. NTPCর কর্মচারী বা তাদের কোনো ইউনিয়ন আমাদের শত্রু নয়। এসব করলে ভুল বোঝাবুঝি আরো বাড়ত। ২. আমাদের কোনো ছাতা নেই, কোনো সংগঠন নেই এমনকি সবাই সবাইকে ভালো মতো চিনিও না। NTPCর সাথে লড়াই মুখের কথা না। আমরা প্রস্তুত ছিলাম না বা এখনো নেই। ৩. এই ঘটনাটাকে বড় ইস্যু করলে রামপাল যেটা আরো অনেক অনেক বড় বিপর্যয়, সেটা পিছনে চলে যাবার একটা সম্ভাবনা থেকে যায়। দীর্ঘদিনের চেষ্টায় আস্তে আস্তে রামপাল নিয়ে মানুষ কথা বলতে শুরু করেছে সেটা হয়তো ধাক্কা খেত। এখানে এমন মানুষ আছেন যারা এই ঘটনার সাক্ষী। ভাবছিলাম, শহর কলকাতার ইংরাজি বলা ভদ্রলোকের সাথে যদি NTPC এইভাবে কথাবার্তা বলেন তাহলে সুন্দরবনের মানুষগুলির সাথে তারা কী করেন? জানতে ইচ্ছা রইল আর রামপাল নিয়ে লড়াই যেটা হয়তো এই ঘটনাটা না ঘটলে আর বেশি এগোতাম না সেটা আমি জারি রাখব।

দুই বাংলার সুন্দরবন দুই রাষ্ট্রের চক্রান্ত

 এই লেখাটা রামপাল নিয়ে ভারত মানে পশ্চিমবঙ্গ থেকে প্রতিবাদ সংগঠিত করার চেষ্টায় এন.টি.পি.সি তে ডেপুটেশনের সময় লিফলেটের আকারে লেখা .. সময় অক্টোবর ২০১৩

দুই বাংলার সুন্দরবন দুই রাষ্ট্রের চক্রান্ত


সুন্দরবন দুই বাংলা জুড়ে বিস্তৃত। প্রায় ৬০% বাংলাদেশে আর ৪০% পশ্চিমবঙ্গে। স্বাভাবিকভাবেই এপারে যেসব মাছ আসে তার অনেকাংশেরই জন্ম হয় বাংলাদেশের সুন্দরবনে। এভাবেই চলছে। গত ২০০ বছরে সভ্যতার অগ্রগতির কোপ গিয়ে পড়েছে সুন্দরবনের উপরে। প্রায় ৬৬% বনভূমি আজ লুপ্ত। এই আক্রান্ত বনভূমির উপর আজ নতুন আক্রমণ বাংলাদেশ সুন্দরবন ঘোষিত বনভূমির মাত্র ১৪ কিমি দূরে ভারত বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে  তৈরি হতে চলেছে ১৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন এক বিশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। পুরো পরিকল্পনা অনুসারে অধিগৃহীত ১৮৩৭ একর জমিতে দুই ধাপে তৈরি হবে মোট ২৬৪০মেগাওয়াট উৎপন্ন কারি তাপবিদ্যুৎ-কেন্দ্রপ্রথম ধাপে তৈরি হবে দুটি ইউনিট ৬৬০ মেঃওঃ ক্ষমতার। সময় ধার্য করা হয়েছে সাড়ে চার বছর। পুরো কাজটি হবে ভারতের NTPC  এবং বাংলাদেশের BPDB র যৌথ উদ্যোগে। ২০শে এপ্রিল, ২০১৩ সালে এই মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর করা হয়েছে ঢাকাতে। সরকারি আইন অনুযায়ী, এই ধরনের প্রকল্পের জন্য যে কোনও রকম কাজ শুরু হবার আগেই পরিবেশগত সমীক্ষা (ইআইএ) ও তার ছাড়পত্র পাওয়া আবশ্যিক। এক্ষেত্রে কিন্তু প্রকল্পের স্থান চূড়ান্ত করণ ও জমি অধিগ্রহণ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষর ইত্যাদি যাবতীয় কাজ শেষ হওয়ার পর কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের পরিবেশগত প্রভাব নিরূপণ বা এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট(ইআইএ) করা ও তার জন্য জনসাধারণের কাছে মতামত চাওয়া হয়! এই তামাশার অবশ্যম্ভাবী ফলাফল যা হবার তাই হয়েছে। অর্থাৎ, অনেক অস্বস্তিকর প্রশ্নগুলিকে হয় সম্পূর্ণ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে নয়তো বিভ্রান্তিকর উত্তর দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ আজ পথে নেমেছেন। জাতীয় কমিটি (NCBD) র নেতৃত্বে ঢাকা থেকে সুন্দরবন এক বিশাল লং মার্চে যোগ দিতে চলেছেন ১০হাজারেরও বেশি মানুষ। এই মিছিল মনে করিয়ে দিচ্ছে ফুলবাড়ির কথা। সেদিনের সেই লং মার্চ আটকে দিয়েছিল ফুলবাড়ি প্রকল্পকে। এই মিছিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে পারবে কিনা ইতিহাস তার জবাব দেবে। ৫লাখ মানুষের রুটি রুজি, ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে নেড়া বনভূমি, ৬৩,৬৩৮টন ধান, ৫৭৮৭ মেট্রিক টন মাছ এবং নগদ বার্ষিক ৫০০০ কোটি টাকার সম্পদের বিনময়ে পাওয়া যাবে বিদ্যুৎ।

এদিকে এপার বাংলাতেও গড়ে উঠছে প্রতিরোধ। এপার বাংলার উদ্যোগে, ইন্টারনেটে একটি অনলাইন পিটিশন করা হয়েছে। সই সংগ্রহ করা হচ্ছে ইন্টারনেটের বাইরেও। অনলাইন ও সংগৃহীত সই সহ সম্পূর্ণ পিটিশনটি দেওয়া হবে NTPC র কলকাতা অফিসে ২৭শে সেপ্টেম্বর। বড় মিডিয়ার চুপ করে থাকার কারনে বেশিরভাগ মানুষই এই প্রকল্পের কথা জানেনই না। আশার কথা, এগিয়ে এসেছেন বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন ও পত্র পত্রিকা। রামপালের খবর পৌঁছে যাচ্ছে দুই বাংলার ঘরে ঘরে। মানুষ এগিয়ে আসছেন এর বিরুদ্ধে মুখ খুলছেন। এই রিপোর্ট লেখার সময় পর্যন্ত আনুমানিক ৫০০০ মানুষের সই করা প্রতিবাদপত্র পৌঁছে যাবে পশ্চিমবঙ্গে NTPC র দপ্তরে আর একই সময় ঢাকা থেকে সুন্দরবণে গিয়ে পৌছাবে লং মার্চ। একটাই কথা দুই দেশের সরকারকে সবাই বলতে চাইছেন বিদ্যুৎ উৎপাদনের বহু বিকল্প আছে, সুন্দরবণের কোনো বিকল্প নাই

Tuesday, September 2, 2014

Is Shahbag Championing Secularism in Reality

Foreword
Shahbag is exciting. A unique movement, a ray of hope forSouth East Asia. It is the one which brings
forward the question of religion and state, atheism and democratic rights. It challenges the economic
base of terror in the name Islam, the religion. It challenges the cultural base of terror deeply rooted into
the education system in the name of Madrasa. In fact, it tells us the story of failed state which is running
from pillar to post; from British regime to current E-age. The impact of Shahbag will be far reaching and
inspiring for future, irrespective of the outcome and achievement. This article focuses on the question
“Is Shahbag Championing Secularism in Reality?" in brief.
Bangladesh adopted its constitution in 1972. It declared Bangladesh as a secular state. It also identifies
secularism as one of the main pillar of the constitution. There were major amendments to the
constitution thereafter.
Eighth amendment – 1988, HM Ershad
The Eighth Amendment Act was passed on 7 June 1988. Through this, Bangladesh adopted Islam as state
religion.
Why Shahbag charter of demand does not include abandonment of Eighth amendment?
As I have understood based on limited personal interaction with the leadership, Shahbag charter was
made with common minimum understanding and demand. Secularism is not a demand by Shahbag
supporters. In fact, to a lot of them, a state without an official religion is unacceptable.
Stand of Gonojagoron Moncho(GM) about Atheism, Secularism
GM, is de facto representing the movement in absence of professional political leadership. It was
incepted in a hurry at midst of the movement on 19th February. The exact articulated stand of GM in
many key sensitive issue is still not clear. However, they oppose the idea of adopting Median Charter as
constitution proposed by AL. At the same time, the leadership is keen to prove their commitment to
Islam. In fact, they claim that they represent Islam in true spirit without a shade of terror. They also
seem to eager to get rid of the “atheist” tag quickly. One of the turning point of the movement was
assassination of Rajib Haider on 15th February. He was accused of posting provocative blogs defaming
Islam. Though there are many grey areas about what actually happened, whether Rajib really did it, GM
projected him as a victim of conspiracy. On many occasions, GM has been critical about atheists as they
are not sensitive about the situation.
Bottom line: Though GM does not have a hard line stand about atheism, its stand in favor of atheist
rights and secular constitution is still not clear.
Stand of Awami League about Atheism, Secularism
Sheikh Hasina did not reject the 13-point agenda by Hefazat. Instead in a spirit of true Islamist, she has
asserted that the country will be governed according to the Charter of Medina. Needless to explain
further that this stand does not encourage secularism or atheism in principle. In fact, many fears that
the subjective judgment of many clauses may actually give state afresh weapon to counter any
movement or declared followers of communism in particular.

ওপারের শাহবাগে এপারের সংহতি

ভূমিকা
পশ্চিমবঙ্গের মানুষদের কাছে শাহবাগ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে আমাদের মনে হয়েছে অনেকের কাছেই শাহবাগ কি ও কেন সে সম্পর্কে ধারণার তথ্যের অভাব রয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের মানুষদের কাছে ‘মুক্তিযুদ্ধ’ এবং ‘শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের জমায়েত  যেভাবে ইতিহাসের ধারাবাহিকতায় এসেছে, পশ্চিমবঙ্গের বাঙালীদের কাছে তা আসেনিবিশেষত নতুন প্রজন্মের কাছে শাহবাগকে বিচ্ছিন্নভাবে বোঝা নিতান্তই অসম্ভব। এই লেখা তাই এপার বাঙলার বাঙালীর কাছে শাহবাগের গল্প আর তার জন্য নিতান্তই প্রাসঙ্গিক ইতিহাসকে অতি সংক্ষিপ্তভাবে জানানোর একটি প্রয়াস মাত্র।
--------- . ---------
কলেজ স্ট্রীটে শাহবাগ সংহতি অবস্থান করছে। চলছে সস্তার হ্যান্ড মাইক নিয়ে অল্পস্বল্প প্রচার। একজন এসে দাঁড়ালেন। আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন – “শাহবাগ বস্তুটা কি বলেন তো? এটা কি নতুন কোন পার্টি নাকি?” হাতে ধরিয়ে দিলাম শাহবাগ সংহতির লিফলেট। “অঃ বুঝেছি, বাংলাদেশের হিন্দু আর নাস্তিকরা মিলে যেটা শুরু করছে ঐটা-তো” – ঘাড় নেড়ে চলে গেলেন ভদ্রলোক।
মফস্বল আর গ্রামের বেশীর ভাগ মানুষের কাছেই শাহবাগী মানেই হল নাস্তিক বা খুব জোর হিন্দুদের কিছু একটা। কিন্তু শাহবাগ চত্বরে জমায়েত যে হাজার হাজার নারী পুরুষ তারা কি তাই? একথা বলা যায় যে বাংলাদেশের সমস্ত নাস্তিক আর হিন্দুরাই শাহবাগ আন্দোলনের সমর্থক কারণ শাহবাগ সফল না হলে তারা বেঁচেই থাকতে পারবেন না অন্তত নিজের বিশ্বাস নিয়ে। এদের সাথে বহু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজী মুসলমান শাহবাগ চত্বরে জমা হয়েছিলেন।
২৪শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সমকাল পত্রিকায় প্রকাশিত একটি খবর -
“সখিনা বেগম। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় স্বামী আব্দুর রহমানের সঙ্গে মিরপুরের আলোকদী গ্রামে থাকতেন। ওই সময় কাদের মোল্লার নেতৃত্বে রাজাকাররা তার স্বামীকে হত্যা করেছিল। তারা পরিবারের আরও কয়েক সদস্যকে ধরে নিয়ে যায়। সখিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও রাজাকারদের অনেক নির্যাতন সইতে হয়েছে তাকে। তার শরীরে এখনও ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে সমাবেশের খবর পেয়ে গতকাল শনিবার মিরপুর থেকে বধ্যভূমিতে ছুটে আসেন এ বৃদ্ধা। সমাবেশের মূল মঞ্চের মাইকে
'৭১ সালে মিরপুরে কসাই কাদের মোল্লার নৃশংসতার বিবরণ দেন তিনি। মঞ্চ থেকে জানানো হয়, কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে করা মামলার একজন সাক্ষী সখিনা বেগম। তিনি কাদের মোল্লার নৃশংসতার বিবরণ দেবেন। সখিনা বেগমের হাতে মাইক্রোফোন তুলে দেওয়া হয়। পিনপতন নীরবতা নেমে আসে বধ্যভূমি এলাকায়। হায়েনাদের হাত থেকে প্রাণে বেঁচে যাওয়ার গল্প বলতে থাকেন তিনি। নির্মম নির্যাতনের বিবরণ দিতে গিয়ে এক পর্যায়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন সখিনা। তার কান্নায় বধ্যভূমিতে উপস্থিত হাজারো মানুষের চোখ ভিজে যায়। স্বামী হারা এ নারী হয়ে উঠেন ৩০ লাখ শহীদের মা আর দুই লাখ ইজ্জত-হারা মা-বোনের প্রতিনিধি।
সখিনা বেগম নিজের হাত-পায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখিয়ে বলেন, স্বামীকে তুলে নেওয়ার সময় তিনি অনেক মিনতি করেছিলেন। ওরা কথা শুনেনি। বাধা দিলে তাকেও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রাজাকাররা। তার চোখের সামনেই কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয় প্রিয়তম স্বামীকে। সেই থেকে নানা জায়গায় আশ্রয় নিয়ে এখনও তিনি ভবঘুরে অবস্থায় রয়েছেন।
রায়েরবাজার বধ্যভূমির পাদদেশে দাঁড়িয়ে নির্যাতিত এই নারী বলতে থাকেন, 'কাদের মোল্লা ও তার দলের লোকেরা আমার স্বামীকে চোখের সামনে হত্যা করেছে। আমি তাকে নিজ হাতে কুপিয়ে মারতে চাই। দেশের জন্য আমি স্বামী হারিয়েছি। এতে আমার দুঃখ নাই। আমি নিজের হাতে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দিতে চাই।'
স্বামী হারা এ নারী আরও বলেন, খাই বা না খাই/শুধু স্বামী হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।”
তাহলে হিন্দু বা নাস্তিক কথাটা উঠল কেন?  এর কারণ শুরু হয়েছিল সেই ১৯৪৭এ।
১৯৪৭: দেশ ভাগ মুসলমানদের জন্য দু-প্রান্তে দু-টুকরো জায়গা আর মাঝে ১৫০০ কি:মি: জুড়ে হিন্দু থুড়ি ধর্মনিরপেক্ষ ভারতস্বাধীনতার আগে, শিক্ষিত চাকরি করা বাঙালিরা বেশীর ভাগই ছিল হিন্দু। হিন্দু ধর্মের বামুন কায়েতদের প্রায় কেউই মুসলমান হয়নি। ফলে একটা সহজ হিসাব গ্রাম বাঙলার সরল মানুষের মধ্যে ঢুকে গিয়েছিল – শিক্ষিত, পয়সাওয়ালা মানেই হিন্দু আর অশিক্ষিত দিন আনি দিন খাই মানেই মুসলমান। দেশ ভাগের পর যখন বাংলাদেশ থেকে কাতারে কাতারে মানুষ চলে আসতে শুরু করল এপারে, তারা বাঙালী নয় পরিচিত হল রিফিউজি হিসাবে। এপারের বাঙালীরা তখন নিজেদের মনে করত আগে ইন্ডিয়ান পরে বাঙালী। দেশতো ভাগ হলই, বাঙালী জাতি হিসাবেও দুই ভাগে ভেঙ্গে গেল। এই কারণেই শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যে সকলেই হিন্দু বা নাস্তিক এবং ভারতের চর ও ইসলামের দুশমন একথা যখন এপারের জামাত-পন্থিরা প্রচার করল তা খুব সহজেই পশ্চিমবাংলার সাধারণ মুসলমান সমাজের কাছে সহজবোধ্য লাগল।
শাহবাগ বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা শহরের একটি কেন্দ্রবর্তী এলাকা।"শাহবাগ মোড়" বলতে পূর্ব-পশ্চিমে এলিফ্যান্ট রোড ও মাওলানা ভাসানী এভিন্যূ, এবং উত্তর-দক্ষিণে ময়মনসিংহ রোড এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সড়কের চৌরাস্তা বোঝায়।শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশের বেশ কিছু বড় বড় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান  আছে যাদের মধ্যে রয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। শাহবাগে রয়েছে বেশ কিছু বাজার ও মার্কেট এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে শাহবাগ এলাকা বিভিন্ন উৎসবের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখানে প্রতিবছর ধুম ধামের সাথে বাংলা নববর্ষ ও বসন্ত উৎসব পালিত হয়ে থাকে। ইতিহাস সাক্ষী, শাহবাগ চত্বর সেই ইংরেজ শাসনের সময় থেকেই জন্ম দিয়েছে নতুন ভাবনা, নতুন ইতিহাসের। সেই শাহবাগ আজ উত্তাল বিচারের দাবিতে – ১৯৭১ সালের যুদ্ধের অপরাধীদের বিচার। কিন্তু শাহবাগের চেতনার জন্ম অনেক আগে ১৯৫২তে। কেন? আসুন ফিরে দেখি দৈনিক সংগ্রামে ৯ই আগস্ট, ১৯৭১এ প্রকাশিত একটি খবর।
পাকিস্তান অখন্ডতা ও সংহতি সংরক্ষণ এ্যাকশন কমিটি গঠন
তাদের এজেন্ডা:
·         উর্দু একমাত্র রাষ্ট্রভাষা, বাংলা সাইনবোর্ড ইত্যাদি অপসারণ, রোমান হরফে বাংলা লেখার আহ্বান।
·         কাফের কবি কাজী নজরুল ইসলামের রচনা বর্জন।
·         পূর্ব পাকিস্তানের রেডিও টিভিতে শতকরা ৫০% অনুষ্ঠান উর্দুতে হবে।
·         জাতীয় স্বার্থে উচ্চপদ থেকে বাঙালী অফিসারদের অপসারণ করতে হবে।
·         রাজাকার বাহিনীর বেতন এবং শান্তি কমিটির ব্যয় নির্বাহের জন্যে হিন্দু সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করতে হবে।
·         তিনমাসের জন্যে বিদেশী সাংবাদিকদের বহিষ্কার করতে হবে।
দৈনিক সংগ্রাম ১২ই আগস্ট, ১৯৭১
তথাকথিত বাংলাদেশ আন্দোলনের সমর্থকরা ইসলাম, পাকিস্তান ও মুসলমানদের দুশমন গোলাম আজম
দৈনিক পাকিস্তান ২৬শে সেপ্টেম্বর, ১৯৭১
জামাত বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ মেনে নিতে রাজী নয় : গোলাম আজম
১৯৫২:  ভাষা আন্দোলন মুসলিম পাকিস্তানের একমাত্র ভাষা উর্দু সরকারি কাজ নথিপত্র সবই উর্দুতে? –ার মানে দাঁড়াল উর্দু না জানলে বড় সরকারি কর্মচারীও হওয়া যাবে না? না এতো মানব না আর অসুবিধাটা-তো সবার হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে যাই হোক বাঙালির -  এলো ভাষা আন্দোলন বাংলা ভাষার স্বীকৃতির জন্য আন্দোলন  ২১ শে ফেব্রুয়ারি ঝরে গেল কতগুলি তাজা প্রাণ পৃথিবীর সবাই চিনল বাঙলাকে - ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন পালিত হয় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে অবশেষে ১৯৫৬তে পাকিস্তান সরকার মেনে নিতে বাধ্য হল বাঙলাকে সরকারি ভাষা হিসাবে মেনে নিতে এ জয় বাঙালির জয় হিন্দু মুসলিম সবার কিন্তু এজয়েও আটকানো গেলো না ১৯৭১ কে আবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হল যুদ্ধে এলো মুক্তিযুদ্ধ, কিন্তু কেন?
মুক্তিযুদ্ধ, ১৯৭১: এ কিরকম হিসাব? পূর্ব পাকিস্তানের ৬৪% মানুষের জন্য বরাদ্দ ৫২৪ কোটি টাকা মানে ৩১% আর পশ্চিম পাকিস্তানের ৩৬% মানুষের জন্য ১১২৯ কোটি টাকা মানে ৬৯%! এতদিন ইংরেজ শাসকরা লুট করেছে গ্রাম বাঙলার চাষিদের এবার কি তাহলে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকদের শাসন? সাদা চামড়ার শাসকদের জায়গা নিলো কি পার্সি আফগানি মালিক?
ধর্মভাইকে মালিক স্বীকার না করলে গরিব চাষার আর কোনও উপায় থাকে না বিদ্রোহ ছাড়া মানুষ খেপে গেল। আমাদের আলাদা দেশ চাই কারণ আমাদের ধর্ম ছাড়া আর কিছুই মেলে না ভাষা, খাবার, নদী কিছুই না। মুজিবর রহমান তখন চেষ্টা করছিলেন পাকিস্তানি শাসকদের সাথে একটা রফা করতে কিন্তু উল্টো বুঝলি রাম সরকার তাকেই জেলে পুরে দিল। মুজিবর রহমানের আওয়ামী লিগ তখন ভোটে জিতেছে। পার্লামেন্টের হিসেব অনুযায়ী তার হওয়ার কথা পূর্ব পশ্চিম মিলিয়ে পুরো পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। ফল যা হবার তাই হল মানুষ মেনে নিলো না প্রতিবাদ বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠল বাঙলা।
মানুষকে পোষ মানাতে সরকার তাদের ওপর লেলিয়ে দিল  পাকিস্তান আর্মি আর রাজাকার বাহিনীকে
রাজাকারের ইতিহাস: জার্মানিতে কেউ সন্তানের নাম হিটলার রাখে না। সে ইতিহাস এতটাই ভয়ের যে জার্মানরা সেদিকে ফিরেও তাকাতে চায় না। বাঙলায় রাজাকার তেমনই এক ইতিহাস। ৩ থেকে ৩০ লক্ষ মানুষের খুনের আর অসংখ্য নারীর নির্যাতনের কাহিনী আছে রাজাকার নামের মধ্যে। গোলাম আজম ছিলেন এই রাজাকার বাহিনীর সর্দার বা নেতা সে সময় গোলাম আজম ছিলেন জামায়েতে ইসলামের আমীর। উনি বলেন রাজাকারদের অত্যাচারের সাথে ওনার কোনও যোগ ছিলনা। কিন্তু একথা সবাই জানে উনি ছিলেন রাজাকারদের সর্দার বা নেতা আর পাকিস্তানের পক্ষে। মৃত মানুষগুলোর পক্ষে না। মেয়েদের স্তন ছিঁড়ে নেওয়া হত, যোনি আর গুহ্যদ্বারে ছোরা আর বেয়নেট রড ঢুকিয়ে খুন করা হয়েছিল। লাশগুলোকে টুকরো টুকরো করে বস্তায় ভরে চালান করা হয়েছিল। হিসাবের বাইরে কত বেহিসাবি লাশ আর মেয়েদের ওপর অত্যাচারের কথা চাপা পড়ে গেছে তা বোধহয় কোনোদিনও জানা যাবে না তবু একটা ধারনা দেয়ার জন্য কিছু তথ্য –
ধর্ম ও সম্প্রদয় ভিত্তিক ১৯৭১ এর নারী নির্যাতনের চিত্র।
মুসলমান নারী – ৫৬.৫০%
হিন্দু নারী – ৪১.৪৪%
খ্রিস্টান সহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের নারী – ২.০৬%
মাসওয়ারী ধর্ষন সহ নারী নির্যাতনের হার
মার্চ – ১৮৫২৭ (একদিনে সর্বোচ্চ ৫৯৭ জন)
এপ্রিল – ৩৫০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ১১৬৬ জন)
মে – ৩২০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ১০৩২ জন)
জুন – ২৫০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৮৩৩ জন)
জুলাই – ২১০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৬৭৭ জন)
আগস্ট – ১২০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৩৪৭ জন)
সেপ্টেম্বর – ১৫০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৫০০ জন)
অক্টোবর – ১৯০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৬১২ জন)
নভেম্বর – ১৪০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৪৬৬ জন)
ডিসেম্বর – ১১০০০ (একদিনে সর্বোচ্চ ৩৫৪ জন)
সূত্র –
War Crimes Fact Finding Committee (WCFC)
ধর্ষন হয়ে ছিল ৪ ধরনের
১. স্পট রেপ
২. মাস রেপ
৩. রেপ ইন কাস্টডি
৪. সেক্স স্লেভ

দেশের সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত ৪২টি জেলার ৮৫টি থানায় প্রাপ্ত তথ্য এবং উপাথ্যের ভিত্তিতে উপরোক্ত পরিসংখ্যান এবং এই নয় মাসে উক্ত ৪২ জেলাতেই ধর্ষিতা নারীর সংখ্যা পাওয়া গিয়েছিল ২ লাখ ২ হাজার ৫২৭ জন। সম্পূর্ণ দেশ এই পরিসংখ্যানের বাইরে এবং নিহত নারীদের ধর্ষন ও নির্যাতনের তথ্য এই গবেষনার অর্ন্তভুক্ত নয়। সূত্র: যুদ্ধ ও নারী – ডাঃ এম এ হাসান পৃষ্ঠা ৫২-৫৩
গোলাম আযম এবং তাঁর দল জামায়াতে ইসলামী পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সাহায্য করতে রাজাকার, আলবদর, আলশামস্ প্রভৃতি বাহিনী গড়ে তোলেন। এরা পুরো মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানী বাহিনীর পক্ষে কাজ করে। ১৯৭৩ সালের ১৮ই এপ্রিল সরকারী এক আদেশে আরো ৩৮ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাথে গোলাম আযমকেও বাংলাদেশের নাগরিক হবার অনুপযোগী ঘোষণা করা হয়।

যুদ্ধের নামে নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের উপর এই অত্যাচার পৃথিবীতে বিরল তো নয়ই বরং এক স্বাভাবিক নিয়মেই প্রায় পরিণত হয়েছে। ইরাক, আফগানিস্তানের উদাহরণ তো হাতের কাছেই আছে। আন্তর্জাতিকভাবে এ হল যুদ্ধাপরাধ – যুদ্ধের নামে অপরাধবাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধের যুদ্ধাপরাধ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর অন্যতম ভয়াবহ এবং ব্যাপক যুদ্ধাপরাধের উদাহরণ হিসাবে। হিন্দু, মুসলিম, নাস্তিক নির্বিশেষে সকলেই একমত – এই ইতিহাস জাতির কলঙ্কের ইতিহাস। এই অপরাধের বিচারের দাবীতেই উত্তাল শাহবাগ
ভারতের অবদান: একদিকে পাকিস্তানি সেনা আর রাজাকার বাহিনী আর অন্যদিকে সাধারণ মানুষ আর মুক্তিযোদ্ধা। তবুও ওরা পেরে উঠছিল না কেননা ওদের অস্ত্র আছে, সরকার আছে সব আছে কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার ছিল আদর্শ, স্বপ্ন – স্বাধীন বাংলাদেশেরশেষে ওপর থেকে প্লেন দিয়ে বোমা মেরে শেষ করে দিতে চাইল ওরা – পাকিস্তান আর্মি। এবার কে বাঁচাবে?
এগিয়ে এলো ভারত। ভারতীয় সেনা যোগ দিল মুক্তিবাহিনীর সাথে। পাকিস্তান আর্মি পিছু হঠতে বাধ্য হল১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১, তৈরি হল স্বাধীন বাংলাদেশমুজিবর রহমান হলেন স্বাধীন বাঙলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, বঙ্গবন্ধু।
স্বাধীনতার পর, বঙ্গবন্ধুর বাংলা: ইংরেজ শাসনের পর ২৪ বছর আবার শোষণ, দারিদ্র, আর বঞ্চনা। বাঙলা তখন ক্লান্ত। দেশ চাইল ঘুরে দাড়াতে। আর তাই সে চাইল বিচার – মুক্তিযুদ্ধের যুদ্ধাপরাধের। ধরা হল তাদের যাদের নামে অভিযোগ পৃথিবীর ইতিহাসের এক ভয়ঙ্করতম গণহত্যা আর গণধর্ষন এবং নারী নির্যাতনের। জেলে পোরা হল ১৯৫জন যুদ্ধাপরাধীদেরপাকিস্তানে পালিয়ে গেলেন বেশ কিছু যুদ্ধাপরাধী১৯৭৩ সালে মুজিব পাকিস্তান সফরে গিয়ে ভুট্টোকে আলিঙ্গন করলেন সম্বোধন করলেন তার ভাই বলে ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। যুদ্ধ শেষে যুদ্ধাপরাধীদের যে তালিকা তৈরি হয় তাতে ভুট্টোর নাম ছিল ২ নম্বরে। আর তার পরই সরকার ছেড়ে দিলো সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদেরমুজিব তাদের আহ্বান জানালেন দেশ গড়ার কাজে।
এরই মধ্যে নেমে এসেছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়- ভয়াবহ বন্যা। মুজিবের সরকারকে একরকম ব্যর্থই বলা চলে মানুষের প্রত্যাশা পূরণে১৫ই আগস্ট ১৯৭৫ – সপরিবারে মুজিব নিহত হলেন সেনা অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা, আজকের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী, মুজিবের কন্যা, বেঁচে গেলেন সেসময় দেশে না থাকায়।
জিয়াউর রহমান: এরপর মিলিটারি শাসন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এলেন জেনারেল জিয়াউর রহমান। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮১ পর্যন্ত। ১৯৭৯ সালে জিয়াউর রহমান বিএনপির প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং ভোটে জিতে এসেছেন।
জিয়াউর রহমানের আনুকূল্যে গোলাম আযম পাকিস্তানি পাসপোর্ট নিয়ে সাময়িক ভাবে বাংলাদেশে আসেন এবং কোন ভিসা ছাড়াই ১৯৭৮-১৯৯৪ পর্যন্ত বাস করেন। তিনি অলিখিত ভাবে বাংলাদেশের ধর্মীয় রাজনৈতিক দল যাদের অধিকাংশই ১৯৭১ সালে দেশ বিরোধী কাজে লিপ্ত ছিল তাদের আমীর হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন।
সংবিধানের অষ্টম সংশোধন, ইসলামি রাষ্ট্রের ঘোষণা:
১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান গৃহীত হয় তাতে বাংলাদেশকে ঘোষণা করা হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে। ১৯৭৯ সালে জেনারেল জিয়া সংবিধান সংশোধন করে বাংলাদেশকে ইসলামি রাষ্ট্র ঘোষণা করেন।
১৯৮১ সালে সেনাবাহিনীর এক অংশের হাতে নিহত হন জিয়াউর রহমান। সেই সেনা অভ্যুত্থান অবশ্য সফল হয়নি।
এরশাদের রাজত্ব: ১৯৮২ সালে মিলিটারি আবার শাসনভার গ্রহণ করে। এবারের সেনা অভ্যুত্থান ছিল রক্তপাতহীন যেন কতকটা অনিবার্য বা স্বাভাবিক। অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়ে শাসনভার গ্রহণ করেন এরশাদ। ১৯৮৩ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত চলে এরশাদের রাজত্ব। এই সময় সংবিধান স্থগিত থাকে। এরশাদ নিজে একজন যুদ্ধাপরাধী ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় উনি পাকিস্তান আর্মির পক্ষে ছিলেন। কিন্তু পরবর্তীকালে উনি সে অপরাধের জন্য প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছিলেন। দেশে ও বিদেশে এরশাদ যথেষ্ট জনপ্রিয়ও ছিলেন। আজও এরশাদের পার্টি জাতীয় পার্টি জোট সরকারের দ্বিতীয় বৃহত্তম শরিক। এতসব সত্বেও, ইতিহাস এরশাদকে মনে রেখেছে এক স্বৈরাচারী শাসক হিসাবেই। আওয়ামী লিগের এবং বিএনপির আমলের বিভিন্ন দুর্নীতির মামলায় এরশাদ একের পর এক বড় বড় নেতাকে জেলে পুরতে শুরু করেনকিন্তু একই সাথে নিজে জড়িয়ে পড়তে থাকেন একের পর এক দুর্নীতির মামলায়। আওয়ামী লিগ, বিএনপি এবং জামাতে ইসলামি তখন একযোগে এগিয়ে এলেন এরশাদকে উৎখাত করার লক্ষ্যে। শেষ পর্যন্ত এরশাদকে প্রবল আন্দোলনের সামনে ঝুঁকতে হয়েছিল ১৯৯০ সালের ডিসেম্বর মাসেএরশাদ পুরো বাংলা সনের দিন পন্জ্ঞিকাকে একদিন এগিয়ে দেনতার আগে এপার-ওপার বাংলার বাংলা সনের হিসাবটা একই ছিল শুধুমাত্র ভারত মানে হিন্দুয়ানির বিরোধিতার জন্যবাংলা পন্জ্ঞিকা অনুযায়ী হিন্দুদের পুজা পার্বন সহ সমস্ত সংস্কৃতি জড়িতসেখানে ইসলামি সংস্কৃতির ছোঁয়াই নেইকোলকাতার সাথে দিনপন্জ্ঞিতে তফাৎ না আনলে এই কাফির সংস্কৃতিকে দূর করা অসম্ভবআবার বাংলা সন বাদ দিয়ে সম্পূর্ণ হিজরী চালু করাও অসম্ভব ছিলঅতঃপর, বাংলা সনকেও দু'ভাগ করা হল ।
খালেদা জিয়া: ১৯৯১ সালে খালেদা জিয়া মানে জিয়াউর রহমানের বিধবা প্রধানমন্ত্রী হন। বাংলাদেশের রাজনিতীতে ততদিনে প্রধানত দুটি পার্টির প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত – শেখ হাসিনার আওয়ামী লিগ  আর খালেদা জিয়ার বি.এন.পি। জামায়াতে ইসলামী সাথে এই দুই পার্টিরই ভালো ভাব ভালবাসা ছিল কিন্তু তবুও খালেদা জিয়ার বি.এন.পির সাথে জামাতের জোটটা একটু বেশি ভালোই হত।
শেখ হাসিনা, পরিবর্তন: ১৯৯৬ তে পরিবর্তন – এল হাসিনার আওয়ামি লিগ। এবার পরিবর্তনও এক নিয়মে দাড়িয়ে গেল। সরকার আসে – পাহাড় প্রমান দুর্নিতির বোঝা নিয়ে পরিবর্তিত হয়ে যায়।
পর পর পরিবর্তন: ২০০১ – আবার খালেদা জিয়ার বি.এন.পি। বাঙলাদেশের রাজনিতীতে দুটি ইস্যু প্রধান হিসাবে সামনে এসেছে ঘুরে ফিরে – মুক্তিযুদ্ধ যার কৃতিত্বের দাবীদার আওয়ামী লিগ আর ইসলাম যার রক্ষাকর্তা হিসাবে সামনে আসে বিএনপি।
২০০৬ – খালেদা জিয়ার শাসনকালের মেয়াদ শেষ। কিন্তু কেয়ারটেকার সরকারের ইস্যুতে ফয়সলা না হওয়ায় গোটা দেশে নেমে আসে এক অচলাবস্থা। শুরু হয় এক গৃহযুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। প্রান যায় আনেক মানুষের, ঘরছাড়া আরো বহু মানুষ। সেনাবাহিনী সামরিক শাসন জারি করে। আবার মিলিটারি শাসন। মিলিটারি শাসন যেন দুঃস্বপ্নের মত তাড়া করে বেড়ায় বাংলাদেশের মানুষকে। প্রতিবাদ আন্দোলনে  গণতন্ত্র ছিনিয়ে নেওয়া যেন তার নিত্য সাথীহয়তো এই প্রতিবাদের চেতনাই তাকে ভুলতে দেয়নি মুক্তিযুদ্ধকে আজ ৪২ বছর পরেও।
শেষে ২০০৮ সালের শেষে নির্বাচন হয় ক্ষমতায় আসে হাসিনার নেতৃত্বে চার দলের মহাজোট। সেই সরকারের মেয়াদ এখন শেষের মুখে আর আশ্চর্যজনকভাবে ইতিহাসও যেন অনেকটাই চলে গেছে সেই ২০০৬ সালের অবস্হায়। সেদিনের হাসিনার কেয়ারটেকার সরকারের দাবি আজ বি.এন.পি-র খালেদা জিয়ার দাবি এই যা পার্থক্য
বানর সেনার প্রতাপ: এরই মাঝে ভারতে হয়ে গেছে হিন্দুত্ববাদীদের বানর সেনা বজরং দল এবং বিজেপির লঙ্কা থুরি অযোধ্যা বিজয়। ১৯৯১ সালের ৬ই ডিসেম্বর ভারতের ইতিহাসের একটি কালো দিন – বানর সেনার দাপটে মাটিতে মিশে গেল বাবরি মসজিদ। আর তার সাথে শুরু হল এক অভূতপূর্ব দাঙ্গা – ভারতে সংখ্যালঘু মুসলমানদের উপর আক্রমনকিন্তু একই সাথে এই ঘটনা শক্তি যুগিয়েছিল বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামীকে। নতুনভাবে শক্তি সঞ্চয় করে ফিরে এসেছিল সে বাংলাদেশের হিন্দুদের লাশের কাঁধে ভর দিয়ে।
আপাতদৃষ্টিতে দেখলে বানর সেনা আর জামায়াতে ইসলামী পরপস্পরের চরমতম শত্রু। কিন্তু কি আশ্চর্যভাবেই একপক্ষ শক্তি যুগিয়ে গেছে অপর পক্ষকে। মনে পড়ে গেল শাহবাগের প্রতিক্রিয়ায় কলকাতা ঢেকে গিয়েছিল হিন্দু জাগরন মঞ্চের পোস্টারে – আমিকি খেলব হোলি? পোস্টারে যদি ঘৃণা আর রক্ত লেগে থাকতে পারে তবে তা ছিল ঐ পোস্টারগুলিতে।

বানর সেনার কেরামতি শুধু ঐ সময়ই নয় তার পরও বহুবার ঘটেছে। ৯৩এ মুম্বাই এবং তারপর ২০০২ - ভয়ানক গুজরাট। গুজরাট দাঙ্গার নায়ক শ্রীনরেন্দ্র মোদী মহাশয় যখন আজ ভারতে প্রধানমন্ত্রিত্বের দাবিদার হয়ে উঠতে পারেন তখন বাংলাদেশের জামায়াতে ইসলামী যে হিন্দু ভারত এবং শাহবাগীর হাতে ইসলাম বিপন্ন বলে ঝাপিয়ে পড়বে তাতে খুব আশ্চর্য হবার থাকে কি?
নতুন প্রজন্ম: এসবের মধ্যেই বাংলাদেশে জন্ম নিয়েছে নতুন প্রজন্ম। এরা যেন কি রকম। কাউকে মানতে চায়না – মোল্লা, পাদ্রী, রাজনৈতিক নেতা কাউকে না। কিন্তু কে শুনছে এদের কথা! ওরকম কিছু লোকতো সব সময়ই থাকে তাদের কথা লোকে জানতেও পারেনা। কেননা, কাগজে এদের কথা কেউ ছাপবে না, টিভিতে টক শোতে মকশো করতে এদের কেউ ডাকবে না। বলুক না যা খুশি কে শুনছে, শোনার সূযোগ পেলে তবে না। কিন্তু ওদের অন্য মতলব ছিল। কম্পিউটার বিশ্বকে একেবারে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। কিন্তু সেতো ইংরাজিতে – সবার জন্য না – গুটিকয় ভালো আর ওপরতলার কিছু ছেলেমেয়েদের জন্য। ওরা কম্পিউটারকে বাংলা শিখাল। এযেন আবার এক ভাষা আন্দোলন। এবার ধীরে নিঃশব্দে কিন্তু অনেক গভীরে। ধীরে ধীরে আড়াই লাখ ছেলে মেয়ে কথা বলতে শুরু করল – লিখতে শুরু করল ব্লগশুরু করল প্রশ্ন করতে। ওরা অনেক প্রশ্ন তুলল যা কেউ কখনো ভাবেনি বা বলার সাহস দেখাতে পারেনি। ওরা প্রশ্ন করল – ভারতের আর কত ঋণ বাকি আছে আজও, ৪২ বছর পরও। কেন আজও আমেরিকা আর ভারতের দাদাগিরি মেনে চলতে হবে আমাদের? আর ইতিহাস – সেটা ঠিকঠাক লেখা হয়েছে তো? বাংলার ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস আর সবশেষে বাংলাদেশের ইতিহাস। তাই ওরা আবার কবর খুঁড়ে বার করল সেই সব ইতিহাস। ওরা শুনতে পেল কবরে চাপা পড়া আর্তনাদ আর না পাওয়া বিচারের দাবী। ওদেরই চাপে হাসিনা কথা দিয়েছিলেন নির্বাচন জিতে তিনি নিশ্চিত করবেন বিচার। বিচার শুরুও হয়েছিল। কিন্তু সব যেন কেমন তালগোল পেকে গেছে। এতদিন পর প্রমান বলতে কিছুই প্রায় অবশিষ্ট নেই। সেই তখনি যুদ্ধের পর পরই, মুজিবই পারেননি প্রমান যোগাড় করতে আর এতদিন বাদে সেতো প্রায় অসম্ভব। যদি আইনই শেষ কথা বলে, তাহলে হয়তো সত্যিই বিচারে আইনি প্রমানের অভাব আছে। কিন্তু জণগণ জানে সত্যিটা কি আর তাই এসবের পরও বিচারের দাবীতে বাংলাদেশ আজও উত্তাল। তারপর কেটে গেছে প্রায় পাঁচ বছর। বিচার এগিয়েছে শম্বুক গতিতে। এবারে ভোটে হাসিনা যদি না জেতেন? তার সম্ভাবনা যথেষ্ট কেননা পাহাড় প্রমান দুর্নিতির বোঝা সামলে এসরকারের ফিরে আসার সম্ভাবনা যে উজ্বল সে কথা বোধ করি হাসিনা নিজেও মনে করেন না! ওদিকে অভিযুক্তরা আবার বিরোধী শিবিরের উজ্বল নক্ষত্র অতএব ....
নাস্তিক ব্লগার: ওরা যেসব প্রশ্ন তুলেছিল তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আর গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হয়ে দাঁড়াল ধর্ম। মোল্লার শেখান ধর্মকে মেনে নিতে ওদের প্রতিবাদ। ওদের মধ্যে অনেকেই আছে ধার্মিক কিন্তু সে ধর্ম নামাজ পড়া ইসলাম না। ওরা ভালবাসে গান, কবিতা আর তারই মধ্যে খুঁজে পেতে চায় তাঁকে। আবার ওদের মধ্যে সোচ্চার নাস্তিকও আছে। তারা মুসলিমও না, হিন্দুও না শুধুই নাস্তিক। ওরা দাবী করল – যদি আস্তিকতা সে ইসলাম বা হিন্দু যাই হোক না কেন, সোচ্চার হতে পারে তবে নাস্তিকতা কেন নয়? ইসলাম সম্পর্কে আমাদের ধারনা মূলত শরিয়তি ইসলামি ধারনা। বাংলার বুকে শরিয়তি ইসলামের সাথেই সমান্তরালভাবে চলেছে মারফতি সুফি ঘরানা। কিন্তু মারফতি ইসলাম কখনোই শরিয়তি ইসলামের মত গুরুত্ব পায়নি, তা থেকে গেছে গ্রাম বাংলায় চাষা, ভূষা আর ফকির, আউল এই সমস্ত আনেকাংশেই মূল স্রোত থেকে বিচ্ছিন্ন এক ব্রাত্য ধারনা হিসাবে। ইসলামকে প্রতিনিধিত্ব করেছে শরিয়তি কোরান হাদিস নির্ভর ইসলাম। এই ইসলামের বিরুদ্ধে ওদের জেহাদ প্রকাশ পেল সাংস্কৃতিক আক্রমনের মধ্য দিয়ে। ধর্মকারী ব্লগে বলা হলো – “ধর্মকারী ব্লগের কোনো কিছু যদি আপনার অনু্ভূতিকে আহত করলে তা আমাদের নজরে আনুন, যাতে আমরা সবাই আপনাকে নিয়ে হাসাহাসি করতে পারি”। ব্লগে আলোচনা হল “যৌনকেশ, অবাধ রমণীসঙ্গম ও নাস্তিককুলঅথবা আরো আক্রমাত্মক সরাসরি নবী এবং ইসলামকে চ্যালেজ্ঞ করে লেখা ওরা আওয়াজ তুলল – ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার।
আহমেদ রাজীব হায়দার ছিল এই ধর্মকারী ব্লগেরই একজন দুঃসাহসী সদস্য।
কাদের মোল্লার বিচারের রায়: এসবের মধ্যেই এল ফেব্রুয়ারী ৫, ২০১৩ – কাদের মোল্লার বিচার শেষ। সে সময় বাংলাদেশ উত্তাল পদ্মা চুক্তি নিয়ে দুর্নিতির ইস্যুতে। আর জামাত শিবির ডেকে চলেছে একের পর এক উত্তেজনায় টান টান হরতাল - রায়কে প্রভাবিত করার উদ্দেশ্যআগেই জামাত অভিযোগ করেছিল বিচারের নিরপেক্ষতা নিয়ে। সরকার তার পছন্দসই বিচারক নিয়োগ করে বিচারকে প্রভাবিত করছে। বিএনপি ও এবিষয়ে সরকারের সমালোচনায় মুখর ছিল। বিচারে তার কারাদন্ড হলো ফাঁসি না। কাদের মোল্লা V মানে ভিক্ট্রি দেখালেন।
জ্বলে উঠল আগুন। প্রথমে বেশী লোক ছিল না। আন্দাজ দুশ থেকে আড়াইশ মত নব প্রজন্মের ছেলেমেয়ে জড় হয়। ওরা সন্দেহ করে সরকার জামায়েতে ইসলামীর সাথে গোপন বোঝাপড়া করে নিয়ে ইচ্ছে করে কেস দুর্বল করে সাজিয়েছে যাতে চরম শাস্তি কোনোভাবেই না হয়। অতীত অভিজ্ঞতা ওদের সন্দিহান করে তুলেছিল। এর মানে হতে পারে কোনো শাস্তিই হল না। বি.এন.পি ক্ষমতায় এসে সবাইকে রাষ্ট্রপতির মাধ্যমে ক্ষমা করে বিলকুল খালাস করে দিল অথবা যেহেতু বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেছে, পুর্ণবিচারের নামে পুরো বিচার প্রক্রিয়াকেই বিলম্বিত করে ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হল।তা যদি হয় তাহলে বিচারের প্রহসন যা এতদিন ধরে চলছিল তাই ইতিহাসে চিরস্থায়ী জায়গা করে নেবে। মেনে নিতে পারলনা এতদিন ধরে বিচারের দাবীতে লড়ে যাওয়া ব্লগাররা।
ওরা শপথ নিল -
১. আমরা সমস্ত যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড চাই
২. আমরা আমার দেশ, সোনার বাংলা সহ সমস্ত সাংস্কৃতিক উগ্রপন্থার বিনাশ চাই
৩. আমরা ইসলামি ব্যাঙ্ক, মাদ্রাসাগুলিকে সামাজিক বয়কট করছি – বাংলাদেশের পরবর্তি প্রজন্মকে তালিবানি উগ্রপন্থার খোরাক বানাবার চক্রান্তের বিরুদ্ধে।
৪. জামায়াতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করার দাবী জানাচ্ছি।
আন্দোলন ক্রমশ আক্রমনাত্মক হয়ে উঠল আর সম্ভবত তা হয়েছিল জামাতের আক্রমনের আর হুমকির প্রতিক্রিয়া হিসাবেই তবে শাহবাগের আক্রমনের ধারা জামাতের থেকে একেবারেই আলাদা শাহবাগ জণগণের সামাজিক শক্তিকে ভরসা করে জামাতকে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন করতে চেয়েছিল ওরা বয়কটের আহ্বান জানাল জামাত পরিচালিত সমস্ত পত্র পত্রিকা, মিডিয়া থেকে শুরু করে, কোচিং সেন্টার, ব্যাংক, চিকিৎসাকেন্দ্র এমনকি বাড়ি ভাড়া পর্যন্ত না দেওয়ার। ইতিমধ্যে শাহবাগ পরিনত হয়েছে মিডিয়ার কাছে বাংলাদেশের তাহরির স্কোয়ারে। ১৯ টি টিভি চ্যানেল সরাসরি সম্প্রচার করছে শাহবাগ। ১৪ দলের জোট এবং বিএনপি সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলই আন্দোলনের প্রতি সহানুভুতিশীল। কাগজে হেডলাইন হচ্ছে “তারুন্যের জোয়ারে উত্তাল শাহবাগ” – যুগান্তর ৮ই ফেব্রুয়ারী। শুধু শাহবাগেই নয়। গোটা দেশ উত্তল হয়ে উঠছিল। সে সময় চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল এবং বগুড়াতে জন সমাবেশ চলছিল যার পুরোভাগে ছিল ছাত্ররা। এক একটি শহরের, মেডিক্যাল কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হয়ে উঠছিল ভরকেন্দ্র। আন্দোলনের ধারা ছিল প্রথাগত গতানুগতিক মিটিং, নেতাদের ভাষন এসবের থেকে একেবারে আলাদা। কুশপুত্তলিকা পোড়ানো, কার্টুন আঁকা, মোমবাতি জ্বালানো আর ছোট ছোট গ্রুপ এ ভাগ করে নিজেদের মত গান, কবিতা, নাচ, নাটক অভিনয় এইরকম। শাহবাগের মঞ্চে আসেন বিভিন্ন পেশা ও সংগঠনের মানুষরা। এই সমস্ত মানুষদের মধ্যে কাকতালীয়ভাবে হলেও বামপন্থী চিন্তাভাবনার মানুষদের একটু আধিক্য দেখা যায় প্রথম থেকেই। জামাতের সশস্ত্র, সহিংস প্রতিরোধ আর হরতাল, বোমা বিস্ফোরন এসবের মধ্য দিয়েই শাহবাগের জনসমর্থন আর জমায়েত বেড়ে চলছিল অভুতপূর্বভাবে। শাহবাগের যে কথাটা সারা বিশ্বের কাছে পৌছে গেল তা হল – “ফাঁসী চাই, ফাঁসী চাই”।
পশ্চিমবঙ্গের অনেক মানবাধিকার কর্মিই কথাটা ভালভাবে নিলেন না। যখন ধীরে ধীরে হলেও আফজল গুরুর ফাঁসি এবং সেই সুত্রে মৃত্যুদন্ডের বিরোধীতা একটু হলেও দানা বাঁধছে তখন ফাঁসীর দাবী সমর্থন করে শাহবাগের পাশে দাঁড়ানো বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ালো। শাহবাগের সমর্থনে আন্দোলন বা আলোচনা তেমন দানা বাঁধছিল না।
১৫ই ফেব্রুয়ারী রাজীব হায়দারের হত্যা: শুক্রবার, ১৫ই ফেব্রুয়ারী শাহবাগ থেকে ফেরার পথে নির্মমভাবে হত্যা করা হয় রাজীব হায়দারকে। রাজীবকে হত্যার দায়িত্ব স্বীকার না করলেও, তার হত্যার স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে ছাত্রশিবির – অর্থাৎ জামাতে ইসমামীর ছাত্র সংগঠন নিজেদের উদ্দেশ্যপ্রনোদিত ভাবেই চিনিয়ে দিয়েছিল।
জীবিত রাজীবের থেকে অনেক বড় শক্তি হয়ে দেখা দিলো তার কফিন। শাহবাগে তরুন প্রজন্ম রাজীবের কফিন ছুঁয়ে শপথ নিল আমরা কফিন ছুঁয়ে প্রতিজ্ঞা করছি, রাজাকারের ফাঁসি না হওয়া পর্যন্ত সংগ্রাম চালিয়ে যাবো মৃত্যুর আগ পযর্ন্ত আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে যতোদিন পর্যন্ত সব রাজাকারের ফাঁসি ও জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা না হবে ততোদিন আমাদের আন্দোলন চলবেআর এদিকে এপার বাংলায় দেখা গেল কলেজ স্ট্রীটে বিদ্যাসাগরের মূর্তির কাছে ছোট প্রিন্ট আউট করা পোস্টার “বুকে রাজীবের অভিমান লক্ষ রাজীব আগুয়ান”।
বাঁধ ভেঙে গেল সব দ্বিধা আর দ্বন্দের কেননা এবারে শুধুই যুদ্ধ। বাংলাদেশের স্কুলে গাওয়া হল জাতীয় সঙ্গীত শাহবাগের সমর্থনে ভেঙে পড়ল জনতার মিছিল আর শাহবাগ স্কোয়ারের নামকরন হয়ে গেল প্রজন্ম চত্বর। প্রজন্ম চত্বর ঘোষনা করল ২১শে ফেব্রুয়ারীর কর্মসূচী মহামিছিল আর শোনা গেল গর্জন – ফাঁসী চাই। ১৮ই ফেব্রুয়ারী জামাত শিবির পাল্টা দাবী করল ইসলাম বিরোধী নবীর অবমাননাকারি ব্লগার ওমি রহমান পিয়াল, ইব্রাহিম খালিল, আরিফ জেবতিক আর আসিম মহিউদ্দিনের ফাঁসী চাই।
গণজাগরন মঞ্চের জন্ম:
১৯শে ফেব্রুয়ারী ব্রিটিশ বিদেশমন্ত্রী শ্রীমতি হুসেন ওয়ারসি শাহবাগ আন্দোলনকে সমর্থন করে বিবৃতি দিলেন। ওই দিনই তৈরী হয় গনজাগরণ মঞ্চ যার নেতৃত্বে ইমরান এইচ সরকার। আজ শাহবাগ আন্দোলনের নীতি এবং ভবিষ্যত নির্ধারনে গনজাগরণ মঞ্চ এক অবিসংবাদিত প্রতিনিধি হিসাবে স্বীকৃত। যদিও একথা ঠিক বাংলাদেশের ভেতরে এবং বাইরে সকলে গনজাগরণ মঞ্চকে শাহবাগের প্রকৃত নেতৃত্ব বলে পুরোপুরি মেনে নেন না। শাহবাগের মঞ্চ শুরু থেকেই স্বতস্ফুর্ততা এবং রাজনীতি বিমুখতার কারনে পেশাদারী রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং সংগঠনের অভাবে অনেকেই হয়তো গনজাগরণ মঞ্চকে মেনে নিয়েছেন কিন্তু গনজাগরণ মঞ্চর অছিলায় শাহবাগ আন্দোলনের ফল আগামী ভোটের বাক্সে আওয়ামী লিগের পক্ষে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে কিনা তা দেখতে অনেকেই অপেক্ষা করছেন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে একদল লোক ছোট ছোট গ্রুপে শাহবাগকে নিয়ে আলোচনা করতে শুরু করল। তাদের আলোচ্য বিষয় যতনা শাহবাগ বা সাম্প্রদায়িকতার বিপদ ও বাংলাদেশের লড়াই, তার চেয়ে অনেক বেশী মুসলমানদের বাঙালিদের (মানে হিন্দু) উপর অত্যাচার। আসলে এরা ছিল হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার সাথে জাতীয়তাবাদের খিচুড়ি পরিবেশন করে নরেন্দ্র মোদিকে প্রধানমন্ত্রীত্বের দাবীদার হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার ব্রতে নিবেদিতপ্রান। এদের আরো সুবিধা করে দিয়েছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সাম্প্রতিক কিছু ঘোষনা যেমন ইমাম ভাতা প্রবর্তন। ছোট ছোট ভিড় জমতে শুরু করেছিল পশ্চিমবঙ্গের প্রান্তে এবং অবশ্যই কলকাতায়। বেশ কিছু রং বেরঙের দল জুটে গেল বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। এসবের মধ্য দিয়েই গড়ে উঠল “শাহবাগ সংহতি পশ্চিমবঙ্গ” বিভিন্ন লিটল ম্যাগাজিন সংস্থা, সমাজ কর্মী, বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মিত একটি মঞ্চশুধু নামে নয়, দর্শনেও নিজের অজান্তেই শাহবাগের অনুসারী। এখানেও আছেন নাস্তিক, বামপন্থী, ধর্মপ্রাণ বিভিন্ন ধারনার মানুষ এদের মিল শুধু একটাই – চেতনায় শাহবাগ।
জামাত শিবির ঝাপিয়ে পড়ল শাহবাগের উপর। শুরু হল নাস্তিকদের উপর আক্রমন। সুরকার ও গীতিকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের ছোট ভাই মিরাজ আহমেদকে হত্যা করা হলগন জাগরণমঞ্চের পুরোধাদের, রাজাকারদের গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের আত্মীয়স্বজনদের উপর আক্রমণ শুরু হল গোটা বাঙলাদেশ রক্তাক্ত হয়ে গেল জামাতে ইসলামীর হামলায় আর পাল্টা সরকারি প্রতিক্রিয়ায়। ফেব্রুয়ারী মাসে, বাংলাদেশে নিহত হন শতাধিক মানুষ আর ঘড়ছাড়া সর্বস্বান্ত হন আরো কত তার কোনো সঠিক হিসাব কারো কাছেই নেই।
২১শে ফেব্রুয়ারী, শাহবাগ চত্বরের বিশাল সমাবেশ থেকে গনজাগরণ মঞ্চ ঘোষনা করল ৬দফা দাবী।

১. ঘাতক জামাত শিবিরের সন্ত্রাসী হামলায় শহীদ রাজীব হায়দার
, জাফর মুন্সী, বাহাদুর মিয়া, কিশোর রাসেল মাহমুদ হত্যাকাণ্ডে  জড়িতদের আগামী সাতদিনের মধ্যে গ্রেফতার করতে হবে।
২. ছাব্বিশে মার্চের পূর্বে পূর্বে স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতক সন্ত্রাসী জামাত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার লক্ষ্যে যুদ্ধাপরাধ ও গণহত্যায় নেতৃত্বদানকারী জামায়াতে ইসলামের বিরুদ্ধে সংশোধিত  আইনের অধীনে অভিযোগ গঠন এবং নিষিদ্ধের আইনি প্রক্রিয়া  শুরু করতে হবে।
৩. অবিলম্বে সংগঠনগুলোর আর্থিক উৎস, যেসব উৎস থেকে  সকল প্রকার জঙ্গিবাদী এবং দেশবিরোধী তৎপরতার আর্থিক যোগান দেয়া হয়, সেগুলো চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার জন্য একটি স্বাধীন তদন্ত কমিশন  গঠন করতে হবে।
৪. যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া গতিশীল ও অব্যাহত রাখতে  অবিলম্বে আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যনালকে স্থায়ীরূপ দিতে   হবে।
৫. গণমানুষের নিরাপত্তার স্বার্থে জামায়াত-শিবিরের সন্ত্রাস ও তাণ্ডবে বন্ধে অবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে সকল সন্ত্রাসী গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারসহ   গোপন আস্তানাসমূহ উ-খাত করতে হবে। জাতীয় ও  আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে এদের ভয়ঙ্কর রূপ প্রকাশ করে দিতে হবে।
৬.  যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষক এবং হত্যা ও সাম্প্রদায়িক উস্কানিদাতা গণমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।
গর্জে উঠল শাহবাগ আর তারপরই এল ২৮শে ফেব্রুয়ারী - দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারের রায়। গণহত্যা, আগুন লাগানো, জোর করে হিন্দুদের ধর্মান্তিকরন করা এবং ধর্ষনের ৭টি প্রমানিত অভিযোগের ভিত্তিতে ফাঁসির রায় শোনাল আদালত। বাংলাদেশ উত্তাল হয়ে উঠল হিংসায়। খুন, হিন্দুদের ঘড়, বাড়ি লুঠ যেন একরকম জায়েদ হয়ে উঠল। আগুনে ঘি ঢালল গুজব। সাঈদীকে চাঁদে দেখা গেছে। মত্ত হয়ে উঠল মাদ্রাসাতে পড়া ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদী ছাত্রশিবিরআসলে এরা সাঈদীকে চেনে ইসলামের প্রচারক হিসাবে। এরা সাঈদীর বক্তৃতা শুনেছে। সাঈদীর অতীত এদের কাছে অজানা। গণজাঘরণ মঞ্চও তেমনভাবে উদ্যোগী হয়নি এদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের কাহিনী ও সাঈদীর অতীতকে চিনিয়ে দিতে। সেটা অনেকটা বাস্তব অসুবিধার জন্যও হতে পারে কেননা গণজাগরণ মঞ্চ ছিল একটা অরাজনৈতিক খানিকটা তড়িঘড়ি তৈরী হওয়া একটা মঞ্চ যা ছিল মোটামুটি শহর এবং ইন্টারনেট ভিত্তিক। ইদানিং কালেও, যখন গণজাগরণ মঞ্চ জন সংযোগ কর্মসুচী নিয়েছে, তখন তা হয়েছে মূলত শহর ভিত্তিক এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডাঃ ইমরান কথা বলেছেন অনাবাসী বাংলাদেশীদের সাথেও। সেতুলনায় গ্রাম বাংলায় সেভাবে প্রচার সামনে আসেনি। দীর্ঘকাল ধরে গ্রামের মানুষরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল ধর্মকে আর জামাতে ইসলামীকে একাকার করে দেখতে। শাহবাগের চেতনা, তাকে হয়তো তেমন ভাবে স্পর্শ করতে পারছিল না। শাহবাগের পক্ষে ছিল ৪২ বছর আগের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি। ঘরে ঘরে চাপা কান্না রাজাকারের হাতে নিহত বাবা, মা, ভাই, বোনের জ্বলন্ত মুখ।
এরই মধ্যে বিএনপির ভোল বদল। প্রকাশ্যে বিএনপি সমর্থন করেছে জামাতে ইসলামীকে। তার আগে অনেকেরই আশা ছিল বিএনপি হয়তো প্রকাশ্যে এত বড় অন্যায়ের সমর্থন করবে না অন্তত সে নিরপেক্ষ থাকবে। বিএনপির হিসাবে অবশ্য আশ্চর্য হওয়ার বিশেষ কিছু নেই। আওয়ামী লিগ একসময় ২৮% সংখ্যালঘু ভোটের উপর ভর করে ক্ষমতায় গেছে। তাই সেই কবেই আওয়ামী মুসলীম লিগ তার নাম বদল করে হয়ে গেছে আওয়ামী লিগ। কিন্তু আজ বাঙলাদেশে সংখ্যালঘু মাত্র ৮%। দীর্ঘকাল ধরে দফায় দফায় সংখ্যালঘুদের ওপর (তাদের মধ্যে হিন্দু ছাড়াও অনেকে আছে, কম হলেও) খুন, জোর করে ধর্মান্তকরন এসবের মধ্য দিয়ে তাদের একদম কোনঠাসা করে ফেলা হয়েছে। ভোটের বাজারে বরং জামাতে ইসলামী আর তার ইসলামীকরনের বিক্রী অনেক ভালো। বিএনপির জামাতের সাথে একাত্মতা গণজাগরণ মঞ্চকে স্বাভাবিকভাবেই আরো সরকার অর্থাৎ আওয়ামি লীগের কাছাকাছি এনে দিল।
এভাবেই নানা ওঠাপড়ার মধ্য দিয়ে এগোতে থাকল আন্দোলন। ইচ্ছে থাকলেও আগে থেকে কোনো বড় প্রস্তুতি না থাকায় রোজকারের কাজ, অফিস আদালত, স্কুল, কলেজ কামাই করা মুশকিল হয়ে উঠতে লাগল। একটু হলেও শাহবাগের জনসমুদ্রে ভাঁটা লাগল। ওদিকে দিন ঘনিয়ে আসতে লাগল ২৬শে মার্চেরআন্দোলোনের প্রতি সরকারের সমর্থন অটুট থাকলেও, জামাত শিবির নিষিদ্ধ করার বিষয়ে সরকারের বিরাট কোনো তৎপরতা চোখে পড়ল না।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে, ২১শে মার্চ বাংলা একাডেমী চত্বর থেকে বাংলাদেশ হাই কমিশন পর্যন্ত পদযাত্রা করে শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলনের পক্ষে সংহতি জানাতে বাংলাদেশ হাই কমিশনে স্মারক লিপি প্রদান করার এক উদ্যোগ নেওয়া হল৷ আর তারপরের ঘটনা একেবারে চেনা সাদামাটা। পুলিশ প্রশাসন মিছিলের পথরোধ করল। জামাতিদের কলকাতার বুকে ২১ ফেব্রুয়ারি মিছিল করতে দেওয়া হয়েছে, শাহবাগের সহমর্মীদের পুলিশ ধ্বস্তাধ্বস্তি করে গায়ের জোরে রাস্তা থেকে সরিয়ে দিল। এমনকী ভ্যানেও তোলা হল মিছিলের অংশগ্রহণকারীদের। গণতন্ত্রের কী অপূর্ব মহিমা!
এল ২৬শে মার্চ – সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলনা জামাতে ইসলামীকে নিষিদ্ধ ঘোষনা করার। ইমরান বললেন – “দুঃখজনক হলেও সত্য, আল্টিমেটামের সময় পেরিয়ে গেলেও সরকারের টনক নড়েনি”টনক তো নড়েই নি বরং শেখ হাসিনা কথা দিয়েছেন নবীর আর ইসলামের অবমাননা কোনোভাবেই বরদাস্ত করা হবে না। এক্ষেত্রে কিন্তু সরকার কোনো টালবাহানা করেনি। তিনজন ব্লগারকে সরকার গ্রেপ্তার করেছে। জামাতে ইসলামী সরকারকে ৮৪জন নাস্তিক ব্লগারের তালিকা দিয়েছিল। এই তিনজন ব্লগারের নাম ছিল সেই লিস্টের মধ্যে। বন্ধ হয়ে গেছে আমার ব্লগ। ইমরান বললেন “রাতের অন্ধকারে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে ব্লগারদের গ্রেপ্তার করেছে, তা জাতি দেখেছে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে এ ঘটনা নজিরবিহীন ... এভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্ত করা কতটা সংবিধান স্বীকৃত, সরকারের কাছে সে প্রশ্ন থাকল।”ইতিমধ্যে সরকার গঠন করেছে ব্লগ পর্যবেক্ষণ কমিটি সরকারের গঠিত কমিটিতে দুজন আলেমকে অন্তর্ভুক্ত করেছে সরকার। তবে কোনো ব্লগারকে এতে রাখা হয়নি।
রুমী স্কোয়াড - গণজাগরণ মঞ্চের সতর্ক এবং সরকার ঘেষা মনোভাব মেনে নিতে পারলনা শুধুই স্বপ্ন নিয়ে বেঁচে থাকা কিছু তরুন। রাজনিতীর ঘোরপ্যাঁচ ওরা বোঝে না। ওরা এসেছিল জয় করতে নয়তো মরতে। মুক্তিযুদ্ধের শহীদ রুমীর আদর্শ সামনে রেখে ওরা গড়ে তুলেছিল “শহীদ রুমী স্কোয়াড”। ২৪শে মার্চ ওরা বলল “খালি মহাজোট সরকার না, গণজাগরন মঞ্চেরও এই 'ধরি মাছ, না ছুঁই পানি' ঘরানার রাজনীতি বন্ধ করতে হবে”২৬শে মার্চের পর তাই ওরা বলল – “বাংলা কথা, টালবাহানা অনেক দেখলাম। জামাত-শিবির নিষিদ্ধ করার নামে সরকারের টালবাহানা দেখা হয়েছে। চিৎকার করে বলতে চাই, আমরা তোদের ভোটের গুটি না। আরেক সরকারের(ইমরান সরকার – শাহবাগ সংহতি) আরো এক স্মারকলিপি প্রদাণের ঘোষণা শুনলাম। আলটিমেটাম শেষ হল আজকে আর প্রধাণমন্ত্রীর কাছে পত্র নিয়ে-নিবেদন নিয়ে-কাকুতি মিনতি নিয়ে যাবেন ৪এপ্রিল, এইটা যদি হয় সর্বোচ্চ কঠোর কর্মসূচী, আমরা মনে করি সেটা এই তরুণ প্রজন্মের স্পিরিটের প্রতি অপমান” ওরা ছিল ৭জন ওরা ঘোষনা করল “শহীদ রুমী স্কোয়াড আজকের এই ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে কর্মসূচী শোনার পরে সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাত ১০টা থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচী শুরু করবে। আমরা ৭জন সিদ্ধান্ত নিয়েছি এই অনশনে যোগ দেয়ার” শুরু হল আর এক অসম, অপরিকল্পিত তারুন্যের লড়াই। আসলে ওদের বিশ্বাস ছিল  হাজারে হাজারে তরুণ-তরুণী সর্বস্ব নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়বে কারন আবেগ রাজনীতির থেকে অনেক বেশী শক্তিশালী। ২৪ তারপর ৪৮ ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেল – ইতিমধ্যে অনেকেই ইন্টারনেটে এবং অনশন মঞ্চে গিয়ে সংহতি জানিয়ে এসেছেন – প্রতিকী অনশন হয়েছে – কিন্তু হাজারে হাজারে তরুন তরুনীরা ঝাপিয়ে পড়েননি বা যে কোনো কারনেই হোক পারেননি। অবশেষে ২৯শে মার্চ অনশন মঞ্চে উপস্থিত হলেন ইমরান এইচ সরকার। কেটে গেল আরো অনেক ঘন্টা। ১০০ ঘন্টা পার করল অনশন – প্রায় সকলেই ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়েছে। খালি পেটে চিকিৎসাও করা যাচ্ছে না। কোনো এক আশ্চর্য কারনে সরকার নিরুত্তাপ। রুমী স্কোয়াড থেকে প্রধানমন্ত্রীকে দেয়া হল খোলা চিঠি – “আশা করি আপনি সুস্থ আছেন। দেশ ও জাতির স্বার্থে একজন নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে আপনার সুস্থতা আমাদের সবার কাম্য।...  আন্দোলনের এ পর্যায়ে এসে আমরা জানি, বিজয়- না হলে মৃত্যু- এ পথেই এগিয়ে যেতে হবে আমাদের
১লা এপ্রিল - ভোর ৪টার দিকে ঝড় বিধ্বস্ত অনশনস্থল। ঝড়ে লণ্ডভণ্ড গোটা জায়গা। ভিজে গেছে চাদর-তোষক-বালিশ, ওষুধসহ সব। পানি জমে গিয়েছিল মাথার উপর ছাদ হয়ে থাকা ত্রিপলের উপর। প্রায় পুরো অনশনস্থল ইলেকট্রিক ফিল্ড এ পরিনত হয়বেলা ১১টার সময় রুমী স্কোয়াড ঘোষনা করে – “গণজাগরণ মঞ্চের অনুরোধে অনশন থেকে আপাতত সরে আসছে”শেষ হল শাহবাগের এক অধ্যায়ের কিন্তু যুদ্ধ থামল না বরং তা শুরু হল এক নতুন উদ্যমে।
শাহবাগের জমায়েত চলছিলই সাথে চলছিল আরো বিভিন্ন কর্মসূচী ওদিকে জেলে বন্দী ব্লগাররা।
আবার পশ্চিমবঙ্গ – ৯ই এপ্রিল – গুজরাট দাঙ্গার রূপকার শ্রীমান নরেন্দ্র মোদী আসলেন কলকাতায়। শাহবাগের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শাহবাগ সংহতি পশ্চিমবঙ্গ বলল – “গণহত্যাকারি মোদি তুমি বাঙলায় স্বাগত নও”। কলেজ স্ট্রীটে হল মিছিল পোড়ানো হলো মোদির কুশপুত্তলিকা।
১২ই এপ্রিল শাহবাগ সংহতি আয়োজন করে এক আলোচনা সভা শাহবাগ নিয়ে। যোগ দেন বিভিন্ন জেলা থেকে আসা রবিউল, তুহিন, শমীক, কামরুজ্জানরা, অনুপমরা। সেখানেই ঠিক হয় শাহবাগ কী ও কেন বিষয়ে একটি পুস্তিকা তৈরি করা দরকারতারই ফলশ্রুতি এই লেখা।
হেফাজতে ইসলাম - ব্লগার মাত্রই নাস্তিক নয়, টুপি মানেই জামাত নয় নাস্তিক দেখলে জবাই নয়, ধার্মিক দেখলে ঘৃণা নয়।" - সুব্রত শুভ – ফেসবুক ২৪শে ফেব্রুয়ারী। সুব্রত শুভ বন্দী ব্লগারদের মধ্যে একজন।
“যারা আল্লাহ্‌ বিশ্বাস করেনা তারা জারজ। কারন তারাও তাদের বাবাকে মায়ের সাথে সংগম করতে দেখে নাই” – একথা বললেন শাহ্‌ আহ্‌মদ শফীপীরে কামেল আল্লামা শাহ্‌ আহ্‌মদ শফী হেফাজতে ইসলামের আমীর, বাংলাদেশ ক্বওমী মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড (বেফাক) সভাপতি এবং উপমহাদেশের অন্যতম বিখ্যাত ইসলামী শিক্ষাকেন্দ্র দারচল উলূম হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালকঅর্থাৎ, সমস্ত বৌদ্ধ, হিন্দু এবং অন্য যে কোনো মত যা আল্লাকে তার বিশ্বাস অনুযায়ী স্বীকার করেনা জারজ সন্তান। হেফাজতে ইসলাম সামনে আসল ইসলাম বিপন্ন দাবী নিয়ে। ১৩ দফা দাবীর দাবীপত্র পেশ করল সরকেরের কাছে এবং ঘোষনা করল ৫ই মে লংমার্চ ঢাকায়। লংমার্চের আহ্বানের মধ্যে কোনো কোনো বামপন্থী+ইসলামী বুদ্ধিজীবি আপন বুদ্ধিবলে মাও সে তুঙের লংমার্চের ছায়া দেখতে পেয়েছিলেন! হেফাজতের ১৩টি দাবীগুলি হল –
১. সংবিধানে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাসপুনঃস্থাপন এবং কোরআন-সুন্নাহবিরোধী সব আইন বাতিল করা।
২. আল্লাহ্, রাসুল (সা.) ও ইসলাম ধর্মের অবমাননা এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কুত্সা রোধে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে জাতীয় সংসদে আইন পাস।
৩. কথিত শাহবাগি আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী স্বঘোষিত নাস্তিক-মুরতাদ এবং প্রিয় নবী (সা.)-এর শানে জঘন্য কুত্সা রটনাকারী ব্লগার ও ইসলামবিদ্বেষীদের সব অপপ্রচার বন্ধসহ কঠোর শাস্তিদানের ব্যবস্থা করা।
৪. ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতার নামে সব বেহায়াপনা, অনাচার, ব্যভিচার, প্রকাশ্যে নারী-পুরুষের অবাধ বিচরণ, মোমবাতি প্রজ্বালনসহ সব বিজাতীয় সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ বন্ধ করা।
৫. ইসলামবিরোধী নারীনীতি, ধর্মহীন শিক্ষানীতি বাতিল করে শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চমাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা।
৬. সরকারিভাবে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা এবং তাদের প্রচারণা ও ষড়যন্ত্রমূলক সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
৭. মসজিদের নগর ঢাকাকে মূর্তির নগরে রূপান্তর এবং দেশব্যাপী রাস্তার মোড়ে ও কলেজ-ভার্সিটিতে ভাস্কর্যের নামে মূর্তি স্থাপন বন্ধ করা।
৮. জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ দেশের সব মসজিদে মুসল্লিদের নির্বিঘ্নে নামাজ আদায়ে বাধাবিপত্তি ও প্রতিবন্ধকতা অপসারণ এবং ওয়াজ-নসিহত ও ধর্মীয় কার্যকলাপে বাধাদান বন্ধ করা।
৯. রেডিও-টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দাড়ি-টুপি ও ইসলামি কৃষ্টি-কালচার নিয়ে হাসিঠাট্টা এবং নাটক-সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্রে ধর্মীয় লেবাস-পোশাক পরিয়ে অভিনয়ের মাধ্যমে তরুণ প্রজন্মের মনে ইসলামের প্রতি বিদ্বেষমূলক মনোভাব সৃষ্টির অপপ্রয়াস বন্ধ করা।
১০. পার্বত্য চট্টগ্রামসহ দেশব্যাপী ইসলামবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত এনজিও এবং খ্রিষ্টান মিশনারিগুলোর ধর্মান্তকরণসহ সব অপতত্পরতা বন্ধ করা।
১১. রাসুলপ্রেমিক প্রতিবাদী আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার ছাত্র ও তৌহিদি জনতার ওপর হামলা, দমন-পীড়ন, নির্বিচার গুলিবর্ষণ এবং গণহত্যা বন্ধ করা।
১২. সারাদেশের কওমি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষক, ওলামা-মাশায়েখ ও মসজিদের ইমাম-খতিবকে হুমকি-ধমকি, ভয়ভীতি দানসহ তাদের বিরুদ্ধে সব ষড়যন্ত্র বন্ধ করা।
১৩. অবিলম্বে গ্রেপ্তারকৃত সব আলেম-ওলামা, মাদ্রাসাছাত্র ও তৌহিদি জনতাকে মুক্তিদান, দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার এবং আহত ও নিহত ব্যক্তিদের ক্ষতিপূরণসহ দুষ্কৃতকারীদের বিচারের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিতে হবে।
হেফা্জতে ইসলামের দাবী যে মোটেও ফাঁকা আওয়াজ না তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল তাদের কার্যকলাপেই। বিশেষ করে তাদের লক্ষ হয়েছিল বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের মেয়েরা যারা আর থাকতে রাজি ছিলনা পুরুষের বোরখা পড়া বেগম সম্পত্তি হিসাবে। জামাতে ইসলামীর মত একই কায়দায় শুরু হল সন্ত্রাসের রাজত্ব – সাংবাদিক বিশেষ করে মহিলা সাংবাদিকদের ওপর আক্রমন সারা বিশ্ব মোটামুটি একটা সরল করে বুঝে গেল জামাতে ইসলামীরই আরেক নাম হেফাজতে ইসলাম – শুধু এখানে সরাসরিভাবে জামাতে ইসলামীর সাথে যুক্ত রাজনীতির লোকরা নেই আছে কিছু অরাজনৈতিক লোক যারা কেউ বিরাট বড় এনজিও চালায় কেউবা বড় মাদ্রাসার বড় মুরুব্বি।
এরই মধ্যে হাসিনা প্রস্তাব করেছেন দেশ চলবে মদিনা সনদ অনুযায়ী। কেমন যেন একটা কম্পিটিশন লেগে গেছে সবার মধ্যে কে বেশী সাচ্চা মুসলমান তা প্রমান করার। শাহবাগে গণজাগরণ মঞ্চে শুরু হয়েছে নিয়মিত নামাজ পড়া। একটা বিষয়ে সকলেই মোটামুটি একমত – নাস্তিকদের ঠাঁই নাই এ বাঙলাদেশে।
অবশেষে এল ৫ই মে। দিনের বেলা গোটা ঢাকা শহর চলে গেল নৈরাজ্যের কবলে। সারাদিন চলল তান্ডব কিছু টুকরো হেডলাইন –
·         গোলাম শাহ মাজারে ভাংচুর করেছে হেফাজতের ক্যাডারেরা সেইখানে জনতার সাথে সংঘর্ষ চলছে
·         হেফাজতিরা পরিবহন শ্রমিক সিদ্দিক নামে একজনকে কুপিয়েছে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর ডাক্তারেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেছে
·         বায়তুল মোকারাম মসজিদের আশেপাশের ইসলামি বই বিক্রেতাদের স্টলে আগুন ধরিয়ে দেয় হেফাজতের ক্যাডারেরা ফলে পুড়ে যায় হাজারে হাজারে কোরান এবং হাদিসের বই
গণজাগরণ মঞ্চ আক্রান্ত হবার আশঙ্কায় পাহারাতে রইলেন কর্মীরা। শেষ অবধি অবশ্য বড় কোনো আক্রমন ঘটেনি।
রাত নেমে এল। হেফাজতে বাহিনিরা জড়ো হলো মতিঝিল চত্বরে। রাত ২টো মানে ইংরাজী হিসাবে ৬ইমে, ফেসবুকে দেখা গেল লেখা –
“ মতিঝিলে কিন্তু শফি নাই
, লালবাগে আরামে ঘুমাচ্ছে
  মতিঝিলে কিন্তু খালেদাও নাই
, গুলশানে আরামে ঘুমাচ্ছে
  মতিঝিলে কিন্তু গুলামের আযমের কোন পোলাও নাই
, লন্ডনে নাস্তিকের দেশে ঘুমাচ্ছে
তো কারা আছে? আছে কিন্তু ব্রেনওয়াশড ছাগু এবং কিছু নিরীহ মাদ্রাসা ছাত্র যাদের বেহেস্তের লোভ দেখিয়ে নিয়ে এসেছে বড় হুজুর রা, মারা গেলে তারাই মারা যাবে , আর উপরের হারামীরা আরামেই থাকবে, তারা মরবে না
হলোও তাই রাতের বেলা শুরু হল কমান্ডো অপারেশন – বন্ধ করে দেওয়া হল টিভি ক্যামেরা। গুলি চলল, মানুষ মরল – কত? জানিনা বোধ হয় কেউই ঠিকঠাক জানেন না। হেফাজতের গুজবের হিসাব ২০০০ থেকে ৩০০০। সরকারী হিসাব প্রথমে ১ জনও না পরে ২/৩ জন। বিদেশী নিউজ চ্যানেলয়ালারাও নিশ্চিতভাবে কিছু বলতে পারল না বা বলল না। কেউ জানেনা কত খোকন সোনা চাঁদের কনা মাদ্রাসায় গিয়ে লেখাপড়া শিখবে বলে গিয়ে আর ফিরবে না। ওদের দরকার সংখ্যা হিসাবে যত বেশী তত লাভ আবার যত কম তত লাভ।
এর মধ্যেই রাত্রে, সরকারী পুলিশ গিয়ে ভেঙে দিয়ে এসেছে গণজাগরণ মঞ্চ। নিরপেক্ষ ভাবমূর্তির ইমেজের স্বার্থে একই সাথে গুলি চলেছে মতিঝিলে আর ভাঙ্গা হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চ। তিন মাস একে অপরের সাথে মরনপন লড়াইয়ের পর কোথায় যেন এক হয়ে গেল গণজাগরণ মঞ্চ আর হেফাজতে ইসলাম – রাষ্ট্র তাদের বসিয়ে দিল একই আসনে। ইমরান এইচ সরকার বললেন “এই সংকটময় পরিস্থিতিকে ক্ষমতা ও বিচক্ষণতার সাথে নিয়ন্ত্রণ করেছে সরকার। সরকারের ক্ষমতা ও বিচক্ষণতাকে অভিনন্দন জানায় গণজাগরণ মঞ্চ। তারপরেও অভিমানের খানিকটা সুর থেকেই যায়। আমরা বিশ্বাস করি গণজাগরণ মঞ্চের দীর্ঘ তিন মাসের অহিংস আন্দোলনের ইতিহাস দেখে সরকার সিদ্ধান্ত নিবেন আমাদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা উচিৎ

কিন্তু একটা কাঠের মঞ্চ ভেঙ্গে দিয়ে শাহবাগের চেতনাকে ভাঙ্গা যায় না। আর তাই লড়াই চলছে – ইন্টারনেটে, গ্রামে, দেশে, বিদেশে। এই রিপোর্ট লেখার সময় জেলের পিছনে আটজন ব্লগার, আমার দেশের সম্পাদক। সরকার চাইছে শান্তি তা কবরখানার হলেও কিন্তু শাহবাগ চাইছে বিচার – শাহবাগ ঘুমায়নি আহত বাঘের মতই সে ঝাপিয়ে পড়বে যে কোনো মুহুর্তে হয়তোবা যখন এই রিপোর্ট আপনি পড়ছেন তখনই আপনার কানে আসছে শাহবাগের গান – মুক্তির গান।